ইসলাম

যামানাকে গালি দেয়া গুনাহ,এটি মুশরিকদের কাজ

আরব মুশরিকদের একটা বদ অভ্যাস ছিলো, কোনো বিপদ বা পরীক্ষায় পতিত হলে সময়কে গালি দিত।

মহান আল্লাহ পৃথিবীসহ প্রত্যেক গ্রহ-নক্ষত্রের জন্য সময়ের ভিন্ন ভিন্ন সীমা নির্ধারণ করেছেন, তেমনি পরকালের জন্য স্বতন্ত্র সময়কাল সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, “অবিশ্বাসীরা বলে, শুধু দুনিয়ার জীবনই আমাদের জীবন। আমরা এখানেই মরি ও বাঁচি, যমানা ব্যতীত অন্য কিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করতে পারে না”। * [সূরা জাসিয়া-২৪]

সহীহ হাদীসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আদম সন্তান আমাকে পীড়া দেয়। কারণ, সে যুগ বা সময়কে গালি দেয়। অথচ আমিই হচ্ছি [যুগ] সময়। আমিই [সময়ের] রাতদিনকে পরিবর্তন করি’। [সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৪৭২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৪৬]

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা যুগকে গালি দিওনা। কারণ, আল্লাহই হচ্ছেন যামানা’। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৪৬]

টীকা: “আমিই সময়”-এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা হচ্ছেন বিশ্বের সময় জ্ঞাপক শক্তি। বরং এর অর্থ হচ্ছে রাত-দিনের আগমন-নির্গমন, রাতের পেছনে দিন ও দিনের পেছনের রাতের আগমন, ঋতুর পরিবর্তন, সবকিছুই আল্লাহ্ তা’আলার নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনিই সময়কের নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব কিছুই তাঁর হুকুমের অধীন।

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, যুগকে দোষারোপ করা এবং বিপদাপদের সময় জামানাকে গালি দেয়া আরবদের অন্যতম অভ্যাস ছিলো। কেননা যেসব মসিবত ও কষ্ট তাদের গ্রাস করত, সেগুলোকে তারা জামানার দিকেই সম্বোধিত করত। তারা বলত যে তাদের কালের মসিবত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং যুগ তাদের বরবাদ করে দিয়েছে। সুতরাং মসিবতের কবলে পতিত হয়ে যখন তারা উহাকে জামানার দিকে সম্বন্ধ করত, তখন তারা মূলত জামানার স্রষ্টাকেই গালি দিত। কেননা প্রকৃত অর্থে সব বস্তুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। এ জন্যই জামানাকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়;• যুগ বা সময়কে গালি দেয়া নিষেধ।• যুগকে গালি দেয়া আল্লাহকে কষ্ট দেয়ারই নামান্তর।• ‘আল্লাহই হচ্ছেন যুগ’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীর মধ্যে গভীর চিন্তার বিষয় নিহিত রয়েছে ।• বান্দার অন্তরে আল্লাহকে গালি দেয়ার ইচ্ছা না থাকলেও অসাবধানতাবশত মনের অগোচরে তাঁকে গালি দিয়ে ফেলতে পারে ।

যামানাকে ভালো-মন্দ বলা বা গালি দেয়া নাজায়েয। এ ধরণের অভ্যাস বর্জন করা খুবই জরুরী। যামানাকে গালি দেয়া পূর্ণ তাওহীদের পরিপন্থী। সাধারণত মূর্খ লোকদের দেখা যায় যে, তারা যামানাকে গালি দেয়, যখনই কোন সময় তাদের মনমতো কোন কাজ হয় না তখনই তার সে সময় বা যুগকে কটুক্তি এবং সেই দিন অথবা মাস অথবা বছরকে অভিশাপ প্রদান করে। এ কথা সর্বজন বিদিত যে, যামানার কিছু করার ক্ষমতা নেই বরং যা কিছুর পরিবর্তন ঘটে তা স্বয়ং আল্লাহ করেন। ফলে গালি আল্লাহকে কষ্ট দেয়। যামানাকে গালি দেয়ার কয়েকটি স্তর আছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ হল যামানাকে অভিশাপ করা; কিন্তু কোন কোন বছরকে কঠিন বছর বলা অথবা কোন কোন দিনকে কালোদিবস হিসেবে আখ্যায়িত করা অথবা কোন কোন মাসকে অশুভ বলে আখ্যায়িত করা যামানাকে গালি দেয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা এটা নিদির্ষ্ট একটা ব্যাপার। যে দিনে তার ভাগ্য তার সহায় হয়নি অর্থাৎ যেন সে তার অবস্থার বর্ণনা করছে যামানার ভালো মন্দের নয়।

১ তাওহীদবাদীরা প্রতিটি বস্তুর সম্বোধন আল্লাহর দিকে করেন আর মুশরিকরা প্রতিটি বস্তুর সম্বোধন যামানার দিকে করে।

২ এর অর্থ এ নয় যে, যামানা আল্লাহর নামসমূহের একটি। বরং এখানে বলার অর্থ হল, যামানা স্বয়ং না কোন জিনিসের মালিকনা কিছু করে বা করতে পারবে বরং যামানার প্রকৃত ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তন করেন এবং এ দুটির কোন কর্মক্ষমতা নাই ফলে এ দুটিকে গালি দেয়া তাদের এ পরিবর্তনকারীকে গালি দেয়ারই নামান্তর।

মূলঃ কিতাবুত তাওহীদ ; অধ্যায় ৪৪; মুহাম্মদ বিন সুলায়মান আত-তামীমী (রাহিমুল্লাহ)

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *