ইবাদত

জাহান্নামীদের লেবাস ও পোষাক

জাহান্নামীদের লেবাস ও পোষাক

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান- فَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا قُطِعَتْ لَهُمْ ثِيَابُ مَنْ نَّارٍ আর যারা কাফের, তাদের জন্য আগুনের কাপড় বানানো হবে। অর্থাৎ, তাদের দেহে আগুন এমনভাবে জড়িয়ে যাবে, যেমন পোষাক দেহকে আচ্ছাদিত করে রাখে ।

ফায়দা : হযরত ইবরাহীম তাইমী (রহঃ) যখন উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করতেন, তখন বলতেন, আল্লাহ্ তা’আলার জাত কতই না পবিত্র, যিনি আগুনের বস্ত্র তৈরী করে রেখেছেন ।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, কাফেরদের জন্য আগুনের কাপড় প্রস্তুত করা হবে। এমন কি তিনি তাদের জামা, আস্তীন ও আবা ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করেছেন।

টাখনুর নীচে যারা কাপড় ঝুলায় তাদের আযাব

হাদীস ঃ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান—مَنْ وَطِئَ إِزَارَهُ خَيْلَاءَ وَطِئَهُ فِي النَّار যে ব্যক্তি অহংকার বশতঃ আপন লুঙ্গিকে টাখনুর নীচে ঝুলাবে, তাকে জাহান্নামের আগুনে পদদলিত করা হবে । —মুসনাদে আহমাদ

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে— مَا تَحْتَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الْإِزارِ فَفِي النَّارِ

লুঙ্গির যে অংশটুকু টাখনুর নীচে ঝুলে থাকবে দেহের ঐ অংশ জাহান্নামে যাবে। —বুখারী

হাদীস ঃ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান—

أَهْوَنُ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ فِي قَدَمَيْهِ نَعْلَانِ مِنْ نَارٍ يُغْلَى فِيْهِمَا دِمَاغُهُ

জাহান্নামীদেরকে সর্বনিম্ন আযাব দেয়া হবে আগুনের জুতা পরিধান করিয়ে। তা পরিধান করার দ্বারা মাথার মস্তক টগবগ করতে থাকবে ।

জাহান্নামীদের অলংকার

হাদীস ঃ হযরত বুরাইদা (রহঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে লোহার আংটি পরিধেয় অবস্থায় দেখতে পেলেন । হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন— مَالِي أَرى عَلَيْكَ حُلْيَةَ أَهْلِ النَّارِ কি ব্যাপার আমি তোমার হাতে জাহান্নামীদের অলংকার দেখছি? —নাসায়ী ও তিরমিযী

এ হাদীস দ্বারা দু’টি কথা প্রমাণিত হয়। (১) জাহান্নামীদেরকে লোহার পোষাক পরিধান করানো হবে। (২) পার্থিব জীবনে অলংকার হিসেবে লোহা ব্যবহার করা দোযখের আযাবের কারণ।

হাদীস ঃ হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন, নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— إِنَّ أَوَّلَ مَنْ يُكْسَى حُلَّهُ مِنَ النَّارِ إِبْلِيسُ يَضَعُهَا عَلَى حَاجِبِهِ وَ يَسْحَبُهَا مِنْ خَلْفِهِ ذُرِّيَّتُهُ وَ هُوَ يَقُوْلُ يَا ثَبُوْرُ وَ هُمْ يُبَادُونَ يَا ثَبُوْرَةُ حَتَّى يَقِفُوْا عَلَى النَّارِ فَيَقُولُ يَا ثَبُوْرَةُ وَ يَقُولُونَ يَاثَبُوْرَهُمْ فَيُقَالُ لَا تَدْعُوا الْيَوْمَ ثَبُوْرًا وَاحِدًا وَادْعُوْا تُبُوْرًا –

আগুনের পোষাক সর্বাগ্রে যাকে পরিধান করান হবে, সে হল ইবলিস শয়তান। যে ঐ পোষাক আপন চোখের ভ্রুতে ঝুলিয়ে রাখবে তা যমীনে হেচড়াতে থাকবে। তার পেছনে তার বংশধরেরা চলতে থাকবে। ইবলিস বলতে থাকবে, হায় আমার ধ্বংস, যদি মরে যেতাম। অনুরূপ তার বংশধর তথা চেলাপেলারাও বলতে থাকবে, হায়! আমাদের ধ্বংস যদি আমরা মরে যেতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, শুধু একটি মউতকেই ডেক না; বরং অসংখ্য মউতকে ডাকতে থাক, (কোন কাজে আসবে না)।

হাদীস ঃ হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন, হযরত জিব্রাঈল (আঃ) নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলেন— وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَوْ أَنَّ ثَوْبًا مِنْ ثِيَابِ النَّارِ عُلِّقَ بَيْنَ السَّمَاءِ وَ الْأَرْضِ لَمَاتَ مَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْ حَرِهِ –

ঐ সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে হকের সাথে প্রেরণ করেছেন, জাহান্নামের একটি মাত্র কাপড় এ আসমান ও যমীনের মধ্যখানে লটকিয়ে দেয়া হয়, তাহলে পৃথিবীবাসী সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

জাহান্নামীদের জামা

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান—

وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَيذٍ مُقَرَّنِيْنَ فِي الْأَصْفَادِ * سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانِ وَتَغْشَى وُجُوْهَهُمُ النَّارُ

আপনি সেদিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃংখলাবদ্ধ দেখবেন। তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমণ্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে। —সূরা ইবরাহীম-৫০

ফায়দা ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, এখানে কাতিরান (আলকাতরা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল গলিত তাম্রবিশেষ ।

হযরত ইকরিমা (রাযিঃ) বলেন, তা দ্বারা জ্বলন্ত পিতল উদ্দেশ্য। হযরত শাইখুল হিন্দ (রহঃ) এর অনুবাদ করেছেন ‘গন্ধক’ বলে । হযরত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) অভিধান ও চিকিৎসা শাস্ত্রের কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছেন, কাতিরান হল, চীড় বৃক্ষের তৈল বিশেষ।

যেসব নারী বিলাপ করে কান্নাকাটি করে

হাদীস ঃ হযরত আবু মালেক আশআরী (রাযিঃ) বলেন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- النَّابِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَ عَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ فَطِرَانِ وَ دَرْعُ مِنْ جَرْبٍ –

যেসব নারীরা বিলাপ করে কান্না করে, যদি তারা তাদের মৃত্যুর পূর্বেই তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিবসে তারা এ অবস্থায় থাকবে যে, তারা গন্ধকের জামা ও চুলকানীওয়ালা ওড়নাতে আচ্ছাদিত থাকবে। —মুসলিম, ইবনে মাযাহ্

হাদীস ঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- النَّابِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ أَنْ تَمُوْتَ فَإِنَّهَا تُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سَرَابِيْلُ مِنْ قَطِرَانِ يُغْلَى عَلَيْهَا بِدُرُوعٍ مِنْ لَهَبِ النَّارِ –

বিলাপকারী নারীগণ যদি মউতের পূর্বেই তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিবসে তাদেরকে এমনভাবে উঠানো হবে যে, তখন তাদের দেহে থাকবে গন্ধকের জামা, যার উপর থাকবে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের উড়না । —ইবনে মাযাহ্

উড়না ও বিছানা

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— لَهُمْ مِنْ جَهَنَّمَ مِهَادُ وَ مِنْ فَوْقِهِمْ غَوَاشُ তাদের জন্য থাকবে আগুনের বিছানা, আর তাদের উপরের আচ্ছাদনও থাকবে আগুনের । –সূরা আ’রাফ-৪১

অন্যত্র এরশাদ ফরমান— وَجَعَلْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ حَصِيرًا আর আমি কাফেরদের জন্য জাহান্নামকে জেলখানা স্বরূপ তৈরী করে রেখেছি । —সূরা ইসরা-৮

ফায়দা : এ আয়াতের তাফসীরে হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, কাফেরদের জন্য জাহান্নামই হবে তাদের উড়না ও বিছানা ।

হযরত হাউশাব (রহঃ) বলেন, হযরত হাসান বসরী (রহঃ) যখন দোযখ-বাসীদের কথা উল্লেখ করতেন, তখন এভাবে উল্লেখ করতেন, জাহান্নামীদের জন্য তাদের দেহ অনুপাতে আগুনের জুতা, গন্ধকের জামা, আগুনের খাদ্য সামগ্রি, আগুনের ফুটন্ত পানি, আগুনের বিছানা, আগুনের উড়না এবং আগুনের ঘর-বাড়ী থাকবে। তারা অনেক বড় ঘরে থাকবে, আর সেটাই হবে তাদের আযাবের স্থল । যে আযাব তাদেরকে বার বার ভোগ করতে থাকবে, গলাতে থাকবে এবং তাদের হাড়সমূহকে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে থাকবে ।

হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, এ উম্মতের শুরু লগ্নে এক লোক এমন ছিল, যখন সে কোন কবরস্থানে প্রবেশ করত, তখন কবরবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলত, হে কবরের অধিবাসীরা! পৃথিবীতে অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করার পর এখন তোমাদের গলায় আগুনের বেড়ি পরানো হচ্ছে। পৃথিবীতে সুতী ও উলের তুলতুলে ও মোলায়েম পোষাক পরিধান করার পর এখন তোমাদেরকে গন্ধকের পোষাক পরিধান করানো হচ্ছে। আগুন দিয়ে নানা ধরনের পোষাক তোমাদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ও তোমাদের পরানো হচ্ছে। পৃথিবীতে চাকর-চাকরানীর ভোগ-বিলাস এবং স্ত্রীর সাথে আলিঙ্গন ও চুম্বন করার পর এখন তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে শয়তানের সাথে শৃংখলে আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। —দাউদ ইবনে মিহবার

হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ (রহঃ) বলেন, জাহান্নামীরা চিরকালই জাহান্নামে থাকবে। না তারা শান্তি পাবে, না ঘুমাতে পারবে, না তাদের মৃত্যু আসবে। তারা আসন গাড়বে আগুনের উপর। পান করবে জাহান্নামীদের রক্ত ও পুঁজ। অগ্নি নির্মিত বৃক্ষ থেকে ফল ভক্ষণ করবে। তাদের উড়না বিছানাও হবে আগুনের। তাদের জামা-কাপড় হবে গন্ধক নির্মিত। আগুন তাদের মুখমণ্ডলকে আবৃত করে রাখবে । জাহান্নামীরা সকলেই থাকবে এক এক ফেরেশতাদের হাতে ধারণ কৃত অবস্থায়। ফেরেশতারা তাদেরকে সামনে-পিছে টানা-হেচড়া করতে থাকবে। তাদেরই পুঁজ যখন তাদের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকবে, তখন সেগুলোই তারা পানীয় হিসেবে পান করবে। হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ (রহঃ) এসব বলে কেঁদে দিলেন। এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে গেলেন। এ হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত বকর ইবনে খুনায়েস (রহঃ)ও কেঁদে দিয়েছিলেন। এমনকি তিনি উঠে চলে গিয়েছেন, সামনে আর কিছু বলার সাহস পান নি। এসব শুনে হযরত মুহাম্মাদ ইবনে জাফর (রহঃ)ও খুব ক্রন্দন করলেন। —ইবনে আবিদ্দুয়া

হযরত হাদ্দাব (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া (রহঃ) এর জন্য চিকিৎসার উদ্দেশ্যে একটি কাপড় আনা হল । যাতে তাকে তা পরিধান করিয়ে দেয়া হয় । তিনি তার মাকে বললেন, এ জামা আমাকে পরিধান করিয়ে দিন। মা বললেন, জান কি এটা কি দিয়ে তৈরি? তিনি বললেন, চুল দিয়ে তৈরি । মা বললেন, তাহলে তো এটা তোমার শরীর খেয়ে ফেলবে। তিনি উত্তরে বললেন, আম্মাজান! আপনি যখন আমার সামনে জাহান্নামের অধিবাসীদের কথা আলোচনা করেন, তখন তো তা আমার চামড়াসমূহকে গলিয়ে দেয়। ১৬১—ইবনে আবিদ্দুনয়া

হযরত আতা খোরাসানী (রহ.) আপন সঙ্গী-সাথীদেরকে ডেকে ডেকে বলতেন, হে অমুক! হে অমুক! দুনিয়ার এই রাতে এবাদত করা এবং দিনে রোযা রাখা আখেরাতে পুঁজ পান করা ও লোহার হাতুড়ির বাড়ি খাওয়া অপেক্ষা অনেক সহজ । এরপরই তিনি নামাযে মশগুল হয়ে পড়তেন।

তথ্যসূত্র:

বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরীআল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান- فَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا قُطِعَتْ لَهُمْ ثِيَابُ مَنْ نَّارٍ আর যারা কাফের, তাদের জন্য আগুনের কাপড় বানানো হবে। অর্থাৎ, তাদের দেহে আগুন এমনভাবে জড়িয়ে যাবে, যেমন পোষাক দেহকে আচ্ছাদিত করে রাখে ।

ফায়দা : হযরত ইবরাহীম তাইমী (রহঃ) যখন উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করতেন, তখন বলতেন, আল্লাহ্ তা’আলার জাত কতই না পবিত্র, যিনি আগুনের বস্ত্র তৈরী করে রেখেছেন ।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, কাফেরদের জন্য আগুনের কাপড় প্রস্তুত করা হবে। এমন কি তিনি তাদের জামা, আস্তীন ও আবা ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করেছেন।

টাখনুর নীচে যারা কাপড় ঝুলায় তাদের আযাব

হাদীস ঃ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান—مَنْ وَطِئَ إِزَارَهُ خَيْلَاءَ وَطِئَهُ فِي النَّار যে ব্যক্তি অহংকার বশতঃ আপন লুঙ্গিকে টাখনুর নীচে ঝুলাবে, তাকে জাহান্নামের আগুনে পদদলিত করা হবে । —মুসনাদে আহমাদ

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে— مَا تَحْتَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الْإِزارِ فَفِي النَّارِ

লুঙ্গির যে অংশটুকু টাখনুর নীচে ঝুলে থাকবে দেহের ঐ অংশ জাহান্নামে যাবে। —বুখারী

হাদীস ঃ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান—

أَهْوَنُ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ فِي قَدَمَيْهِ نَعْلَانِ مِنْ نَارٍ يُغْلَى فِيْهِمَا دِمَاغُهُ

জাহান্নামীদেরকে সর্বনিম্ন আযাব দেয়া হবে আগুনের জুতা পরিধান করিয়ে। তা পরিধান করার দ্বারা মাথার মস্তক টগবগ করতে থাকবে ।

জাহান্নামীদের অলংকার

হাদীস ঃ হযরত বুরাইদা (রহঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে লোহার আংটি পরিধেয় অবস্থায় দেখতে পেলেন । হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন— مَالِي أَرى عَلَيْكَ حُلْيَةَ أَهْلِ النَّارِ কি ব্যাপার আমি তোমার হাতে জাহান্নামীদের অলংকার দেখছি? —নাসায়ী ও তিরমিযী

এ হাদীস দ্বারা দু’টি কথা প্রমাণিত হয়। (১) জাহান্নামীদেরকে লোহার পোষাক পরিধান করানো হবে। (২) পার্থিব জীবনে অলংকার হিসেবে লোহা ব্যবহার করা দোযখের আযাবের কারণ।

হাদীস ঃ হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন, নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান— إِنَّ أَوَّلَ مَنْ يُكْسَى حُلَّهُ مِنَ النَّارِ إِبْلِيسُ يَضَعُهَا عَلَى حَاجِبِهِ وَ يَسْحَبُهَا مِنْ خَلْفِهِ ذُرِّيَّتُهُ وَ هُوَ يَقُوْلُ يَا ثَبُوْرُ وَ هُمْ يُبَادُونَ يَا ثَبُوْرَةُ حَتَّى يَقِفُوْا عَلَى النَّارِ فَيَقُولُ يَا ثَبُوْرَةُ وَ يَقُولُونَ يَاثَبُوْرَهُمْ فَيُقَالُ لَا تَدْعُوا الْيَوْمَ ثَبُوْرًا وَاحِدًا وَادْعُوْا تُبُوْرًا –

আগুনের পোষাক সর্বাগ্রে যাকে পরিধান করান হবে, সে হল ইবলিস শয়তান। যে ঐ পোষাক আপন চোখের ভ্রুতে ঝুলিয়ে রাখবে তা যমীনে হেচড়াতে থাকবে। তার পেছনে তার বংশধরেরা চলতে থাকবে। ইবলিস বলতে থাকবে, হায় আমার ধ্বংস, যদি মরে যেতাম। অনুরূপ তার বংশধর তথা চেলাপেলারাও বলতে থাকবে, হায়! আমাদের ধ্বংস যদি আমরা মরে যেতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, শুধু একটি মউতকেই ডেক না; বরং অসংখ্য মউতকে ডাকতে থাক, (কোন কাজে আসবে না)।

হাদীস ঃ হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন, হযরত জিব্রাঈল (আঃ) নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলেন— وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَوْ أَنَّ ثَوْبًا مِنْ ثِيَابِ النَّارِ عُلِّقَ بَيْنَ السَّمَاءِ وَ الْأَرْضِ لَمَاتَ مَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْ حَرِهِ –

ঐ সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে হকের সাথে প্রেরণ করেছেন, জাহান্নামের একটি মাত্র কাপড় এ আসমান ও যমীনের মধ্যখানে লটকিয়ে দেয়া হয়, তাহলে পৃথিবীবাসী সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

জাহান্নামীদের জামা

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান—

وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَيذٍ مُقَرَّنِيْنَ فِي الْأَصْفَادِ * سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانِ وَتَغْشَى وُجُوْهَهُمُ النَّارُ

আপনি সেদিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃংখলাবদ্ধ দেখবেন। তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমণ্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে। —সূরা ইবরাহীম-৫০

ফায়দা ঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, এখানে কাতিরান (আলকাতরা) দ্বারা উদ্দেশ্য হল গলিত তাম্রবিশেষ ।

হযরত ইকরিমা (রাযিঃ) বলেন, তা দ্বারা জ্বলন্ত পিতল উদ্দেশ্য। হযরত শাইখুল হিন্দ (রহঃ) এর অনুবাদ করেছেন ‘গন্ধক’ বলে । হযরত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) অভিধান ও চিকিৎসা শাস্ত্রের কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছেন, কাতিরান হল, চীড় বৃক্ষের তৈল বিশেষ।

যেসব নারী বিলাপ করে কান্নাকাটি করে

হাদীস ঃ হযরত আবু মালেক আশআরী (রাযিঃ) বলেন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- النَّابِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَ عَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ فَطِرَانِ وَ دَرْعُ مِنْ جَرْبٍ –

যেসব নারীরা বিলাপ করে কান্না করে, যদি তারা তাদের মৃত্যুর পূর্বেই তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিবসে তারা এ অবস্থায় থাকবে যে, তারা গন্ধকের জামা ও চুলকানীওয়ালা ওড়নাতে আচ্ছাদিত থাকবে। —মুসলিম, ইবনে মাযাহ্

হাদীস ঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- النَّابِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ أَنْ تَمُوْتَ فَإِنَّهَا تُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سَرَابِيْلُ مِنْ قَطِرَانِ يُغْلَى عَلَيْهَا بِدُرُوعٍ مِنْ لَهَبِ النَّارِ –

বিলাপকারী নারীগণ যদি মউতের পূর্বেই তওবা না করে, তাহলে কেয়ামতের দিবসে তাদেরকে এমনভাবে উঠানো হবে যে, তখন তাদের দেহে থাকবে গন্ধকের জামা, যার উপর থাকবে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের উড়না । —ইবনে মাযাহ্

উড়না ও বিছানা

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— لَهُمْ مِنْ جَهَنَّمَ مِهَادُ وَ مِنْ فَوْقِهِمْ غَوَاشُ তাদের জন্য থাকবে আগুনের বিছানা, আর তাদের উপরের আচ্ছাদনও থাকবে আগুনের । –সূরা আ’রাফ-৪১

অন্যত্র এরশাদ ফরমান— وَجَعَلْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ حَصِيرًا আর আমি কাফেরদের জন্য জাহান্নামকে জেলখানা স্বরূপ তৈরী করে রেখেছি । —সূরা ইসরা-৮

ফায়দা : এ আয়াতের তাফসীরে হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, কাফেরদের জন্য জাহান্নামই হবে তাদের উড়না ও বিছানা ।

হযরত হাউশাব (রহঃ) বলেন, হযরত হাসান বসরী (রহঃ) যখন দোযখ-বাসীদের কথা উল্লেখ করতেন, তখন এভাবে উল্লেখ করতেন, জাহান্নামীদের জন্য তাদের দেহ অনুপাতে আগুনের জুতা, গন্ধকের জামা, আগুনের খাদ্য সামগ্রি, আগুনের ফুটন্ত পানি, আগুনের বিছানা, আগুনের উড়না এবং আগুনের ঘর-বাড়ী থাকবে। তারা অনেক বড় ঘরে থাকবে, আর সেটাই হবে তাদের আযাবের স্থল । যে আযাব তাদেরকে বার বার ভোগ করতে থাকবে, গলাতে থাকবে এবং তাদের হাড়সমূহকে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে থাকবে ।

হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, এ উম্মতের শুরু লগ্নে এক লোক এমন ছিল, যখন সে কোন কবরস্থানে প্রবেশ করত, তখন কবরবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলত, হে কবরের অধিবাসীরা! পৃথিবীতে অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করার পর এখন তোমাদের গলায় আগুনের বেড়ি পরানো হচ্ছে। পৃথিবীতে সুতী ও উলের তুলতুলে ও মোলায়েম পোষাক পরিধান করার পর এখন তোমাদেরকে গন্ধকের পোষাক পরিধান করানো হচ্ছে। আগুন দিয়ে নানা ধরনের পোষাক তোমাদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ও তোমাদের পরানো হচ্ছে। পৃথিবীতে চাকর-চাকরানীর ভোগ-বিলাস এবং স্ত্রীর সাথে আলিঙ্গন ও চুম্বন করার পর এখন তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে শয়তানের সাথে শৃংখলে আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। —দাউদ ইবনে মিহবার

হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ (রহঃ) বলেন, জাহান্নামীরা চিরকালই জাহান্নামে থাকবে। না তারা শান্তি পাবে, না ঘুমাতে পারবে, না তাদের মৃত্যু আসবে। তারা আসন গাড়বে আগুনের উপর। পান করবে জাহান্নামীদের রক্ত ও পুঁজ। অগ্নি নির্মিত বৃক্ষ থেকে ফল ভক্ষণ করবে। তাদের উড়না বিছানাও হবে আগুনের। তাদের জামা-কাপড় হবে গন্ধক নির্মিত। আগুন তাদের মুখমণ্ডলকে আবৃত করে রাখবে । জাহান্নামীরা সকলেই থাকবে এক এক ফেরেশতাদের হাতে ধারণ কৃত অবস্থায়। ফেরেশতারা তাদেরকে সামনে-পিছে টানা-হেচড়া করতে থাকবে। তাদেরই পুঁজ যখন তাদের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকবে, তখন সেগুলোই তারা পানীয় হিসেবে পান করবে। হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ (রহঃ) এসব বলে কেঁদে দিলেন। এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে গেলেন। এ হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত বকর ইবনে খুনায়েস (রহঃ)ও কেঁদে দিয়েছিলেন। এমনকি তিনি উঠে চলে গিয়েছেন, সামনে আর কিছু বলার সাহস পান নি। এসব শুনে হযরত মুহাম্মাদ ইবনে জাফর (রহঃ)ও খুব ক্রন্দন করলেন। —ইবনে আবিদ্দুয়া

হযরত হাদ্দাব (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া (রহঃ) এর জন্য চিকিৎসার উদ্দেশ্যে একটি কাপড় আনা হল । যাতে তাকে তা পরিধান করিয়ে দেয়া হয় । তিনি তার মাকে বললেন, এ জামা আমাকে পরিধান করিয়ে দিন। মা বললেন, জান কি এটা কি দিয়ে তৈরি? তিনি বললেন, চুল দিয়ে তৈরি । মা বললেন, তাহলে তো এটা তোমার শরীর খেয়ে ফেলবে। তিনি উত্তরে বললেন, আম্মাজান! আপনি যখন আমার সামনে জাহান্নামের অধিবাসীদের কথা আলোচনা করেন, তখন তো তা আমার চামড়াসমূহকে গলিয়ে দেয়। ১৬১—ইবনে আবিদ্দুনয়া

হযরত আতা খোরাসানী (রহ.) আপন সঙ্গী-সাথীদেরকে ডেকে ডেকে বলতেন, হে অমুক! হে অমুক! দুনিয়ার এই রাতে এবাদত করা এবং দিনে রোযা রাখা আখেরাতে পুঁজ পান করা ও লোহার হাতুড়ির বাড়ি খাওয়া অপেক্ষা অনেক সহজ । এরপরই তিনি নামাযে মশগুল হয়ে পড়তেন।

তথ্যসূত্র:

বই :জাহান্নামের বর্ণনা

মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার

অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *