মসজিদে প্রবেশ, বের ও অবস্থানের সুন্নাতসমূহ
১। তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي العَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوا .
“হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যদি মানুষ জানত আযানে এবং প্রথম কাতারে কী পুরস্কার রয়েছে এবং লটারি করা ব্যতীত এ পুরস্কার অর্জনের আর কোনো পথ না পেত, তাহলে তারা লটারি করত। যদি তারা জানতো যুহরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করার কী পুরস্কার রয়েছে তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করতো। যদি তারা জানত ইশা এবং ফজরের সালাত জামা’আতে আদায় করার ফযিলত, তাহলে তারা তা আদায় করতে আসত এমনকি যদি তাদেরকে হামাগুড়ি দিয়েও আসতে হতো।(‘আল বুখারী, হাদীস নং: ৬১৫ এবং মুসলিম, হাদীস নং: ৪৩৭ )
ইমাম নববী রহ. বলেন, তা’যীর অর্থ নামাযের জন্য তাড়াহুড়া অর্থাৎ দ্রুতগতিতে ছুটে যাওয়া ।
২। মসজিদে যাওয়ার সময় এ দু’আ পড়া সুন্নাত
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. এর বাণী عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: بِتُ فِي بَيْتِ خَالَتِي مَيْمُونَةً فَبَقَيْتُ كَيْفَ يُصَلِّي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ فَأَذَنَ الْمُؤَذِّنُ فَخَرَجَ إِلَى الصَّلَاةِ. وَهُوَ يَقُولُ
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার খালা মাইমুনা রা. এর গৃহে রাত যাপন করছিলাম, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে যেভাবে নামায পড়তে দেখেছি তা হলো: মুয়ায্যিন আযান দেওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সা. ঘর থেকে বের হলেন এবং বললেন: : اللهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا ، وَفِي لِسَانِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي سَمُعِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا، وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِى نُورًا، وَمِنْ أَمَامِي نُورًا. وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِ نُورًا ، وَمِنْ تَحْتِى نُورًا ، اللهُمَّ أَعْطِنِي نُورًا.
“হে আল্লাহ! আমার ক্বলবে আপনি নূর দান করুন, আমার জিহ্বায় নূর দিন, আমার কানের মধ্যে নূর দিন, আমার চোখের মধ্যে নূর দিন, আমার পেছনে নূর দিন, আমার সামনে নূর দিন এবং আমার উপরে নূর দিন এবং আামার নিচে নূর দিন। হে আল্লাহ আমার উপর নূর বর্ষণ করুন। (মুসলিম, হাদীস ৭৬৩)
৩। মসজিদে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত
মুসলিম আইনশাস্ত্রবিদগণ বলেন, মসজিদে হেঁটে যাওয়ার মাধ্যমে কালীন মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ইসলামি শরী‘আহ তাড়াহুড়া ব্যতীত মসজিদে হেঁটে যাওয়ার মাঝে নানা উপকার ও ফযিলত বর্ণনা করেছেন ।
এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে: عَنْ أَبي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَلَا أَدْتُكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللَّهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِةِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاط.
“হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমি কী তোমাদেরকে এমন কথা জানাবো না, যা করলে আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? লোকেরা বললো হে রাসূলুল্লাহ সা. আপনি বলুন। তিনি বললেন: কষ্টকর অবস্থায় থেকেও পূর্ণাঙ্গভাবে ওযু করা, নামাযের জন্য বারবার মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের জন্য অপেক্ষা করা; আর এ কাজগুলো হলো সীমান্ত প্রহরার মতো সাওয়াবের কাজ । ” (মুসলিম, হাদীস নং: ২৫১)
৪। ধীরস্থির ও প্রশান্তচিত্তে মসজিদে হেঁটে আসা সুন্নাত
ধীরস্থির ও প্রশান্তচিত্তে অর্থাৎ সাকিনাহ এবং ওয়াকার সহ মসজিদে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত । এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. হাদীস- أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ، وَأُتُوهَا تَمْشُونَ وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِتُوا.
“হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি: যখন নামায শুরু হয়ে যায় তোমরা তাতে শরীক হওয়ার জন্য দৌড়াবে না বা তাড়াহুড়া করবে না। বরং ধীরস্থিরভাবে হেঁটে হেঁটে যাও। তোমাদেরকে গাম্ভীর্য বজায় রাখতে হবে। এভাবে ইমামের সাথে নামাযের যে অংশ পাবে তাই পড়বে। আর যা পাবে না তা পূর্ণ করে নেবে। ( আল বুখারী, হাদীস নং: ৬৩৬ এবং মুসলিম, হাদীস নং: ৬০২ )
৫। মসজিদে প্রবেশের সময়ে দু’আ পাঠ করা সুন্নাত
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. হাদীস- ,عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ يَقُولُ
হযরত ফাতিমা বিনতে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন তিনি বলতেন, بِسْمِ اللَّهِ، وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَافْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحمَتِك . আল্লাহর নামে (প্রবেশ করছি), দুরূদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর। হে আল্লাহ, তুমি আমার পাপসমূহ ক্ষমা করে দাও এবং হে আল্লাহ, তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বার খুলে দাও ।
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. এর অন্য আরেকটি হাদীস- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلَيسَلِمُ عَلَى النَّبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَيَقُلْ
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন রাসূলুল্লাহ সা. এর উপর দুরূদ পাঠ করে এবং বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ فِي أَبْوَابِ رَحْمَتِكَ
হে আল্লাহ, তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বার খুলে দাও।
৬। ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّهُ كَانَ، يَقُولُ: مِنَ السُّنَّةِ إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَأنْ تَبْدَأَ بِرجُلِكَ الْيُمْنَى. “হযরত আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তোমাদের জন্য সুন্নাত হলো যখন তোমরা মসজিদে প্রবেশ করো তখন তোমরা ডান পায়ে প্রবেশ করবে।(”সতাদরাক আল হাকিম, হাদীস নং: ৮২২।)
৭। তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করা সুন্নাত
মসজিদে প্রবেশ করে (বসার আগে) তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করা সুন্নাত। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ
“হযরত আবু কাতাদাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন বসার পূর্বেই দু’রাকাআত নামায পড়ে নেয়। (আল বুখারী, হাদীস নং: ১১৬৩ এবং মুসিলিম, হাদীস নং: ৭১৪)
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, ‘নিষিদ্ধ সময়েও তাহিয়্যাতুল-মসজিদ সালাত আদায় বৈধ।’
ইমাম হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: ‘মুজতাহিদগণের ঐক্যমত্য সিদ্ধান্ত হলো তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায একটি সুন্নাত নামায।
৮। প্রথম কাতারে বসা সুন্নাত
প্রথম কাতারে বসা সুন্নাত, যেমন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, عَنْ أَبي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ ، لَاسْتَبَقُوا إِلَيْهِ .
“হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যদি মানুষ জানত কী (পুরস্কার) রয়েছে আযানে এবং প্রথম কাতারে এবং এটি (পুরস্কার) অর্জনের আর কোনো পথ না পেত লটারি করা ব্যতীত, তাহলে তারা লটারি করত।(আল বুখারী, হাদীস নং: ৬১৫ এবং মুসলিম, হাদীস নং: ৪৩৭ ৷)
৯। মসজিদ থেকে বের হবার সময় এ দু’আ পাঠ করা সুন্নাত
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: عَنْ أَبي أُسَيْدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : وَإِذَا خَرَجَ. فَلْيَقُلْ: اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদ থেকে বের হয়; তখন সে যেন বলে, “হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি।(মুসলিম, হাদীস নং: ৭১৩, আবু দাউদ, হাদীস নং: ৪৬৩) ইমাম আবু দাউদ উক্ত হাদীসের সাথে দুরূদ পাঠানো বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেন ।
১০। মসজিদ থেকে বাম পা দিয়ে বের হওয়া সুন্নাত
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّهُ كَانَ، يَقُولُ: مِنَ السُّنَّةِ إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ أَنْ تَبْدَأَ بِرِجْلِكَ الْيُمْنَى ، وَإِذَا خَرَجْتَ أَنْ تَبْدَأَ بِرِجْلِكَ الْيُسْرَى.
হযরত আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের জন্য সুন্নাত হলো যখন তোমরা মসজিদে প্রবেশ করো তখন তোমরা ডান পায়ে প্রবেশ করবে এবং যখন বের হবে তখন বাম পায়ে বের হবে। (মুসতাদরাক আল হাকিম, হাদীস নং: ৮২২)
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম