ইবাদত

তাক্বওয়া অর্জনের উপায়সমূহ

১. ওহী-ভিত্তিক জ্ঞান (তালিম ও তাওহীদ):

তাক্বওয়া অর্জনের জন্য আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ পরিচয় ও তাঁর ক্ষমতা, সম্মান, দয়া-অনুগ্রহ, কঠোরতা, আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান প্রয়োজন। কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন করলে আল্লাহর প্রতি ভয় এবং শ্রদ্ধা বেড়ে যায়, যা তাক্বওয়া অর্জনে সাহায্য করে। আল্লাহ তা‘আলা কোরআনে বলেন, “বান্দাদের মধ্যে তারাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে যারা জ্ঞানী।” (সূরা ফাতিরঃ ২৮)। এজন্য, একজন মুসলমানকে আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে, যা অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করবে।

২. আল্লাহভীরুদের সাহচর্য (সৎ সঙ্গী নির্বাচন):

মানুষ তার সঙ্গীদের প্রভাবের অধীনে থাকে। আল্লাহভীরু, সৎ, নেক, এবং ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থাকার ফলে, তাদের প্রভাবের কারণে তাক্বওয়া এবং আল্লাহভীরুতা বেড়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও।” (সূরা তাওবা: ১১৯)।

তাহলে, সৎ ও আল্লাহভীরু সঙ্গী নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করবে।

৩. আল্লাহভীরু পিতামাতা:

পিতামাতা যদি আল্লাহভীরু হন, তবে সন্তানদের মধ্যেও আল্লাহভীরুতা এবং তাক্বওয়া গড়ে ওঠে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “প্রত্যেক সন্তানই ফিতরতের উপর জন্ম গ্রহণ করে, অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, খৃষ্টান বা অগ্নি উপাসক পরিণত করে।” (বুখারী, মুসলিম)।

এজন্য, পিতামাতার চরিত্র ও শিক্ষা সন্তানের নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিক গুণাবলী গড়ে তোলে।

৪. আল্লাহকে কর্মবিধায়ক মনে করা:

তাক্বওয়া অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহকে স্বীকার করা এবং তাঁর আদেশ অনুসরণ করা। প্রতিটি কর্মের জন্য আল্লাহর হুকুম মানতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ সবসময় আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ, তিনি তোমাদের সকল কর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছেন।” (সূরা হাশর: ১৮)।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “সর্বোত্তম ঈমান হল এ কথা বিশ্বাস করা যে, তুমি যেখানেই অবস্থান কর, আল্লাহ তোমার সাথে রয়েছেন।” (মুজামুল আওসাত)।

এভাবে, আল্লাহর উপস্থিতি এবং কার্যক্ষমতা বিশ্বাস করে, তার আদেশ মেনে চলা সম্ভব হয়।

৫. আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা (ইবাদত করা):

তাক্বওয়া অর্জন করতে হলে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত নামাজ, রোজা, জাকাত এবং অন্য ইবাদতগুলো পালন করার মাধ্যমে আল্লাহভীতি এবং তাক্বওয়া অর্জিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহিযগারী অর্জন করতে পারবে।” (সূরা বাকারাঃ ২১)।

এটি স্পষ্টভাবে জানায় যে, আল্লাহর আদেশ মেনে চলা এবং তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা তাক্বওয়া অর্জনের প্রাথমিক উপায়।

৬. দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা:

দোয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা তাক্বওয়া অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর কাছে পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং তার সাহায্য প্রার্থনা, তাক্বওয়ার শক্তি প্রদান করে। দোয়া আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দৃঢ়তা তৈরি করে এবং আত্মবিশ্বাস ও ভয়ের সাথে জীবন কাটাতে সহায়তা করে।

৭. ধৈর্য এবং আত্মসংযম:

তাক্বওয়া অর্জনের জন্য ধৈর্য ধারণ করা এবং দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত থাকা জরুরি। আল্লাহর ভয় রাখার জন্য ধৈর্য এবং আত্মসংযমের সাথে নিজের ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যখন তুমি ধৈর্য ধারণ করো, তখন আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন।” (বুখারি)।

এটি তাক্বওয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, কারণ আল্লাহর ভয় ও অনুশাসনের প্রতি আত্মসমর্পণই তাকে অর্জন করা সম্ভব হয়।

৮. দুনিয়ার মোহে না পড়া :

তাক্বওয়া অর্জনের জন্য দুনিয়ার ****মোহে না পড়া এবং পরকালীন চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ। দুনিয়ার প্রলোভন এবং মুনাফা থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং পরকালীন জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি পরকালীন জীবনের জন্য তার সমস্ত কাজ করে, সে তাক্বওয়া অর্জন করবে।” (তিরমিযী)।

এটি স্পষ্টভাবে পরকালীন চিন্তা ও কাজের প্রতি মনোযোগী হতে প্ররোচিত করে, যা তাক্বওয়ার উন্নতি ঘটায়।

এই সব উপায় গ্রহণ করে, একজন মুসলমান তার জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত করতে পারে, যা তাক্বওয়া অর্জনে সহায়ক হয়।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *