ইসলাম

কিয়ামতের ছোট আলামত ৮.দ্বীনি ইলম উঠে যাবে এবং মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে

ইসলামে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে ইলমের চর্চাকে ইমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তবে কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—দ্বীনি ইলম ধীরে ধীরে উঠে যাবে এবং মূর্খতা সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। এটি এমন এক অবস্থা সৃষ্টি করবে, যেখানে মানুষ সঠিক পথনির্দেশনা থেকে বিচ্যুত হবে এবং অজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেবে।

দ্বীনি ইলমের গুরুত্ব ও নির্দেশনা

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন: “قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ” “বলুন, যারা জ্ঞানী আর যারা জ্ঞানহীন, তারা কি সমান হতে পারে?”— (সূরা আয-জুমার: ৯)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ”

“প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ইলম অর্জন করা ফরজ।”— (সুনান ইবনে মাজাহ: ২২৪)

ইলমের মাধ্যমে মানুষ সঠিক ও ভুলের পার্থক্য করতে শিখে এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রকৃত পদ্ধতি জানতে পারে।

কেয়ামতের আলামত হিসেবে ইলমের উঠে যাওয়া

কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে দ্বীনী ইলমের শিক্ষা ও চর্চা কমে যাবে এবং মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দ্বীনী বিষয়ে মূর্খতা বিরাজ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ

“কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে” । এখানে ইল্‌ম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য । বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্‌ম ।

রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে দ্বীনি ইলম উঠে যাওয়ার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا.” “আল্লাহ ইলমকে মানুষের অন্তর থেকে সরাসরি উঠিয়ে নেন না। বরং তিনি ইলমকে তুলে নেন আলেমদের মৃত্যু দ্বারা। যখন কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন মানুষ মূর্খদের নেতা বানাবে। তাদের কাছে ফতোয়া চাইলে তারা অজ্ঞতায় ফতোয়া দেবে, ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।” — (সহিহ বুখারি: ১০০, সহিহ মুসলিম: ২৬৭৩)

ইমাম যাহাবী বলেনঃ বর্তমানে দ্বীনী ইল্‌ম কমে গেছে। অল্প সংখ্যক মানুষের মাঝেই ইলম চর্চা সীমিত হয়ে গেছে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ইলমের আরো কমতি হবে এবং (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে।

ইমাম যাহাবীর যামানায় যদি এই অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে বর্তমানকালের অবস্থা কেমন হতে পারে তা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। বর্তমানে ইলমে দ্বীনের চর্চা কমে গেছে। কুরআন-সুন্নার আলেমের সংখ্যা খুবই নগণ্য। যার ফলে শির্ক-বিদআতে অধিকাংশ মুসলিম সমাজ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মোটকথা কিয়ামতের এই আলামতটি অনেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ইলমের উঠে যাওয়ার কারণ

১. আলেমদের মৃত্যু: ইলমের প্রকৃত ধারক আলেমগণ। যখন তারা মৃত্যুবরণ করবেন, তখন ইলমের প্রকৃত উৎসও হারিয়ে যাবে।

২. ইলম চর্চার অভাব: মানুষ যখন দ্বীনি জ্ঞান অর্জন ও চর্চা বন্ধ করবে, তখন ইলম ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।

৩. অজ্ঞ নেতাদের প্রভাব: যখন আলেমরা থাকবে না, তখন মানুষ মূর্খদের নেতারূপে গ্রহণ করবে, যারা দ্বীন সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা করবে।

মূর্খতার বিস্তৃতির ফলাফল

১. সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি: ইলমের অভাবে মানুষ সঠিক পথনির্দেশনা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে এবং কুসংস্কার ও বিদআতকে গ্রহণ করবে।

২. ফিতনা ও বিভ্রান্তি: মূর্খতার ফলে সমাজে ফিতনা ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে, যার ফলে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে।

৩. দ্বীনের অপব্যাখ্যা: মূর্খদের হাতে দ্বীনের ব্যাখ্যা দেওয়া হলে তারা ভুল ফতোয়া দেবে, যা মানুষের ঈমান ও আমলে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

মুমিনদের করণীয়

১. ইলম অর্জন করা: প্রত্যেক মুসলিমের উচিত দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা এবং তা সমাজে প্রচার করা।

২. আলেমদের থেকে শিখা: যতদিন আলেমগণ জীবিত আছেন, ততদিন তাদের থেকে ইলম গ্রহণ করা এবং তা সংরক্ষণ করা আবশ্যক।

৩. ইলম চর্চায় মনোযোগী হওয়া: মুসলমানদের ইলম চর্চা বাড়াতে হবে এবং নিজেদের সন্তানদের দ্বীনি ইলমে শিক্ষিত করতে হবে।

৪. আল্লাহর কাছে দোয়া করা: আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, যেন তিনি আমাদের মধ্যে ইলম ও আলেমদের উপস্থিতি বজায় রাখেন।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *