যিকির (আল্লাহকে স্মরণ) অন্যতম একটি সুন্নাত
মহান আল্লাহকে সার্বক্ষণিক ও সর্বদা স্মরণ করা
মহান আল্লাহর যিকরের ব্যাপারে অবিস্মরণীয় এবং বিবেচ্য বিষয়সমূহ হচ্ছে:
১। আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে ইবাদাতের মূল
আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে ইবাদাতের মূল। সকল অবস্থায় এবং সকল সময়ে এটি ইবাদাতকারীদের মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস প্রণিধানযোগ্য عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِ أَحْيَانِهِ.
“হযরত আয়িশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. সদা-সর্বদা আল্লাহর স্মরণ করতেন। মুসলিম, হাদীস নং: ৩৭৩।
আল্লাহর সাথে এই সম্পর্কই হচ্ছে জীবন। তাঁর নৈকট্য হচ্ছে সফলতা এবং সন্তুষ্টি আর পথভ্রষ্টতা এবং বিপর্যয় থেকে বহু দূরে থাকার একমাত্র উপায়।
২। আল্লাহর স্মরণ মু’মিন ও মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য নির্ধারণ করে দেয়
আল্লাহর স্মরণ মুনাফিকদের থেকে সত্যিকার মু’মিন-মুসলিম বান্দাকে আলাদা করে। কারণ, মুনাফিকদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা আল্লাহকে খুবই কম স্মরণ করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَى يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا قَلِيلًا.
“অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। আসলে তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন একান্ত শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায়। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। আন নিসা, ৪:১৪২
৩। আল্লাহর স্মরণ শয়তানের উপর বান্দার পক্ষ থেকে ঢালের ন্যায়
শয়তান বান্দাদের উপর বিজয়ী হতে পারে না, যদি না বান্দা আল্লাহর স্মরণ থেকে অমনোযোগী হয়। আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে ঢালের ন্যায় ৷
৪। যিকর হচ্ছে মু’মিন মুসলিম বান্দার পরম সুখ ও প্রশান্তি
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহ্ যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহ্র যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি পায় ৷ আর রাদ, ১৩:২৮
৫। আল্লাহকে স্মরণকালীন সময় দুনিয়ার শ্রেষ্ট সময়
মহান আল্লাহকে সদাসর্বদা ও সার্বক্ষণিক স্মরণ করা। জান্নাতে মু’মিন-মুসলিম বান্দাদের কোনো আফসোস থাকবে না, শুধু দুনিয়ার ঐ সময়ের জন্য যা সে আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত কাটিয়েছে। মহান আল্লাহকে প্রতিনিয়ত এবং সার্বক্ষণিক স্মরণ রাখো, তাহলে আল্লাহর সাথে অটুট ও নিরবচ্ছিন্ন সুদৃঢ় সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
৬। আল্লাহর স্মরণ সম্পর্কে ইমাম নববী রহ. এর বক্তব্য
আল্লাহর স্মরণ সম্পর্কে ইমাম আন নববী রহ. বলেন: ইসলামি চিন্তাবিদগণ বলেন, যিকির অন্তরে এবং মৌখিক হতে পারে এবং সর্বাবস্থায় হতে পারে আর এ যিকির তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ, তাকবীর, তাহমীদ এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রতি দরুদ ইত্যাদির মাধ্যমে হতে পারে। তবে নারীদের হায়েয ও নিফাস চলাকালে যিকির করা নিয়ে মুসলিম চিন্তাবিদগণ বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেন।
৭। আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে স্মরণ করেন যে আল্লাহকে স্মরণ করে ।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ.
“সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমার্দের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না ৷ সূরা বাক্বারাহ ২:১৫২ একজন ব্যক্তি অনেক খুশি হয় যখন তাকে সংবাদ দেয়া হয় যে শাসকরা তাকে নিয়ে আলোচনা করছে, তাদের সমাবেশে এবং তার প্রশংসা করছে।
সুতরাং এটা কিরূপ আনন্দ-উচ্ছ্বাসের উপলব্ধি হওয়া উচিত, মহান আল্লাহ, যিনি বিশ্বজগতের রব্ব, তিনি এর চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করছেন?
৮। আল্লাহর স্মরণে অমনোযোগিতা ও উদাসিনতা থাকা নিষেধ
আল্লাহর স্মরণ দ্বারা এমন কিছু বোঝায় না যে দুই একটি শব্দ উচ্চারণ করা, যখন হৃদয় কী বলছে তা থেকে সে উদাসীন থাকে এবং আল্লাহর মমতা, মাহাত্ম্য এবং আনুগত্য থেকে মন উদাসীন থাকে। সুতরাং জিহ্বা দ্বারা স্মরণ করাই যথেষ্ট নয়। বরং তার প্রতি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি, মনোযোগ দেয়া এবং অর্থের দিকে খেয়াল করাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ.
“তোমার রবকে সকাল-সন্ধ্যায় নিজের মধ্যে, বিনীতভাবে এবং ভয় সহকারে এবং উঁচু শব্দ না করে আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তাদের মতো হয়ো না যারা উদাসীন ।”সূরা বাক্বারাহ ২:১৫২
মনে রাখুন: যিকির করার সময় ব্যক্তিকে অবশ্যই বুঝা উচিত যে, সে কী বলছে? সে এগুলো শুধু মুখেই বলবে না বরং অন্তর থেকে বলবে, এতে করে ব্যক্তির আত্মিক ও বাহ্যিক সবই আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত হবে।
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম