রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো নবিজির সুন্নাত

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া আর সকালে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠা সুস্বাস্থ্য, সম্পদ আর জ্ঞান লাভের পূর্বশর্ত। রাসুল (সা.) রাতে দেরি করে ঘুমানোকে অপছন্দ করতেন। সাহাবায়ে কিরামদের এশার পরপরই ঘুমিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিতেন।

আল্লাহ তায়ালা রাতের পরিবেশ ঘুমের জন্যই নির্ধারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন নিদ্রা এবং ছড়িয়ে পড়ার জন্য করেছেন দিন। (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৪৭)

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর গুরুত্ব

হজরত আবু বারযা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার আগে ঘুমিয়ে এবং এশার পর অহেতুক আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪১)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার আগে ঘুমাতেন না এবং এশার পর আলাপচারিতায় লিপ্ত হতেন না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭০২)

ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুল (সা.) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলেন, তখন আমাকে পা দিয়ে নাড়া দিলেন এবং বললেন, মামণি! ওঠো। তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো। অলসদের দলভুক্ত হইও না। কেননা, আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রিজিক বণ্টন করে থাকেন। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ২৬১৬)

প্রিয় নবি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ওই বান্দার ওপর রহম করুন, যে রাত্রিকালে উঠে নামাজ আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায় এবং সেও নামাজ আদায় করে। যদি সে (স্ত্রী) নিদ্রার চাপে উঠতে না চায়, তবে সে (ভালোবেসে) তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ওই নারীর ওপরও রহম করুন, যে রাত্রিতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং তার স্বামীকে ঘুম থেকে জাগায় এবং সেও নামাজ আদায় করে। যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তবে সে ( ভালোবেসে ) তার মুখে পানি ছিটিয়ে জাগিয়ে তোলে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫০)

আলেমরা বলেন, এশার পর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কিংবা দ্বীনী বা দুনিয়াবী কোনো কল্যাণকর বিষয় ছাড়া অযথা আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া মাকরূহ।

এর কারণ সুস্পষ্ট। কারণ, অযথা আলাপচারিতা ও গল্পগুজব করার ফলে যখন রাতের উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট করে দেওয়া হবে তখন এটি খুবই স্বাভাবিক যে, শেষ রাতে ওঠা এ ব্যক্তির পক্ষে কষ্টকর হবে; বরং প্রবল আশঙ্কা রয়েছে ফজরের নামাজই কাজা হয়ে যাবে। এ ছাড়াও রাত জাগার কারণে দিনের বেলা অলসতা ভর করে। তাই পূর্ণ উদ্যমের সাথে ধর্মীয়-দুনিয়াবী দায়-দায়িত্ব পালন ও কাজকর্ম যথাযথভাবে পালন করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রাত মুমিনের জীবনে অতি মূল্যবান। শেষ রাতের কান্নাকাটি, তাওবা ইস্তিগফার, জিকির আজকার দু-চার রাকাত নামাজ আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই প্রিয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *