ইবাদত

যাকাতের নেসাব সংক্রান্ত ১৪ টি মাসআলা।

পুরাতন ও নতুন পরিমাপে যাকাত : ০১. মাসআলা : রূপার নেসাব ২০০ দিরহাম তথা ৫২.৫০ (সাড়ে রায়ান্ন) তোলা। আর স্বর্ণের নেসাব ৭.৫০ (সাড়ে সাত) তোলা। অলংকার যদি স্বর্ণ- রূপা উভয়টার সমন্বিত হয় তবে স্বর্ণের অংশের মূল্য নির্ধারণ করতঃ রূপার হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। আর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ তথা ২.৫% হারে যাকাত দেওয়া ওয়াজিব। (হেদায়া : ১/১৭৭, ফাতাওয়া দারুল উলূম : ৬/৪৩)

০২.মাসআলা : স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত তোলা (৭.৫০)। (বর্তমান পরিমাপে ৮৭.৪৮৯গ্রাম) এটি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার নিকট শুধুমাত্র স্বর্ণ থাকে। রূপা, ব্যবসার মাল কিংবা নগদ অর্থ না থাকে। এমনিভাবে রূপার নেসাব সাড়ে বায়ান্ন তোলা ৫২.৫০। (বর্তমান পরিমাপে ৬১২.৩৬গ্রাম) এটি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার নিকট শুধু রূপা থাকে। স্বর্ণ, ব্যবসার মাল অথবা নগদ অর্থ একেবারেই থাকে না।

যদি কিছু স্বর্ণ কিছু রূপার সাথে অন্য কোন প্রকার মালও থাকে। পৃথক পৃথকভাবে কোনোটার নেসাব পূর্ন না হয়, তবে সবগুলোর মূল্য একত্রে যোগ করলে (৮৭.৪৭৯) গ্রাম অথবা (৬১২.৩৬) গ্রাম রূপার পরিমাণ হলে যাকাত ফরজ হবে।

কখন নেসাবের মালিক হয়েছে জানা না থাকলে ০৩. মাসআলা : প্রবল ধারনার ভিত্তিতে যখন নেসাবের মালিক হয়েছে বলে মনে হবে, তখন থেকেই যাকাত আদায় করতে হবে এবং বিগত বছরগুলোর যাকাতও দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রবল ধারনার উপর আমল করবে অথবা কোন আকার ইঙ্গিতে তা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। সর্বোপরি সতর্কতামূলক অতিরিক্ত সময় ধরে নিবে।

উদাহরণস্বরূপ যদি আড়াই বছরের ধারনা হয়, তবে তিন বছরের যাকাত আদায় করবে। কেননা তুলনামূলক কিছু বেশি দেওয়া উত্তম। এতে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে কম হলে শাস্তির ভয় আছে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম ৬/৪৪)

নগদ টাকার যাকাতের নেসাব ০৪.মাসআলা : যিনি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার ক্রয়মূল্য পরিমাণ অর্থের মালিক হবেন, তিনি নেসাবের মালিক বলে বিবেচিত হবেন।
তখন সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করা জরুরী। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৩/৫০) ০৫.মাসআলা : কারো যদি ৫০.০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকা এবং ছয় তোলা স্বর্ণ থাকে, তখন উক্ত অবস্থায় স্বর্ণ এবং টাকার যাকাত ওয়াজিব হবে। বছর শেষে স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ করে নগদ অর্থের সাথে মিলিয়ে যৌথ পরিমানের যাকাত আদায় করতে হবে। (আপকে মাসায়েল : ৩/৩৫৬)

স্বর্ণের অসম্পূর্ণ নেসাবের যাকাত ০৬.মাসআলা : কারো কাছে যদি শুধুমাত্র স্বর্ণ থাকে। রূপা, নদগ টাকা কিংবা ব্যবসার পণ্য না থাকে, তবে নেসাবের তথা সাড়ে সাত তোলা (৮৭.৪৭৯ গ্রাম) কম স্বর্ণে যাকাত ওয়াজিব হবে না ।(আপকে মাসায়েল : ৩/৩৫৯)

নেসাবের কম স্বর্ণ- রূপার বিধান ০৭.মাসআলা : যদি কোন মহিলার রৌপ্যালংকার ও কিছু স্বর্ণালংকার থাকে, কিন্তু উভয়টাই নেসাবের চেয়ে কম। এ ক্ষেত্রে যাকাতের বিধান হলো উভয়ের সম্মিলিত মূল্যের হিসাবে যাকাত ওয়াজিব হবে। যেমন : স্বর্ণকে রূপার মূল্যে হিসাব করলে যদি রূপার নেসাব পূর্ণ হয়, তাহলে যাকাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (আল বাহরুর রায়েক : ২/২৩)

পণ্যের মূল্য বেড়ে নেসাব পরিমান হলে ০৮. মাসআলা : কারো কাছে কিছু ব্যবসার মাল আছে, যার মূল্যের মান নেসাব থেকে কম। কিছু দিন পর উক্ত পণ্যের মূল্য যদি বেড়ে নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে মূল্য বৃদ্ধির সময় থেকে যাকাত বর্ষের গণনা আরম্ভ হবে। ০৯.মাসআলা : বছরের মাঝে বস্তুর যে লাভ অর্জিত হয়, তা মূল বস্তুর সাথে মিলিয়ে বছর শেষে লাভ- আসলের সম্মিলিত পরিমাণের যাকাত আদায় করতে হবে। লাভের উপর বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। (ইসমুল ফিকহ ৪/৩০)

জরুরতে আসলীয়া তথা মৌলিক প্রয়োজন কী? ১০. মাসআলা : মৌলিক প্রয়োজনের তথা জীবন ধারণের জন্য যে সব বস্তু ও উপকরণ আবশ্যক, তার অতিরিক্ত সম্পদ কারো নিকট থাকলে যাকাত ওয়াজিব হয় । আর এ সব নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু সমূহে যাকাত আসে না । যেমন : বাসস্থান, প্রয়োজনীয় কাপড়- চোপড়, ঘরোয়া আসবাব- পত্র,আরোহনের যানবাহন, গাড়ী, মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, সেবায় নিয়োজিত দাস, ব্যবহৃত হাতিয়ার ইত্যাদিতে যাকাত ওয়াজিব হয় না। তদ্রুপভাবে,খাদ্যদ্রব্য,সাজসজ্জা ও বিলাসিতার জন্য গ্রহণকৃত বস্তু সমূহেও যাকাত আবশ্যক হয় না। হীরা- জহরত, মনি- মানিক্য, ইয়াকুত, যমরদ ইত্যাদি পাথরসমূহ যত মূল্যবানই হোক না কেন, ব্যবসার উদ্দেশ্য না হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না। প্রয়োজনে ব্যয়ের উদ্দেশ্যে কিছু মুদ্রা ক্রয় করলে তাতেও যাকাত ওয়াজিব হবে না। এমনিভাবে আলেমদের কিতাব সমূহ যা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য হয়, এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের পেশা সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারের উপরও যাকাত ওয়াজিব নয়। (এসবগুলোই মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভূক্ত) (ফাতাওয়া আলমগীরী উর্দু : ৪/৭)

নেসাবের মালিক থেকে জোরপূর্বক যাকাত উসুল করা। ১১. মাসআলা : যাকাত, সাদাকাতুল ফিতর ও কুরবানীর চামড়া সমাজের প্রভাবশালী কর্তৃক জোরপূর্বক আদায় করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ১১/১৪৫)

নেসাবের মালিক দেউলিয়া হয়ে গেলে ১২. মাসআলা : কারো সম্পদের বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যাকাত আদায়ের পূর্বেই যদি চুরি হয়ে যায়,কিংবা অন্য কোনভাবে মাল হাতছাড়া হয়ে যায়, তবে যাকাত মাফ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে ব্যক্তি নিজেই নিজের সম্পদ কাউকে দিয়ে দিলে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পদ ধ্বংস করে দিলে যে পরিমাণ যাকাত এসেছে তা মাফ হবে না; বরং তা দেওয়া জরুরী।(হেদায়া ১/১৭৩)

১৩. মাসআলা : যৌথ মালিকানাধীন বস্তু বন্টন করলে যদি প্রত্যেক অংশীদারের নেসাব পরিমাণ হয়, তবে যাকাত ফরজ হবে। নতুবা যাকাত ফরজ নয়।(আপকে মাসায়েল :৩/৩৪৯)

অন্যের নিয়ন্ত্রনে থাকা মালের যাকাত ১৪. মাসআলা : মাল- সম্পদ নিয়ন্ত্রনে আসার পর এক বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত আদায় করবে। বিগত সময়ের যাকাত আবশ্যক নয় । (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৮)

তথ্যসূত্রঃ

যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি।

লেখকঃমাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *