সালামের গুরুত্ব ও ফযীলত
সালামে মুহাব্বত ও ঐক্য সৃষ্টি হয়
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَدْخُلُوا الجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا، وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا، أَوَلَا أَدْتُكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوْهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أَفَشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمُ .
অর্থ : “হযরত আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না ঈমান আনবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের ঈমান পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না পরস্পরে মুহাব্বত করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কথা বলে দিব না? যার উপর আমল করলে তোমাদের মধ্যে মুহাব্বত বৃদ্ধি পাবে? সেটা হলো, তোমরা সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।” (অর্থাৎ পরিচিত- অপরিচিত সকলকে সালাম দাও।) সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৪
হযরত আবু দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা সালামের খুব প্রচলন ঘটাও। তাহলে তোমরা উন্নত হয়ে যাবে। -তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সালাম আল্লাহ তা’আলার নামসমূহের মধ্যে একটি নাম, যা আল্লাহ তা’আলা জমিনে পাঠিয়েছেন। অতএব তোমরা পরস্পর তার খুব প্রসার করো। কেননা মুসলমান যখন কোনো কওমের উপর দিয়ে অতিক্রম করে এবং তাদেরকে সালাম করে আর তারা জওয়াব প্রদান করে, তখন তাদেরকে সালাম স্মরণ করিয়ে দেয়ার কারণে সালামকারী ব্যক্তির ওই কওমের উপর এক ধাপ ফযীলত হাসিল হয়। আর যদি তারা জওয়াব না দেয়, তবে ফেরেশতাগণ —যাঁরা মানুষ থেকে উত্তম, সে ব্যক্তির সালামের জওয়াব প্রদান করেন। -বাযযার, তাবারানী, তারগীব
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হলো এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বললো। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জওয়াব দিলেন। অতঃপর সে মজলিসে বসে গেলো। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন দশ। অর্থাৎ সালামের কারণে তার জন্য দশটি নেকী লেখা হয়েছে। অতঃপর আরেকজন লোক এলো এবং ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বললো। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জওয়াব দিলেন । তারপর সে বসে পড়লো। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, বিশ। অর্থাৎ তার জন্য বিশটি নেকী লেখা হলো। তারপর তৃতীয় একজন এলো এবং আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা’আতুহু বললো। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জওয়াব দিলেন। তারপর সে মজলিসে বসে পড়লো। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ত্রিশ। অর্থাৎ তার জন্য ত্রিশটি নেকী লেখা হলো । -আবু দাউদ
হযরত আবু উমামা রাযি. বর্ণনা করেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্যের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত সে ব্যক্তি, যে আগে সালাম করে। -আবু দাউদ হযরত আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম করে সে অহঙ্কার থেকে মুক্ত। -বায়হাকী
হযরত আনাস রাযি. বলেন, আমাকে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আমার প্রিয় বৎস! যখন তুমি আপন ঘরে প্রবেশ করো, তখন ঘরওয়ালাদেরকে সালাম করো। এটা তোমার জন্য এবং তোমার ঘরওয়ালাদের জন্য বরকতের কারণ হবে। -জামে তিরমিযী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি একদিনের মধ্যে বিশবার সালাম করলো, চাই জামা’আতকে করুক কিংবা ব্যক্তিগতভাবে একেকজনকে করুক। আর সেদিন সে ইন্তিকাল করলো তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।—মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খণ্ড ৮ পৃষ্ঠা : ৩০
সালাম প্রদান সম্পর্কিত আদবসমূহ
১. অন্য কথা না বলে আগে সালাম দিবে, এটাই উত্তম।
২. পথচারীকে আরোহী, উপবেশনকারী বা দাঁড়ানো ব্যক্তিকে পথচারী, অবস্থানকারীকে আগন্তুক, অধিক সংখ্যককে কম সংখ্যক এবং অধিক বয়সীকে কম বয়সী কর্তৃক আগে সালাম করা উত্তম।
৩. জামা’আতের মধ্য থেকে একজন সালাম করলে সকলের পক্ষ থেকে তা যথেষ্ট হবে।
৪. সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা করবে না; হাত কপালে ঠেকাবে না কিংবা মাথা ঝুঁকাবে না।
৫. কোনো খালি ঘরে প্রবেশ করলে-السلام عليكم يا اهل البيت বলা। অর্থ : “হে গৃহবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । ” অথবা السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين পড়বে। অর্থ : “আমাদের প্রতি ও সৎ বান্দাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
৬. সালামের জওয়াব দেয়া ওয়াজিব। জামা’আতের মধ্য থেকে একজন জওয়াব দিলে সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে।
৭. সালামের জওয়াব সালামদাতাকে শুনিয়ে দেয়া জরুরী।
৮. কোনো অমুসলিম আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম দিলে তার জবাবে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে অথবা ইশারা করে দিলেও যথেষ্ট হবে।
৯. একই সঙ্গে দুইজন একে অপরকে সালাম দিলে প্রত্যেককেই আলাদা জওয়াব দিতে হবে ।
১০. নিজের বাড়িতে নিজের মা-বোনকে এবং নিজের স্ত্রীকেও ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বলে সালাম করবে এবং তারাও ‘ওয়া-আলাইকুমুস সালাম’ বলে জওয়াব দিবে ।
সালাম প্রেরণের সুন্নাত তরীকা
যদি কেউ কোনো লোককে বা চিঠির মাধ্যমে সালাম পৌছাতে চায় তবে ‘আমার সালাম পৌছে দিবেন’ বা ‘পত্রে আমার সালাম রইলো’ বললেই সালাম হবে।
কেউ অন্য কারও সালাম পৌঁছালে তার জওয়াবে বলবে- وعليك وعليه السلامঅথবা وعليكم و عليهم السلام
সালামের উচ্চারণে প্রচলিত ভুল
অনেকে সালামের সহীহ উচ্চারণ করে না। যেমন- স্লামালাইকুম, সালামু আলাইকুম, আসলামু আলাইকুম, স্লামু আলাইকুম ইত্যাদি। আসসালামু আলাইকুমের শুরু হামযা মিলিয়ে ফেলে। আলাইকুমের আইনের এর উচ্চারণ হামযার মতো করে। ওয়া আলাইকুমুস সালামকে ওয়ালাইকুম সালাম, হাত উত্তোলন করে সালাম দেয়। এগুলোর ইসলাহ হওয়া প্রয়োজন।
তথ্যসূত্রঃ
কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ