ইবাদত

তাক্বওয়ার ইহকালীন উপকারীতা

১। তাক্বওয়ার ফলে মানুষের যাবতীয় জটিল  বিষয়গুলো সহজ হয়ে যায়। وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا এটা আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন। (সূরা তালাকঃ ৪)

২। তাক্বওয়ার ফলে মানুষ শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারে। إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ যাদের মনে ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। (সূরা আরাফঃ ২০১)

৩। আসমান ও যমীনের বরকতের দরজা খুলে যায়। وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। ( সূরা আরাফঃ ৯৬)

৪। সত্য ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করার তৌফিক লাভ করে। يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান। ( সূরা আনফালঃ ২৯)

৫। সংকট থেকে উদ্ধার করবেন। وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। ( সূরা তালাকঃ ২)

৬। অপরিসীম রিযক দান করবেন। وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। ( সূরা তালাকঃ ৩)

৭। আল্লাহ তায়ালা সাহয্যকারী হয়ে যাবেন। وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। ( সূরা তালাকঃ ৩)

৮। আল্লাহর ওলী ও বন্ধু হওয়া যায়। وَمَا لَهُمْ أَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللَّهُ وَهُمْ يَصُدُّونَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوا أَوْلِيَاءَهُ ۚ إِنْ أَوْلِيَاؤُهُ إِلَّا الْمُتَّقُونَ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ আর তাদের মধ্যে এমন কি বিষয় রয়েছে, যার ফলে আল্লাহ তাদের উপর আযাব দান করবেন না। অথচ তারা মসজিদে-হারামে যেতে বাধাদান করে, অথচ তাদের সে অধিকার নেই। এর অধিকার তো তাদেরই রয়েছে যারা পরহেযগার। কিন্তু তাদের অধিকাংশই সে বিষয়ে অবহিত নয়। ( সূরা আনফালঃ ৩৪)

৯। আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা যায়। بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ যে লোক নিজ প্রতিজ্ঞা পূর্ন করবে এং পরহেজগার হবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন। ( সূরা আলে ইমরানঃ ৭৬)

১০। আল্লাহর সাহচার্য লাভ করা যায়। وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।  ( সূরা বাকারাঃ ১৯৪)

১১। মোত্তাকীর আমল কবুল হয়। إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ আল্লাহ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন। (সূরা মায়িদাঃ ২৭)

১২। দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কোন ভয়-ভীতি নেই। فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ তবে যে ব্যক্তি সংযত হয় এবং সৎকাজ অবলম্বন করে, তাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। ( সূরা আরাফঃ ৩৫)

১৩। গুনাহ মাফ ও বিশাল পুরস্কার দেয়া হবে। ذَٰلِكَ أَمْرُ اللَّهِ أَنزَلَهُ إِلَيْكُمْ ۚ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا এটা আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন। ( সূরা তালাকঃ ৫)

১৪। ভয়-ভীতি মুক্ত জীবন লাভ। أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ  الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে। যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে। (সূরা ইউনুছঃ ৬২,৬৩)

১৫। মোত্তাকী আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত। يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। ( সূরা হুজুরাতঃ ১৩)

১৬। আল্লাহ মোমেন মোত্তাকীকে নাজাত দেন ও উদ্ধার করেন। وَنَجَّيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল ও সাবধানে চলত, আমি তাদেরকে উদ্ধার করলাম। ( সূরা হা-মীম সাজদাহঃ/ ফুস্সিলাতঃ ১৮)

১৭। তাক্বওয়ার অনুসারীরা দুনিয়া ও আখিরাতে খোশ খবর লাভ করে। এর মধ্যে দুনিয়ায় স্বপ্ন কিংবা মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসা অন্যতম। الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۚ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে। তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সূরা ইউনুসঃ ৬৩-৬৪)

তথ্যসূত্র:

মূল লেখক- প্রিয় ওস্তাদ উমর ফারুক (হাফিযাহুল্লাহ) সম্পাদনা-  ইসমাইল বিন ইবরাহীম

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *