তাহিয়্যাতুল অযুর নামায
অজু করার পর অজুর অঙ্গগুলো শুকানোর পূর্বেই দুই রাকাত নামাজ পড়া মোস্তাহাব। ইসলামী পরিভাষায় এই নামাজকে “তাহিয়্যাতুল অজু” বলে।
তাহিয়্যাতুল অযুর ফজিলত
হাদিস শরিফে এসেছে, উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে মুসলমান সুন্দর রুপে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকআত নামাজ আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। ” (সহিহ মসলিম, হাদিস নং 234, আবু দাউদ, হাদিস নং 304)
হজরত ওসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার অজুর মতো অজু করে (একাগ্রতার সহিত) দুই রাকাআত নামাজ পড়বে এবং এ সময় অন্তরে অন্য কোনো ধারনা উদয় হবে না বা কোনো কথা বলবে না। তাহলে তার পূর্বেকার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, বাইহাকি, ইবনে হিব্বান)
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. তাহিয়্যাতুল অজু সংক্রান্ত এই দুটি হাদিস উল্লেখ্য করার পর বলেন, এই হাদিস দুটিতে দলিল রয়েছে অজুর পর দুই রাকাত নামাজ মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে।
ইমাম নববী রহ. বলেন, বিশুদ্ধ হাদিসের দলিল থাকার কারণে বুঝা গেল, অজুর পর দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব।
এ বিষয়ে আরও একটি হাদিস রয়েছে বুখারি ও মুসলিম শরিফে।
হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তূজীবী (রহঃ) … উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান থেকে বর্ণিত যে, উসমান (রাঃ) অজুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি অজু করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি [উসমান (রাঃ)] তিনবার তাঁর হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুইলেন এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমন্ডল ধুইলেন। এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুইলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরুপভাবে ধুইলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত ধুইলেন এরপর বাম পা অনুরুপভাবে ধুইলেন।
এরপর তিনি বললেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ অজু করার ন্যায় অজু করতে দেখেছি। এবং অজুর শেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার এ অজুর ন্যায় অজু করবে এবং দাঁড়িয়ে এরুপে দু-রাকআত নামাজ আদায় করবে যে, সে সময়ে মনে মনে অন্য কোন কিছু কল্পনা করেনি, সে ব্যাক্তির পুর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৬০, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২৬)
তাহিয়্যাতুল অযু পড়ার নিয়ম:
সাধারণ সুন্নাত ও নফল নামাজের ন্যায় যে কোনো সুরা-কিরাত দ্বারা তাহিয়্যাতুল অজু আদায় করা যায়। উভয় রাকাআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সুরা মিলাতে হবে এবং আখেরী বৈঠক আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা সব পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।
নামাজের নিষিদ্ধ ও মাকরুহ সময় ছাড়া যে কোনো সময় অজু করার পর এ নামাজ পড়া যায়। অর্থাৎ তিন সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। (তিরমিযী শরীফ, ২য় খ-, ৩৪১ পৃষ্ঠা)
তাহিয়্যাতুল অযু নামাযের রাকাত সংখ্যা
অযুর পরে নফলের নিয়তে দুই রাকাত নামায পড়া। তাহিয়্যাতুল অযু নামাযের নিয়ত আমি তাহিয়্যাতুল অযুর দুই রাকাত নফল নামায পড়তেছি।