ইবাদত

কুরআন হাদীসের আলোকে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের হক

আমরা প্রত্যেকেই দুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছি পিতা-মাতার মাধ্যমে, অর্থাৎ পিতার ঔরসে ও মায়ের গর্ভে। অতএব জন্মদাতা পিতা ও জন্মদাত্রী মায়ের সাথে আমাদের সম্পর্ক যেমন ঘনিষ্টতম তাঁদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব- কর্তব্যও তেমনি অপরিসীম। আমাদের জীবনে তাঁদের ঋণ অপরিশোধ্য।

এ সম্পর্কে মহান স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষ থেকে এরশাদ হয়েছে : وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا –

“আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর ।”-সূরা আন নিসা : ৩৬

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে বলেন, ইবাদাত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর এবং তাঁর সাথে আর কাউকে শরীক করা যাবে না। যেহেতু স্রষ্টা তিনি, পালনকর্তাও তিনি, এ কাজে তিনি সম্পূর্ণ একক ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অতএব, তাঁর সাথে আর কাউকে শরীক করার কোনোই যুক্তি নেই । ইবাদাত ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। সংক্ষেপে, নিরঙ্কুশ আনুগত্য এবং সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম-বিধান মানার নামই ইবাদাত। কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত আল্লাহর বিধান। অতএব, তা আদায় করা ইবাদত। হালাল-হারামের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা মান্য করাও ইবাদাত । ব্যক্তিগত আচার-আচরণ, বাবা-মা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয় – – স্বজন, প্রতিবেশী বা সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে আচার-আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলার নাম ইবাদাত। ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কায়-কারবার, সামাজিক বিধান, বিচার ও আইনের ক্ষেত্রে তথা সামগ্রিক জীবনব্যবস্থায় আল্লাহর বিধান মেনে চলার নাম ইবাদাত। সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পের চর্চা, সুকুমার বৃত্তির বিকাশ, উৎসব-আনন্দের আয়োজন আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম-বিধান মুতাবিক করা ইবাদাত । অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে, সকল কাজ ও চিন্তায় আল্লাহর হুকুম মানাই ইবাদাত।

এসব ক্ষেত্রে অন্য কারো হুকুম মানা, অন্য কারো বিধান কার্যকর করা বা আল্লাহর বিধানের বিপরীত কোনো ব্যবস্থা চালু করা শিরক বা আল্লাহর সাথে শরীক করার নামান্তর । অতএব, তা সর্বতোভাবে ও সচেতনভাবে পরিত্যাজ্য।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহর ইবাদাত করার পরেই মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা এ বিষয়ের গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। মনে রাখতে হবে যে, এটা আল্লাহর হুকুম। অতএব তা নিঃসংকোচে মেনে নেয়া ও প্রতিপালন করাও ইবাদাত ।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন : وَقَضَى رَبُّكَ الأَتَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أَفٍ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمَانِ وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّينِي صَغِيران – بنی اسرائیل : ٢٣٢٤

“তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে উফ্ (বিরক্তি অবজ্ঞা বা উপেক্ষা না করা) বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। মমতাসহ তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করে বলো, “হে আমার প্রতিপালক ! তাদের প্রতি দয়া করো যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন । ” -সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩-২৪

উপরোক্ত আয়াতদ্বয় আল্লাহর ইবাদাত করার সাথে সাথে মা-বাবার সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হবে স্পষ্ট ভাষায় তা বলে দেয়া হয়েছে। বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর মা-বাবা শারীরিকভাবে অনেকে অক্ষম ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। এ সময় সস্তানদের উচিত তাঁদের ঠিকমত দেখাশোনা করা, তাদের সাথে এমন কোনো আচরণ না করা যাতে তাঁরা মানসিকভাবে কষ্ট পায়। তাঁদের সাথে নম্রভাবে সম্মানসূচক ব্যবহার করা কর্তব্য। মা-বাবার মৃত্যুর পরেও তাঁদের জন্য সর্বদা আল্লাহর নিকট দোয়া করা সন্তানের কর্তব্য। এ দোয়ার হৃদয়গ্রাহী সুন্দর ভাষাও আল্লাহ স্বয়ং উপরোক্ত আয়াতে তাঁর বান্দাকে শিখিয়ে দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরো কয়েকটি আয়াত নীচে উদ্ধৃত হলো لا تَعْبُدُونَ إِلا الله قفِ وَبِالْوَالِدَيْنَ إِحْسَانًا – البقر۳ ۸

“আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না—পিতা-মাতার সাথে অবশ্যই ভাল ব্যবহার করবে।”-সূরা আল বাকারা : ৮৩

অন্যত্র আল্লাহ বলেন : وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ط – العنكبوت : ۸ “আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে।”-সূরা আনকাবুত : ৮

আল্লাহ বলেন : وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ اِحْسَنًا ، حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْها ، وَحَمْلُهُ وَفَضْلُهُ ثَلْثُونَ شَهْرًا ، حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعَيْنَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي نُرِيَّتِي ، إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ المُسْلِمِينَ

“আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে, তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়াতে লাগে ত্ৰিশ মাস, ক্রমে সে পূর্ণ শক্তি লাভ করে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হবার পর বলে, হে আমার প্রতিপালক ! তুমি আমাকে সামর্থ্য দান কর যাতে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পসন্দ কর, আমার জন্য আমার সন্তান-সন্ততিদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমৰ্পণ · করলাম।”-সূরা আল আহকাফ : ১৫

উপরোক্ত আয়াতে সন্তানের জন্মদানে বাবা-মায়ের বিশেষ করে মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা এখানে পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে মা তাঁর সন্তানকে কত কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন, বুকের দুধ পান করিয়ে ধীরে ধীরে বড় করেন, এবং বড় হবার পর প্রকৃত মুমিন যারা তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজের জন্য, মাতা-পিতার জন্য, সন্তান-সন্ততির জন্য দোয়া করতে থাকে, এবং একান্ত অনুগতভাবে সকৃতজ্ঞ চিত্তে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে । এই হলো মু’মিনের কাজ । প্রকৃত মু’মিন শুধু নিজের জন্য নয়, মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি সকলের জন্যই আল্লাহর নিকট দোয়া করে, সৎকর্মশীল হওয়ার চেষ্টা করে ও একান্তভাবে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পিত হয়।

সূরা লুকমানেও আল্লাহ শিরক না করার নির্দেশ দিয়ে মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করার কথা বলেছেন। এরশাদ হয়েছে : وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ ، حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَلُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ ، إِلَى الْمَصِيرُ “আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা তার সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ান হয় দুই বছর বয়সে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।” -সূরা লুকমান : ১৪

উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পরই মাতা- পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন তো অবশ্যম্ভাবী। অর্থাৎ তখন বান্দার সকল কৃতকর্মের পুঙখানুপুঙখ হিসেব নেয়া হবে। এর দ্বারা আল্লাহর নির্দেশের গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ।

মাতা-পিতার হক সম্পর্কে কতিপয় হাদীস

মাতা-পিতার হক সম্পর্কে মহান আল্লাহ আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। উপরে সে সম্পর্কিত কতিপয় আয়াত পেশ করার পর এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল স.-এর কতিপয় হাদীস নীচে উদ্ধৃত হলো ঃ রাসূলুল্লাহ স. বলেন : الوَلِدُ أوْسَطُ ابْوَابِ الْجَنَّةِ فَحَافِظ إِنْ شِئْتَ أَوْ ضَيْعَ – مسند احمد، ترمذی، ابن ماجة حاكم “পিতা জান্নাতে দাখিল হওয়ার মাধ্যম। অতএব, তুমি চাইলে সে মাধ্যম অবলম্বন করতে পার, সে মাধ্যম রক্ষা করতে পার (পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করে), আর চাইলে তা নষ্টও করে দিতে পার।”

অন্য হাদীসে আছে : رَضَاءُ اللهِ فِي رِضَاءِ الْوَالِدِ وَسَخَطُ اللَّهِ فِي سَخَطَ الْوَالِد . ترمذی، حاکم

“আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ পিতার সন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে, আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি-আক্রোশ ও ক্রোধ পিতার অসন্তুষ্টির কারণে হয়ে থাকে । ”

অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ স.-কে জিজ্ঞেস করা হয় :يا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا . “হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের উপর তার পিতা-মাতার অধিকার কী ? ” জবাবে রাসূলুল্লাহ স. বলেন : هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ “তাঁরা দুজনই হচ্ছে তোমার জান্নাত ও তোমার জাহান্নাম (অর্থাৎ পিতা-মাতার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির উপর সন্তানের জান্নাত বা জাহান্নামে যাওয়া নির্ভর করে)।”

রাসূলুল্লাহ স. বলেন : مَنْ أَصْبَحَ لِلَّهِ مُطِيعًا فِي وَالِدَيْهِ أَصْبَحَ لَهُ بَابَانِ مَفْتُوحَانِ مِنَ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ وَاحِدًا فَوَاحِدًا وَمَنْ أَمْسَى عَاصِبًا لِلَّهِ فِي وَالِدَيْهِ أَصْبَحَ لَهُ بَابَانِ مَفْتُوحَانِ مِنَ النَّارِ وَإِنْ كَانَ وَاحِدًا فَوَاحِدًا –

“যে ব্যক্তি পিতা-মাতার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশের অনুবর্তী হয় (অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ মত পিতা-মাতার খেদমত করে) তার জন্য জান্নাতের দুটি দরজা খুলে যাবে। একজন হলে (অর্থাৎ পিতা অথবা মাতা এদের যে কোনো একজনের খেদমত করে থাকলে) একটি দরজা খুলে যাবে।

আর যদি কেউ পিতা-মাতার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ না মানে তবে তার জন্য জাহান্নামের দুটো দরজাই খুলে যাবে, আর একজন হলে একটি দরজা। একথা শুনে জনৈক সাহাবা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! পিতা-মাতা যদি সন্তানের ওপর যুলুম করে আর তার ফলে সন্তানরা যদি অবাধ্য হয় বা তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তবু কি সন্তানদের জাহান্নামে যেতে হবে ?”

এর জবাবে রাসূলূল্লাহ স. বলেন : وَإِنْ ظَلَمَاهُ وَإِنْ ظَلَمَاهُ – “হ্যাঁ, পিতা-মাতা যদি সন্তানের উপর যুলুম করে, তবু তাদের অবাধ্য হলে জাহান্নামে যেতে হবে।”

হযরত আবু বকর রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ স. বলেন : كُلُّ الذُّنُوبِ يَغْفِرُ اللهُ مِنْهَا مَا يَشَاءُ إِلا عُقُوقَ الْوَالِدَيْنِ فَإِنَّهُ يَجْعَلُ لِصاحِبِهِ فِي الْحَيَاةِ قَبْلَ الْمَمَاتِ –

“আল্লাহ তা’আলা চাইলে যত গুনাহ এবং যে কোনো গুনাহ মাফ করে দেবেন। তবে পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও তাদের অবাধ্য হলে তিনি তা মাফ করবেন না। কেননা, এর শাস্তি মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই শীঘ্রই সম্পন্ন করা “হৰে ৷ ”

আরেকটি হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ স.-কে জিজ্ঞেস করা হয় : اَيُّ الْعَمَلِ اَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى ؟ “আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল কোন্‌টি ?” জবাবে রাসূলুল্লাহ স. বলেন : الصلوة على وقتها . “ঠিক সময় মত নামায আদায় করা।” এরপর কোন্ কাজ আল্লাহর নিকট অধিক পসন্দনীয় ? একথার জবাবে রাসূলুল্লাহ স. বলেন ঃ। অর্থাৎ পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করা।”

হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীস ঃ عَنْ مُعَادٍ رَضِيَ أَوْصَانِي رَسُولُ الله الله بِعَشْرِ كَلِمَاتٍ قَالَ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا وَإِنْ قُتِلْتَ وَحُرِّقْتَ وَلَا تَعُقُنَّ وَالِدَيْكَ وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ وَلَا تَتْركُنَّ صَلوةٌ مُكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ الصَّلاةَ مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرنَتْ مِنْهُ نِمَّهُ اللهُ وَلَا تَشْرَبَنَّ خَمْرًا فَإِنَّهُ رَأْسُ كُلِّ فَاحِشَةٍ وَإِيَّاكَ وَالْمَعْصِيَّةَ فَإِنَّ بِالْمَعْصِيَةِ حَلٌّ سَخَطُ اللهِ وَإِيَّاكَ وَالْفِرَارَ مِنَ الزَّحْفِ وَإِنْ هَلَكَ النَّاسُ وَإِذَا أَصَابَ النَّاسَ مَوْتَانُ وَانْتَ فيهمْ فَاتَّبَتْ وَأنْفق على عيالك مِنْ طَولِكَ وَلَا تَرْفَعُ عَنْهُمْ عصَاكَ أنبا وَاخفَهُم في الله .

“হযরত মুয়ায রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল স. আমাকে দশটি বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, হে মুয়ায

(১) যদি তোমাকে হত্যা করা কিংবা পুড়িয়ে ফেলাও হয় তবু তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না।

(২) আর তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন ধন-সম্পদ থেকে তাড়িয়েও দেয় তবু তাদের অবাধ্য হবে না।

(৩) ইচ্ছাকৃতভাবে কিছুতেই তুমি ফরজ নামায ত্যাগ করবে না, কেননা স্বেচ্ছায় যে ফরজ নামায ত্যাগ করে তার ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কোনো দায়িত্ব থাকে না।

(৪) কিছুতেই তুমি শরাব পান করবে না ; কেননা শরাব হলো সমস্ত অশ্লীল কাজের মূল।

(৫) আর তুমি সব রকমের পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে, কেননা পাপ কাজের কারণে আল্লাহর গযব অবতীর্ণ হয়।

(৬) চরম কাটাকাটির মুহূর্তেও তুমি জিহাদের ময়দান পরিত্যাগ করবে না।

(৭) আর তুমি যেখানে অবস্থান করছো, সেখানে যদি মহামারী দেখা দেয়, তাহলে তুমি সেখানেই অবস্থান করবে।

(৮) তুমি তোমার সাধ্যমত পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে খরচ করবে।

(৯) সন্তান-সন্ততিকে আদব শিখাতে তাদের উপর লাঠি সরাবে না।

(১০) পরিবারের লোকজনকে সর্বদা আল্লাহর ব্যাপারে ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে।-মুসনাদে আহমদ

বই : মাতা-পিতা ও সন্তানের হক

অধ্যাপক মুহাম্মদ মতিউর রহমান

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *