রোগ-ব্যাধিকে গালি দেওয়া যাবে না
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘বান্দার জন্য আল্লাহর দরবারে মর্যাদার একটা স্তর নির্ধারণ রয়েছে। কিন্তু বান্দা নিজের আমলের মাধ্যমে সে স্থানে পৌঁছতে সক্ষম নয়। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা বান্দার অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেলেন, যাতে করে নিজের মর্যাদার আসনে পৌঁছতে পারে’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৬৯/৭)। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় মৌসুমি জ্বর-ঠান্ডা লেগে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই মুমিনের কর্তব্য অসুস্থ অবস্থায় ইসলামের নিয়ম অনুসরণ করা।
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এক রকম পরীক্ষা নেন অসুস্থতার নেয়ামত দান করে। এটি মর্যাদার আসনে পৌঁছানোর জন্য নয়, বরং আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার গুনাহ মাফের জন্যই এই অসুস্থতার নেয়ামত দান করেন। হাদিস শরীফে এসেছে, একদিন রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-এর কাছে গেলেন। দেখলেন আয়েশা (রা.) কপালে একটি জলপট্টি দিয়ে আছেন এবং ব্যথার প্রকোপে কাঁপছেন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে তোমার আয়েশা?’ বলেন, ‘জ্বর হয়েছে। আল্লাহ দ্রুত আরোগ্য দান করুন।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘জ্বরকে মন্দ বোলো না। এটি বনি আদমের গুনাহকে এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে আগুন শুকনো লাকড়িকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৭৫)
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) একবার প্রচ- জ্বরে আক্রান্ত হলেন এবং এত বেশি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন যে, জ্বরে নবী কারিম (সা.) কাঁপছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এলেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘মুমিন যখন কোনো বিপদ ও কষ্টে আক্রান্ত হয়, তখন আল্লাহ বিনিময়ে তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন; যেমনÑশীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ে’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৪৭)। আরও এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো রোগ আমার কাছে জ্বরের চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। কেননা জ্বর শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ও জোড়ায় পৌঁছে যায়। আর আল্লাহ তায়ালা সে অনুপাতে সওয়াব দিয়ে থাকেন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫০৩)
অসুস্থ হলে দান-সদকা করা রাসুল (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত। দান-সদকা বিপদাপদ দূর করে, রোগ-ব্যাধি থেকেও রক্ষা করে। ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সদকার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো।’
অসুস্থতা তাকদিরের একটি অংশ। তাই অসুস্থ হলে রোগ-ব্যাধিকে গালমন্দ করা যাবে না। এটি ইসলামে নিষিদ্ধ। আবদুল্লাহ ইবনে জাবের (রা.) বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.) উম্মুস সায়েবকে দেখতে গেলেন। তাঁকে বলেন, ‘হে উম্মুস সায়েব তোমার কী হয়েছে? তুমি কাঁপছ কেন?’ তিনি বলেন, ‘জ্বর হয়েছে। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, জ্বরকে গালি দিও না। কেননা, জ্বর বনি আদমের গুনাহ মাফ করে বা এর মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়। হাঁপর যেভাবে লোহার মরিচা দূর করে, জ্বরও মানুষের গুনাহ দূর করে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৭৫)
সবিশেষ অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। চিকিৎসা গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থি নয়। প্রত্যেক হালাল বস্তু দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ বৈধ। উসামা ইবনে শারিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ কোরো। কেননা, আল্লাহ বার্ধক্য ছাড়া সব রোগের ওষুধ সৃষ্টি করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৫৫)