ইবাদত

যাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাত সম্পর্কিত ২০ টি মাসআলা।

ইমাম সাহেবকে যাকাত প্রদান। ০১. মাসআলা : যদি ইমাম সাহেব গরীব হয়, যাকাতের নেসাব পরিমাণ মালের মালিক না হয়, অথবা ঋণী হয় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া এবং ইমামের জন্য যাকাত নেওয়া জায়েয হবে। আর এ অবস্থায় কমিটি এবং নামাযিদের জন্য উচিত ইমামকে অন্যদের উপর বেশী প্রাধান্য দেওয়া। তাহলে সে জীবিকা নির্বাহ থেকে চিন্তামুক্ত হয়ে দ্বীনের কাজ করবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৮৭)

০২. মাসআলা : আর যদি ইমাম গরীব না হয়; বরং নেসাব পরিমান মালের মালিক হয়। তাহলে জেনে শুনে এমন ইমামকে যাকাত দেওয়া এবং ইমামের জন্য যাকাত নেয়া জায়েয হবে না। (শামী : পৃ: ৩৫২)

০৩. মাসআলা : যাকাত এবং ওয়াজিব সদকার টাকা ইমাম সাহেবকে ইমামতির বিনিময়ে এবং বেতন হিসেবে দেওয়া জায়েজ নেই। কেননা যাকাতের টাকা বিনিময় ছাড়া (এমনিতেই) মালিক বানিয়ে দেয়া শর্ত। সুতরাং কোনো জিনিসের বিনিময়ে দেওয়া হলে যাকাত আদায় হবে না ।(তাতারখানিয়া : ২/২৭৮)

০৪. মাসআলা : কিছু কিছু অঞ্চলে মসজিদের ইমাম সাহেবকে সর্বাবস্থায় যাকাতের উপযুক্ত মনে করে। এটাও ঠিক নয়, এজন্যই যাকাতের উপযুক্ত হলে যাকাত দিবে অন্যথায় যাকাত দিবে না; বরং যাকাত এর পরিবর্তে নফল সাদাকা এবং হাদিয়া তোহফা দ্বারা সাহায্য করবে। (আলমগীরী : ১/১৮৯)

প্রাপ্তবয়স্ক তালেবে ইলমকে যাকাত প্রদান। ০৫. মাসআলা : যদি কোনো তালেবে ইলম প্রাপ্তবয়স্ক হয়, কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়, যদিও তার পিতা- মাতা মালদার তথা ছাহেবে নেসাব হয়, তখন এমন তালেবে ইলমকে যাকাত দেওয়া জায়েয। আর যদি তালেবে ইলম প্রাপ্তবয়স্ক এবং নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। (ফাতায়া সিরাজিয়া : ২৮)

ছেলের স্ত্রীকে যাকাত প্রদান। ০৬. মাসআলা : যদি ছেলের স্ত্রী গরীব হয়, নেসাব পরিমাণ মালের মালিক না হয়, তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। (হিন্দিয়া : ১/১৯০)

বে- নামাজীকে যাকাত দেওয়া। ০৭.মাসআলা : বে-নামাযী দরিদ্র এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার দ্বারা যাকাত আদায় হয়ে যাবে, তবে দ্বীনদার, নামাযী দরিদ্র এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার দ্বারা যে পরিমাণ সওয়াব অর্জন হবে তা বে- নামাযী ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার দ্বারা অর্জন হবে না। এই জন্য দ্বীনদার নামাযী গরীব ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। (হিন্দিয়া : ১/৮৭)

যাকাতের টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করে গরীবকে দেওয়া। ০৮. মাসআলা : যাকাতের টাকা দ্বারা ঘর নির্মাণ করে কোনো যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার দ্বারা যাকাত আদায় হয়ে যাবে, তবে শর্ত হলো গরীবকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার পর যাকাত দেওয়া ব্যক্তির জন্য এই ঘরের মধ্যে কোনো প্রকারের হক এবং সম্পর্ক বাকি থাকবে না। (আলমগীরী : ১/২৭০)

স্বামী অথবা স্ত্রীর মাকে যাকাত প্রদান। ০৯. মাসআলা : যদি স্বামী অথবা স্ত্রীর মা গরীব হয়, নেসাব পরিমাণ মালের মালিক না হয়, তখন তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। (শামী: ২/৩৪৬)

শ্বশুরকে যাকাত দেওয়া ১০. মাসআলা : যদি শ্বশুর গরীব হয়, নেসাব- এর মালিক না হয়,তখন তাকেও যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। (তাতারখানিয়া : ২/২৭৯)

স্বামীকে যাকাত দেওয়া। ১১. মাসআলা : যদি স্ত্রী মালদার আর স্বামী গরীব হয়, তখন মালদার স্ত্রীর জন্য স্বামীকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। অবশ্য এমন অবস্থায় যদি স্ত্রী স্বামীর উপর আস্থাশীল হয়, তাহলে স্ত্রীর উচিত আখলাকের দৃষ্টিকোন থেকে নিজ স্বামীর সহযোগীতা করা। অথবা নিজ মাল দ্বারা স্বামীকে কোনো কারবার করার অনুমতি দেওয়া। কিন্তু যাকাতের টাকা স্বামীকে দিবে না। (বাদায়েউল সানায়ে : ২/৪৯,৫০)

১২. মাসআলা : যেহেতু স্বামী এবং স্ত্রীর মুনাফা ভ্যসগতভাবে মিলিত এবং একে অন্যের জিনিসপত্র দ্বারা উপকৃত হয়, এ জন্য স্বামী এবং স্ত্রীর আপসের মধ্যে একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। (তাতারখানিয়া : ২/271)

ফকীর ভেবে যাকাত দেওয়ার পর জানল যে, সে সম্পদশালী ১৩. মাসআলা : যদি কোন ব্যক্তিকে ফকীর এবং যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত মনে করে যাকাত দিয়ে দেয়, পরে জানল যে, সে যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ছিল না; বরং সম্পদশালী ছিল। তখন আদায়কারীর যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তাকে দ্বিতীয়বার যাকাত দিতে হবে না। (হিন্দিয়া : ১/১৮৯-৯০)

কাদিয়ানীকে যাকাত দেওয়া ১৪. মাসআলা : কাদিয়ানী কাফের এবং অন্যান্য কাফের থেকেও নিকৃষ্ট এবং আস্তিনের সাপ। আর কাফেরকেও যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। কাদিয়ানীকে যাকাত দেওয়া কঠিন গুনাহ এবং যাকাতও আদায় হবে না; বরং তাকে কোন প্রকারেরই সাদাকা দেওয়া জায়েয হবে না । (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৮৮)

কাফেরদের ভুলক্রমে যাকাত দিয়ে দিলে। ১৫. মাসআলা : যদি কোন ব্যক্তি কাউকেও গরীব এবং যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত মনে করে যাকাত দিয়ে দেয়, পরে জানতে পারে যে, সে জিম্মি নয় কাফের, তাহলে যাকাত আদায় হবে না। যাকাত দ্বিতীয়বার আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী : ২/৩৫২)

মালদারের স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া ১৬. মাসআলা : যদি মালদার ব্যক্তির স্ত্রী গরীব হয়, এবং যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত হয়, আর স্বামী তার খরচ পাতি বহন না করে, তখন তাকে যাকাতদেওয়া জায়েয আছে। (তাতারখানিয়া : ২/২৭৩)

মুরতাদকে যাকাত দেওয়া। ১৭.মাসআলা : যে মুসলমান ইসলামের সীমানা থেকে বের হয়ে মুরতাদ হয়ে আর যদি মহিলা হয়, তাহলে তাকে তাওবা না করা অবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত বন্দী করে রাখবে। এই জন্য মুরতাদকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। (ফাতাওয়ায়ে শামী : ২/৩৫২)

তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া। ১৮. মাসআলা : তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। যদি তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী গরীব এবং যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত হয়। (হিন্দিয়া : ১/১৭০)

মুয়াজ্জিনকে যাকাত দেওয়া। ১৯. মাসআলা : যদি মুয়াজ্জিন গরীব হয়, নেসাবের মালিক না হয়, অথবা ঋণী হয়, তখন তাকে গরীব এবং যাকাতের উপযুক্ত মনে করে যাকাত দেওয়া এবং মুয়াজ্জিনের জন্য যাকাত নেওয়া জায়েয আছে। (আলমগীরী : ১/১৮৯)

২০.মাসআলা : মুয়াজ্জিনকে বিনিময় হিসাবে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই। বিনিময়ের শর্ত ছাড়া গরীব হওয়া অবস্থায় যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত মনে করে যাকাত দেওয়া জায়েয হবে। (আল বাহরুর রায়েক : ২/২৪০)

তথ্যসূত্রঃ

যাকাত আদায় করি, দোযখ থেকে বাচি।

লেখকঃমাওলানা মুমিনুল হক জাদীদ, ফেনী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *