রিয়া বা লৌকিকতার ভয়াবহ শাস্তি
রিয়া বা লৌকিকতা হলো এমন এক মারাত্মক আত্মিক ব্যাধি, যা মানুষের নেক আমলকে ধ্বংস করে দেয়। এটি ইখলাস বা আন্তরিকতার বিপরীত এবং শিরকের একটি ক্ষুদ্র রূপ। কোরআন ও হাদিসে রিয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তা হলো একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা, আর সেই ইবাদতে যদি লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ মূল্যহীন হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন—
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁকে শরিক করা ক্ষমা করেন না, তবে যাকে ইচ্ছা করেন, তার অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করেন।” (সূরা আন-নিসা: ৪৮)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, শিরক এমন এক অপরাধ, যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না, যদি বান্দা তওবা না করে। আর রিয়া যেহেতু শিরকের একটি ধরন, তাই এটি অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়। যারা নামাজ, রোজা, দান-সাদকা, হজ, তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না করে, বরং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য করে, তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেদের আমল ধ্বংস করে দিচ্ছে।
কোরআনে লৌকিকতাকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে—
“অতএব দুর্ভোগ সেই নামাযীদের জন্য, যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে গাফিল এবং যারা লোক দেখানোর জন্য নামায পড়ে।” (সূরা আল-মাউন: ৪-৬)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, যারা ইবাদতকে লৌকিকতার জন্য ব্যবহার করে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন—“আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয় করি ছোট শিরক— আর তা হলো রিয়া। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন: ‘যাদের জন্য তোমরা আমল করেছিলে, তাদের কাছে যাও। দেখো, তারা তোমাদের কোনো প্রতিদান দেয় কি না!’” (মুসনাদ আহমদ: ২৩৬৩০)
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, যারা দুনিয়াতে ইবাদত করেও মানুষকে দেখানোর জন্য করেছে, কিয়ামতের দিন তারা কোনো প্রতিদান পাবে না। বরং আল্লাহ তাদের আমল বাতিল করে দেবেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে—
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মানুষকে দেখানোর জন্য কোনো আমল করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন লজ্জিত করবেন এবং অপমানজনক শাস্তি দেবেন।” (সহিহ বুখারি: ৬৪৯৯, সহিহ মুসলিম: ২৯৮৬)
এই হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যারা দুনিয়ায় লৌকিকতা করবে, কিয়ামতের দিন তারা চরম অপমানিত হবে।
একটি ভয়ংকর হাদিসে রাসুলুল্লাহ ﷺ কিয়ামতের দিন প্রথম বিচার হওয়া তিন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন—
একজন শহীদ, একজন আলেম এবং একজন দানশীল ব্যক্তি। আল্লাহ তাদের ডেকে তাদের আমল স্মরণ করাবেন এবং তারা তা স্বীকার করবে। কিন্তু আল্লাহ বলবেন—
“তুমি তো মানুষকে দেখানোর জন্য (রিয়া) এই কাজ করেছিলে। অতঃপর তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহিহ মুসলিম: ১৯০৫)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, এমনকি শহীদ, আলেম ও দানশীল ব্যক্তির মতো মহৎ কাজেরও যদি রিয়া থাকে, তবে তা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রিয়া ও লৌকিকতা থেকে মুক্ত রাখুন এবং আমাদের সমস্ত ইবাদত একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কবুল করুন। আমিন।