ইবাদত

যুহদ বা দুনিয়া বিমুখতার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য

যুহদ বা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ইসলামি আধ্যাত্মিকতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আত্মশুদ্ধির মাধ্যম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ। দুনিয়ার মোহ ও বিলাসিতা থেকে বিরত থেকে আখিরাতকে মুখ্য করার নির্দেশ কুরআন ও হাদিসে বহুবার এসেছে।

১. কুরআনের আলোকে যুহদের মাহাত্ম্য

(ক) দুনিয়ার মোহে পড়ে না যাওয়ার নির্দেশ

اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا۟ بِٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ إِلَّا مَتَـٰعٌ

“আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা সংকীর্ণ করেন। তারা পার্থিব জীবনে আনন্দিত হয়, অথচ পার্থিব জীবন পরকালের তুলনায় শুধুমাত্র উপকরণমাত্র।”(সূরা আর-রাঅদ: ২৬)

(খ) যারা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত নয়, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন

ذَٰلِكَ ٱلدَّارُ ٱلْـَٔاخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا فَسَادًۭا ۚ وَٱلْعَٰقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ

“এই পরকালীন আবাস আমি তাদের জন্য নির্ধারণ করি, যারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না এবং সৎ পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্যই।”(সূরা আল-কাসাস: ৮৩)

(গ) প্রকৃত সফলতা আখিরাতেই

بَلْ تُؤْثِرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا ﴿١٦﴾ وَٱلْـَٔاخِرَةُ خَيْرٌۭ وَأَبْقَىٰ

“তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছো, অথচ আখিরাতই উত্তম ও স্থায়ী।”(সূরা আল-আলা: ১৬-১৭)

(ঘ) দুনিয়া ধোঁকার বস্তু

وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَآ إِلَّا مَتَـٰعُ ٱلْغُرُورِ

“এই দুনিয়ার জীবন তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)

২. হাদিসের আলোকে যুহদের মাহাত্ম্য

(ক) দুনিয়ার প্রতি যুহদ অবলম্বন করো, তাহলে আল্লাহ ও মানুষ ভালোবাসবে

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

“ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللَّهُ، وَازْهَدْ فِيمَا فِي أَيْدِي النَّاسِ يُحِبَّكَ النَّاسُ”

“দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর মানুষের হাতে যা আছে, তার প্রতি অনাসক্ত থাকো, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে।” (ইবনু মাজাহ: ৪১০২, হাসান হাদিস)

(খ) আল্লাহর কাছে দুনিয়ার মূল্যহীনতা

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

“لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِندَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ، مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ”

“যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহর কাছে মশার ডানার সমানও হতো, তবে তিনি কোনো কাফিরকে এক চুমুক পানীয়ও দিতেন না।” (তিরমিজি: ২৩২০, সহিহ হাদিস)

(গ) পরহেজগারদের জন্য দুনিয়া কারাগার

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,“الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ”

“দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য কারাগার এবং কাফিরের জন্য জান্নাত।” (মুসলিম: ২৯৫৬)

(ঘ) যুহদ অবলম্বনকারীদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল, “আমাকে এমন এক কাজ বলুন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষও আমাকে ভালোবাসবে?”

তিনি বলেন,

“ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللَّهُ، وَازْهَدْ فِيمَا فِي أَيْدِي النَّاسِ يُحِبَّكَ النَّاسُ”

“দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন, এবং মানুষের হাতের ধন-সম্পদের প্রতি লোভ করো না, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে।” (ইবনু মাজাহ: ৪১০২, হাসান হাদিস)

৩. সাহাবা ও সালাফদের যুহদ

(ক) উমর (রা.)-এর সরল জীবনযাপন

একবার ফারুকে আজম উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন, নবীজি একটি মাদুরের ওপর ঘুমিয়ে আছেন এবং তার শরীরে মাদুরের দাগ পড়ে গেছে। উমর (রা.) কেঁদে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! রোম ও পারস্যের বাদশাহরা তো রাজকীয় জীবন যাপন করে, আর আপনি এত কষ্টে থাকেন!”

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, “أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ لَهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الْآخِرَةُ؟”

“তুমি কি রাজি নও যে, তাদের জন্য থাকবে দুনিয়া, আর আমাদের জন্য থাকবে আখিরাত?” (বুখারি: ৪৯১৩, মুসলিম: ১৪৭৯)

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *