শিরক সম্পর্কে সর্বদা মনে রাখার মতো কথা হল :
- জীবন বিপন্ন হ’লেও শিরক করা যাবে না,
- শিরকের পাপের কোন ক্ষমা নেই,
- শিরকের পরিণতি ধ্বংস,
- শিরক সমস্ত নেক আমলকে বিফল করে দেয়,
- মুশরিকরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী,
- মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নিষেধ,
- শিরক মিশ্রিত ঈমান কখনোই ঈমান হিসাবে৷ গ্রহণযোগ্য নয়,
- শিরক অতি সন্তর্পনে আগমন করে।
اَللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوْذُبِكَ أَنْ نُشْرِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لَمَا لاَ نَعْلَمُ
‘আল্লাহুম্মা ইন্না না‘ঊযুবিকা আন নুশরিকা শাইআন না‘লামুহ, ওয়া নাসতাগফিরুকা লিমা লা না‘লামুহ।’
অর্থ: হে আল্লাহ্, জেনে বুঝে শিরক করা থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আমাদের অজ্ঞাত শিরক থেকে আপনার নিকটে ক্ষমা চাচ্ছি। – আহমাদ ও আত্ব-ত্বাবারানী কর্তৃক সংগৃহীত।
নিম্নলিখিত কাজগুলো শিরক। এসব হতে দূরে থাকা অপরিহার্য কর্তব্য-
- কোন বুযুর্গ বা পীর সম্বন্ধে এ রকম আক্বীদা রাখা যে, তিনি সবসময় আমাদের সব অবস্থা জানেন।
- জ্যোতির্বিদ, গণক, ঠাকুরদের নিকট অদৃষ্টের কথা জিজ্ঞেস করা।
- কোন পীর-বুযুর্গকে দূরদেশ থেকে ডাকা এবং মনে করা যে, তিনি তা শুনতে পেয়েছেন।
- কোন পীর-বুযুর্গ, জিন-পরী বা ভূত-ব্রাহ্মণকে লাভ-লোকসানের মালিক মনে করা।
- কোন পীর বুযুর্গের কবরের নিকট আওলাদ বা অন্য কোন উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে প্রার্থনা করা।
- পীর বা কবরকে সিজদা করা।
- কোন পীর-বুযুর্গের নামে শিরনি, সদকা বা মান্নত মানা।
- কোন পীর-বুযুর্গের দরগাহ বা কবরের চতুর্দিক দিয়ে তওয়াফ করা।
- আল্লাহর হুকুম ছেড়ে অন্য কারো আদেশ বা সামাজিক প্রথা পালন করা।
- কারো সামনে মাথা নিচু করে সালাম করা বা হাত বেঁধে নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকা।
- মুহাররমের সময় তাজিয়া বানানো।
- কোন পীর-বুযুর্গের নামে জানোয়ার যবেহ করা বা কারো দোহাই দেওয়া।
- পীরের বাড়ির বা কোন বুযুর্গের দরগাহ বা তীর্থকে, কাঁবা শরীফের মতো আদব বা তা’যিম করা।
- কোন পীর-বুযুর্গ বা অন্য কারো নামে ছেলের নাক, কান ছিদ্র করা, আংটি পরান, চুল রাখা, টিকি রাখা ইত্যাদি ১৫. আলী বখশ, হোসাইন বখশ ইত্যাদি নাম রাখা।
- কোন জিনিসের বা ব্যারাম-পীড়ার ছুত লাগে বলে বিশ্বাস করা।
- মুহররম মাসে পান না খাওয়া, নিরামিষ খাওয়া, খিচুড়ি খাওয়া ইত্যাদি।
- নক্ষত্রের তাছির মানা বা তিথি পালন করা।
- ভালো-মন্দ বা বার তারিখ জিজ্ঞেস করা। যেমন, অনেকে জিজ্ঞেস করে, এই চাঁদে বিবাহ শুভ কি-না? কোন দিন নতুন ঘরে যেতে হয়? রোববারে বাঁশ কাটা যায় কি-না? ইত্যাদি।
- গণকের নিকট বা যার ঘাড়ে জিন সওয়ার হয়েছে, তার নিকট হাত দেখিয়ে অদৃষ্ট জিজ্ঞেস করা।
- কোন জিনিস হতে কু-লক্ষণ ধরা বা কুযাত্রা মনে করা। যেমন, যাত্রামুখে কেউ হাঁচি দিলে অনেকে সেটাকে কু-যাত্রা মনে করে থাকে।
- কোন দিকে যাত্রা করার সময় ঘরের দুয়ারে মা খাকি বলে সালাম করে বিদায় গ্রহণ করা।
- কোন দিন বা মাসকে অশুভ মনে করা।
- কোন বুযুর্গের নাম ওজীফার মতো জপ করা।
- এ রকম বলা যে, আল্লাহ ও রাসূলের মর্জি থাকলে এ কাজ হবে, বা আল্লাহ-রাসূল যদি চান, তবে এ কাজ হবে।
- এ রকম, বলা যে, উপরে খোদা, নিচে আপনি।
- কারো নামের কসম খাওয়া বা যিকির করা। কাউকে ‘পরম পূজনীয়’ সম্বোধন করে লেখা, ‘কষ্ট না করলে কেষ্ট পাওয়া যায় না’ বলা, ‘জয়কালী নেগাহবান’ ইত্যাদি বলা।
- তেমাথা পথে ভেট দেওয়া, পূজা উপলক্ষে কর্ম বন্ধ রাখা, দোল-পূজায় আবির মাখানো, বিষকরম পূজায় ছাতু খাওয়া, পৌষ মাস সংক্রান্তিতে গরু দৌড়ানো, ঘোড়া দৌড়ানো, আশ্বিন মাস সংক্রান্তিতে গাশ্চি, গোফাগুণে পূজা উপলক্ষে আমোদ উৎসব, নতুন কাপড় ক্রয়, পার্বণী দেয়া, মনসা পূজা বা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নৌকা দৌড়ানো। হিন্দুদের আড়ঙ্গে, মিছিলে, উৎসবে যাওয়া।
- ছবি, ফটো বা মূর্তি রাখা, বিশেষ করে কোন বুযুর্গের ফটো তা’যিমের জন্য রাখা।
- রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে ধাতব পদার্থ নির্মিত আংটি ও বালা পরিধান করা
- জিন বা অপর কোন রোগের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার জন্য শরীরে তা‘বীয ব্যবহার করা
- সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার
- দিলে দিলে ছালাত পড়ি
- কপালে টাকা স্পর্শ করে তা সম্মান করা
- চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের প্রভাব : অনেকের ধারণা চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ মানুষের ভাল-মন্দ, জন্ম-মৃত্যু, বিপদ-আপদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
- কোন মাস বা সময়কে ভাল বা খারাপ জানা
- নব জাতকের জন্য : নব জাতকের হাতে চামড়ার চিকন তার বা তাগা বা গাছ বা এ ধরনের অন্য কোন কিছু চুড়ির মতো করে বেঁধে দেয়া হয় যাতে কোন অশুভ রোগ-বালাই বা বদ জিন-ভূত স্পর্শ করতে না পারে। আবার নবজাত শিশুকে জিনের অশুভ দৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য বাচ্চার কান ছিদ্র করা, বাচ্চার বালিশের নিচে জুতার টুকরা রাখা অথবা শিশুর মাথার চুল না কাটা। চোখ লাগা থেকে শিশুসন্তানকে রক্ষার জন্য সন্তানের গলায় মাছের হাড়, শামুক ইত্যাদি ঝুলিয়ে রাখা, কপালে কালো টিপ বা দাগ দেয়া।
- আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন নামে কসম করলে
- লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোন আমল করা৷ – (ছোট শিরিক)
- পার্থিব লোভে পড়ে কোন আমল করা – (ছোট শিরিক)
প্রচলিত কিছু শিরকী কথা:
মানুষের মাঝে একটা স্বভাব রয়েছে আর তাহলো তার চেয়ে ভাল অবস্থায় কেউ থাকলে বা তার নিজস্ব অবস্থানের চেয়ে কাউকে বড় দেখলে সে তাকে তার মনের মাঝে এমন একটা জায়গায় স্থান দিতে শুরু করে যে ধীরে ধীরে সে নিজের অজান্তে শিরকে জড়িয়ে পরে। আমাদের অনেকেই প্রায়ই এই ধরণের কথা বলে থাকিঃ
- আপনি ছিলেন বলেই আজকে রক্ষা পেলাম!
- আমি আপনার উপরই ভরসা করছি!
- আপনি ছাড়া আর কে সাহায্য করবে!
- আপনি যদি থাকতেন তাহলে কাজটা এরকম হতো না!
- ভাই সাহায্য করেন, আপনিই একমাত্র পারেন আমাকে সাহায্য করতে!
- হ্যালো, ভাই কেমন আছেন! কঠিন বিপদে আছি উদ্ধার করেন ভাই! (মোবাইল কথোপকথন)
- হে দয়ার নবী রক্ষা যদি না কর বেহেশতে যেতে পারব না!
- হে অমুক মাজারবাসী আমার অমুক আশাটা পূরণ করে দেন!
- কেবলাবাবাই ভরসা!
- দয়ালবাবা, বাবা ভান্ডারী রক্ষা কর মোরে!
তথ্য সূত্রঃ
এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0