ইসলাম

মেডিকেল সাইন্সের আলোকে রাগ নিয়ন্ত্রণের ৭ উপায়

ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনার মত রাগও একটি আবেগ। ছোট কিংবা বড় বিভিন্ন ঘটনায় আমরা রাগ প্রকাশ করি। কিন্তু এই আবেগটি বেশি প্রকাশ পেলে নানা বিপত্তি তৈরি হয়।

অনেকেই রেগে গেলে ভাঙচুর করেন, উচ্চস্বরে চিৎকার করেন, এমনকি গায়ে হাতও তুলে ফেলেন। অতিরিক্ত রাগের প্রভাব পড়তে পারে ব্যক্তিজীবন, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে। রাগ একটি নীরব ঘাতক। গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত রাগ শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত রেগে গেলে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপম বুকে ব্যথা, তীব্র মাথাব্যথা, মাইগ্রেন অ্যাসিডিটির মতো অনেক শারীরিক রোগ দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা। বাড়তে পারে স্ট্রেস। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত রাগ মানুষের আয়ুকাল কমিয়ে দেয়। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে সুখী মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচে।

রাগ থেকে সৃষ্টি হয় অনীহা, অনীহা থেকে সৃষ্টি হয় ঘৃণা। ঘৃণার কারণে মানুষ হিংস্র্র আচরণ করে। রাগের কারণে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন আক্রমণাত্মক আচরণ প্রকাশ পায়। পারিবারিক কলহ, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সাথে বিবাদ, সহকর্মীদের সাথে মারমুখো আচরণ এ সবের অন্তর্ভুক্ত। গবেষকরা বলেছেন, মানসিকভাবে পৃথিবীর ৮৫ শতাংশ মানুষ অন্যায়কারীর ওপর প্রতিশোধপরায়ণ হয়। কেউ প্রতিশোধ নিতে পারে, আবার কেউ নিজের ব্যর্থতা ও অক্ষমতার কারণে ক্ষমা করে। চরম প্রতিশোধপরায়ণ হলে শত্রুকে ভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চিন্তা তার মাথায় সারাক্ষণ ঘোরপাক খায়।

স্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘মায়ো ক্লিনিক’ জানিয়েছে রাগ কমানোর কয়েকটি সহজ উপায়ের কথা। চলুন জেনে নিই সেগুলো-

১, দ্রুত স্থান ত্যাগ করুন

হঠাৎ বেশি রাগ করে ফেললে সেই সময় ওই স্থান দ্রুত ত্যাগ করার চেষ্টা করতে হবে। যে মানুষটির ওপর আপনার রাগ তার কাছ থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে থাকলে কিছুক্ষণ পর রাগ নিজে থেকেই কমে আসতে পারে। নিজেকে পরাজিত মনে করবেন না। বরং ভাবুন আপনি রাগকে পরাজিত করে নিজে জয়ী হয়েছেন। স্থান ত্যাগ করা যদি সম্ভব না হয়, অবস্থান পরিবর্তন করুন। যেমন আপনি দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন।

২, লিখে রাখুন

কোন পরিস্থিতিতে আপনি কেন রাগ করছেন বা কেমন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, কীভাবে আপনি অনুভূতিকে প্রকাশ করছেন সেগুলো একটি খাতায় লিখে রাখুন। কীভাবে আপনি আপনার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান সেটিও লিখে ফেলুন এবং বারবার নোটটি পড়ুন।এই পদ্ধতিটি আপনাকে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ দেবে, পাশাপাশি নিজের রাগকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি যোগাবে।

৩, উল্টো গণনা শুরু করুন

বহুকাল ধরে প্রচলিত এই প্রক্রিয়াটি রাগ নিয়ন্ত্রণে সত্যিই ভাল কাজ করে। মনে হচ্ছে কোন ঘটনায় আপনি বিরক্ত হচ্ছেন, ভেতরে ভেতরে রেগে যাচ্ছেন তখন পিছন দিক থেকে ১০০ গুনতে শুরু করুন। এটি সাময়িকভাবে আপনার মনোযোগকে সরিয়ে দেবে এবং কোনো নেতিবাচক চিন্তা করার আগে বেশ কিছুটা সময় পাওয়া যাবে রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনার।

৪, কারো সঙ্গে কথা বলুন

যদি রাগ অপ্রকাশিত থেকে যায় তবে প্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। কেমন অনুভব করছেন সে সম্পর্কে বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে যেমন বাবা-মা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে  কথা বললে মনের ভার কমে যেতে পারে। তবে এমন কাউকে বলা উচিত নয় যিনি আপনার অনুভূতিকে সম্মান করবেন না। এমন কাউকে যদি খুঁজে না পান এবং পরিস্থিতি যদি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে তবে পেশাদার অনলাইন না অফলাইন কাউন্সিলিং করেন এমন কারো শরণাপন্ন হতে পারেন।

৫, নিঃশ্বাসের ব্যায়াম

তাৎক্ষণিক রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিঃশ্বাসের ব্যায়াম বেশ পুরনো ও কার্যকরী পদ্ধতি। রাগ থেকে মনটাকে সরিয়ে নিশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বুক ভরে গভীর নিশ্বাস নিন, সেটাকে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, কিছুক্ষণ পর বাতাস ছেড়ে দিন। এটি রাগ কমাতে সহায়তা করে।

৬, বলার আগে সময় নিন

মুহূর্তের উত্তাপে এমন কিছু বলা উচিত নয় যার জন্য পরবর্তীতে অনুশোচনা করতে হয়। রাগের মুহূর্তে আমরা এমন সব কথা বলে ফেলি যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে।কিছু বলার আগে নিজে চিন্তা করে নিন কয়েক মুহূর্ত। ভাবুন, আপনার এই কথা বা আচরণে আরেকজনের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে।

৭, ক্ষমা করতে শিখুন

রাগকে নিজের মধ্যে পুষে না রেখে, ক্ষমা করতে শিখুন। ক্ষমা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আপনি যদি রাগ বা অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে নিজের মধ্যে লালন করতে থাকেন তবে নিজের ভেতরের তিক্ততা আপনাকে আরও গ্রাস করবে।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *