ঋণের যাকাত সম্পর্কিত ১৩ টি মাসআলা।
০১. মাসআলা : করযে হাসানা স্বরূপ যে টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে, উসূল হওয়ার পর উক্ত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। উসূল হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিলেও দেওয়া যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/১২)
ঋণ উসূল হওয়ার আশা না থাকলে ০২.মাসআলা : ঋণের টাকা উসূল হওয়ার পর যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হয়। সুতরাং যে টাকার উসূল হওয়ার আশা নেই তার যাকাত আদায় করা আবশ্যক নয়। (রদ্দুল মুহ্তার : ২/১২)
যে ঋণ পাওয়ার আশা ছিল না তা পেয়ে গেলে। ০৩.মাসআলা : ঋণ উসূল হওয়ার পর বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায় করা ওয়াজিব। আর হস্তগত হওয়ার পূর্বে ঋণের যাকাত আদায় করা ওয়াজিব নয়। তবে কখনো হস্তগত হলে বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায় করা ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার : ২/১২)
ঋণগ্রহিতার অস্বীকৃতির ক্ষেত্রে যাকাতের বিধান। ০৪.মাসআলা : যদি ঋণ গ্রহিতা ঋণ অস্বীকার করে বসে, আর ঋণ দাতার কাছে কোন সাক্ষী না থাকে, তবে ঋণ হস্তগত হওয়ার পূর্বে যাকাত দেওয়া আবশ্যক নয়। এমনিভাবে হস্তগত হওয়ার পরও বিগত বছর সমূহের যাকাত দিতে হবে না। (আপকে মাসায়েল : ৩/৩৫২)
যাকাত ফরজ হওয়ার পর ঋণগ্রস্ত হয়ে গেলে। ০৫.মাসআলা : এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে, যদি কারো নিকট সম্পদ থাকে, আর সে ঋণগ্রস্ত হয়, তবে দেখতে হবে ঋণ বাদ দেওয়ার পর তার কাছে নেসাব পরিমাণ (তথা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যমানের) সম্পদ আছে কি না? ঋণ বাদ দেওয়ার পর যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, তবে যাকাত ওয়াজিব হবে। চাই সে ঋণ পরিশোধ করুক বা না করুক। আর ঋণ বাদ দিয়ে যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট না থাকে, তবে যাকাত ওয়াজিব নয়। (আপকে মাসায়েল : ৩/৩৯৯)
যে ঋণ কিস্তিতে উসূল হয় তার বিধান ০৬. মাসআলা : ঋণ যদি কিস্তিতে উসূল হয়, তবে যে পরিমাণ উসূল হবে, তার যাকাত দিবে। আর উসূল হওয়ার আগে পরে যদি এক সাথেই সব টাকার যাকাত আদায় করে দেওয়া হয়, তাও ঠিক আছে। (রদ্দুল মুহতার : ২/১৫)
কোন দরিদ্রের ঋণ ক্ষমা করলে যাকাত আদায় হয় কী? ০৭. মাসআলা : এক ব্যক্তির উপর আমার পাঁচ টাকা ঋণ আছে, আমি যাকাত খাত থেকে তার উক্ত ঋণ মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না। এর সহজ পদ্ধতি হচ্ছে, প্রথমে নিজের পক্ষ থেকে তাকে (ঋণগ্রস্তকে) পাঁচ টাকার মালিক বানিয়ে দিবে, অতঃপর পূর্বের পাওনা বাবদ তা উসূল করে নিবে। তাতে যাকাতও আদায় হবে এবং ঋণও উদ্ধার হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া রহীমিয়া : ২/১২)
ঋণের টাকায় যাকাতের নিয়ত করা কেমন? ০৮.জনৈক দরিদ্র ব্যক্তি ঋণ নিয়ে আজ পর্যন্ত ফেরত দেয়নি; এর আশাও নেই । এখন যদি আমরা উক্ত টাকা যাকাতের নিয়তে ছেড়ে দেই, তাহলে যাকাত আদায় হবে না । কেননা যাকাত আদায়ের সময় নিয়ত করা জরুরী। (আপকে মাসায়েল : ৩/৩৮৩)
বন্ধকী বস্তুর যাকাত কার উপর ওয়াজিব? ০৯.মাসআলা : বন্ধকী বস্তুর যাকাত বন্ধক দাতা ও বন্ধক গ্রহীতা কারো উপরই ওয়াজিব নয় । (ফাতাওয়ায়ে শামী : ২/৯) ঋণ বলে যাকাত দেওয়া কেমন? ১০.মাসআলা : কেউ ঋণ চাইলো, আর তার ব্যাপারে তোমার জানা আছে যে, সে অত্যন্ত অভাবী ও রিক্ত হস্ত এবং কখনোই তা পরিশোধ করতে পারবে না অথবা এক কৃপণ/সংকীর্ণমনা যে, ঋণ নিয়ে তা কখনো শোধ করবে না, উক্ত ব্যক্তিকে ঋণের নামে যাকাত দিয়ে মনে মনে যাকাতের নিয়ত করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। যদিও সে এটাই বুঝে নেয় যে, তাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে । (ইমদাদে মাসায়েলে যাকাত : ৬৮)
১১. মাসআলা : যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি যদি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন দরিদ্র ব্যক্তি হয়, যাকাতের টাকা জানতে পারলে সে গ্রহণ করবে না, ঋণ হিসাবে দিলে তা গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তাকে এভাবে বলবে যে, এ টাকা তোমাকে ঋণ স্বরূপ দিচ্ছি, যখন সুযোগ হয় পরিশোধ করে দিবে, এবং সাথে সাথে যাকাতের নিয়ত করে নিবে। এতে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। পরবর্তীতে তাকে বলে দিবে যে, আমি তা মাফ করে দিয়েছি। এতে সে নিশ্চিত হবে এবং প্রশান্তি লাভ করবে। (শামী : ২/৩৫৬)
ঋণগ্রস্তকে যাকাত দিয়ে আপন ঋণ উদ্ধার করা ১২. মাসআলা : এক ব্যক্তির উপর ইমরানের কিছু ঋণ রয়েছে। লোকটি একেবারেই রিক্ত হস্ত। ইমরান এ কৌশল অবলম্বন করতে পারে যে, নিজ সম্পদের যাকাত বের করে তা উক্ত দেউলিয়া ব্যক্তির হাতে দিয়ে পূর্বের পাওনা বাবদ তা উসূল করে নিতে পারবে, এতে যাকাতও আদায় হয়ে যাবে আবার ঋণও উদ্ধার হবে । (রদ্দুল মুহতার : ২/১৬)
যাকাতের টাকা দ্বারা কারো ঋণ পরিশোধ করা ১৩.মাসআলা : যদি কোন সাহেবে নেসাব ব্যক্তি যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত কোন ব্যক্তির ঋণ যাকাতের টাকা দ্বারা আদায় করতে চায়, তখন তার পদ্ধতি হলো এই যে, ঋণের টাকা উপযুক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে দিবে। অতঃপর তাকে বলবে যে, ঋণ পরিশোধ করে দিন, অথবা তার থেকে টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করে দিবে, এই পদ্ধতিতে যাকাতও আদায় হয়ে যাবে ঋণও আদায় হয়ে যাবে। (আল মুহীতুল বুরহানী : ৩/২৬৮)
তথ্যসূত্রঃ
যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি।
লেখকঃমাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী