যাকাত আদায়ের ৭ টি উপকারিতা
১. বর্তমানে গোটা বিশ্বে সমাজতন্ত্রবাদের আলোচনা শুনা যায়, যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নতি ও সফলতার শ্লোগান তুলে তাদেরকে ধনীদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করা হচ্ছে। এ আন্দোলনে গরীবদের উপকার কতটুকু হচ্ছে? তা ভিন্ন আলোচ্য বিষয় । তবে এখানে এটাই বলতে চাই যে, ধনী ও দরিদ্রের মাঝে এ যুদ্ধ শুধুমাত্র এজন্যই যে, আল্লাহ তাআলা বিত্তশালীদের উপর অসহায় দরিদ্র শ্রেনীর জন্য যে সব অধিকার আরোপ করেছেন, সেগুলো থেকে তাদের উদাসীনতা ও পাশ কেটে চলা। যদি রাষ্ট্রের সকল সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অসহায়দের মাঝে বন্টন করে দেওয়া হয় এবং এ কাজটা সাময়িক না হয়ে ধারাবাহিক চলতে থাকে আর ধনী লোকেরা কোনোরূপ উৎসাহ প্রদান ও জোর জবরদস্তি ছাড়াই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন, তবে কিছুদিন পর আপনি দেখবেন ধনীদের বিরুদ্ধে দরিদ্রের কোনো অভিযোগই থাকবে না। এমনিভাবে ধনী- দরিদ্রের মধ্যকার যে অসীম যুদ্ধের কারনে গোটা দুনিয়া জাহান্নামের বিষবাষ্পে পরিনত হয়েছে তার পরিবর্তে স্বস্তি ও শান্তিময় বেহেশতে রূপান্তরিত হবে।
২. মানব জীবনে ধন সম্পদ দেহের রক্ত সাদৃশ্য রক্তে সঞ্চালন হ্রাস পেলে যেমনিভাবে মানব জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অনেক সময় হৃদরোগ, আক্রান্ত হয়ে মানুষের আকস্মিক মৃত্যু হয়ে যায়। ঠিক তদ্রূপ সম্পদের আবর্তন যদি সমাজে ন্যায়ানুগ ভাবে না হয়, তবে সমাজ জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে এবং কখনো কখনো হৃদয় স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে ।
৩. স্বজাতিদের সাথে সহিষ্ণুতা মানবতার সর্বোত্তম গুন। নিজের সমজাতীয় মানুষদের অসহায়ত্ব, দারিদ্র, নিঃস্ব অবস্থা, অভাব অনটন, সংকীর্ণতা ও মর্মান্তিক করুন অবস্থা দেখেও যার হৃদয় গলে না সে মানুষ নয় বরং চতুষ্পদ জন্তু। ৪. সম্পদ যেমনিভাবে মানুষের জীবনের ভিত্তি। তদ্রূপ মানব চরিত্র গঠন এবং তা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সম্পদের গভীর সম্পর্ক ও প্রভাব রয়েছে। কখনো সম্পদ না থাকার কারণে মানুষ অনেক অমানবিক কাজ করে বসে। সমাজের অন্যায় অবিচার দেখে সমাজিক নিরাপত্তায় আক্রমন করে।কখনো চুরি, ডাকাতি, মদ, জুয়ার মত মারাত্মক ঘৃণিত কাজ শুরু করে। কখনো বা দারিদ্রের কষাগাতে পিষ্ট হয়ে নিজের জীবনকে গুডবাই জানিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আবার কখনো পেটের দোজখ পুরা করার জন্য নিজের মান ইজ্জত (সতীত্ব) বিকিয়ে দেয় কখনো দারিদ্র থেকে মুক্তির জন্য নিজের দ্বীন- ঈমান পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়। এজন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, দারিদ্রতা মানুষকে প্রায় কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। দারিদ্রতা থেকেই সমাজে এসব অসামাজিক ও অমানবিক কার্যকলাপের জন্ম হয় এবং কখনো তা বহু পরিবার ধ্বংস করে দেয়। এর সঠিক সমাধান তালাশ করা সমাজের সকলের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা সাদাকা- যাকাতের মাধ্যমে এসব খারাপ কার্যকলাপের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। ৫. এছাড়াও ধন-সম্পদ কেন্দ্রিক বহু চারিত্রিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়। ধনীর দুলালরা যা ইচ্ছে তাই করে চলে এবং তাদের থেকে যতসব অনৈতিক কার্যকলাপ প্রকাশ পায়, তা বর্ণনা করার অবকাশ রাখেনা । সাদাকা-যাকাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা চারিত্রিক অবক্ষয় ও ত্রুটি সমূহের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। যেন তারা (ধনীরা) দারিদ্রদের অভাব ও প্রয়োজন সমূহ উপলব্ধি করতে পারে এবং অসহায়দের অবস্থা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে । ৬. যাকাত- সাদাকার অন্যতম একটি উপকারীতা হলো, মানুষের উপর যে সব বিপদ- আপদ আসতে থাকে, যাকাতের মাধ্যমে তা দূর হয়ে যায়। এ সংক্রান্ত বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, সাদাকার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয় এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ নিরাপদ থাকে ।
৭. যাকাতের আরেকটি ফায়দা হলো, এর দ্বারা সম্পদে বরকত আসে যাকাত সাদাকার ব্যাপারে কৃপণতা করলে আসমানী বরকত সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। হাদীসে বর্ণিত আছে, যে জাতি যাকাত বন্ধ করে দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর দুর্ভিক্ষ অনাবৃষ্টি চাপিয়ে দেন এবং আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন।
তথ্যসূত্রঃ
যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি।
লেখকঃমাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী