আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মৌলিক বৈশিষ্ট্য
১. কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের অনুসরণ
- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইসলামী শরীয়তের চারটি মূল উৎসকে গ্রহণ করে:
- কুরআন – আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী, যা ইসলামের সর্বপ্রথম ও সর্বোচ্চ উৎস।
- হাদিস – রাসুল ﷺ-এর বাণী, কর্ম ও অনুমোদন, যা কুরআনের ব্যাখ্যা ও ইসলামের দ্বিতীয় উৎস।
- ইজমা – সাহাবা ও পরবর্তী উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য, যা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
- কিয়াস – কুরআন, হাদিস ও ইজমার ভিত্তিতে কোনো বিষয়ের যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত।
- বিদআতী দলগুলোর মতো আহলে সুন্নাত শরীয়তের উৎসের মধ্যে কেবল ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা বা মনগড়া মতামত গ্রহণ করে না। বরং চারটি মূলনীতির আলোকে শরীয়তের বিধান নির্ধারণ করে।
২. তাওহিদের উপর অটল থাকা
- আল্লাহর একত্ববাদে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা এবং শিরক থেকে দূরে থাকা।
- আল্লাহর নাম ও গুণাবলীকে কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী গ্রহণ করা, বিকৃত ব্যাখ্যা না করা।
- ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদিত করা।
৩. সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা স্বীকার করা
- সাহাবাদের ভালোবাসা ও সম্মান করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্বেষ পোষণ না করা।
- শিয়া ও অন্যান্য বিদআতী দল সাহাবাদের নিন্দা করে, যা আহলে সুন্নাত প্রত্যাখ্যান করে।
৪. তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
- আহলে সুন্নাত বিশ্বাস করে যে, সমস্ত কিছু আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত এবং তাকদিরের উপর ঈমান আনা ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
- আল্লাহর ইচ্ছা ও মানুষের কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা বিশ্বাস করা।
৫. রাসুল ﷺ-এর শাফা‘আত (সুপারিশ) স্বীকার করা
- কিয়ামতের দিন রাসুল ﷺ-এর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে বলে বিশ্বাস করা।
- বিদআতী গোষ্ঠী এটি অস্বীকার করে বা এতে বাড়াবাড়ি করে।
৬. বিদআত থেকে বিরত থাকা
- দ্বীনে কোনো নতুন সংযোজন না করা এবং রাসুল ﷺ-এর দেখানো পথ অনুসরণ করা।
- রাসুল ﷺ বলেছেন:“যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”(বুখারি: ২৬৯৭, মুসলিম: ১৭১৮)
৭. পরিমিতিবোধ বজায় রাখা (ইফরাত ও তফরিত থেকে মুক্ত থাকা)
- আহলে সুন্নাত মধ্যপন্থা অবলম্বন করে, চরমপন্থা বা শিথিলতা এড়িয়ে চলে।
- খারিজিরা ধর্মে বাড়াবাড়ি করে এবং বিদআতীরা ধর্মকে পরিবর্তন করে, যা আহলে সুন্নাত প্রত্যাখ্যান করে।
৮. চার মাজহাবের অনুসরণ
- আহলে সুন্নাত ইসলামী ফিকহ বোঝার জন্য ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর মাজহাব অনুসরণ করে।
- বিদআতী দলগুলো নিজস্ব মত প্রচার করে এবং মাজহাবের বিরোধিতা করে।
৯. উম্মাহর ঐক্য বজায় রাখা
- আহলে সুন্নাত বিভক্তি সৃষ্টি করে না, বরং উম্মাহর ঐক্যকে গুরুত্ব দেয়।
- তারা খারিজিদের মতো মুসলমানদের কাফের ঘোষণা করে না।
১০. বৈধ শাসকের আনুগত্য করা
- আহলে সুন্নাত বিদ্রোহের পথে যায় না এবং শাসকের আনুগত্য করে, যতক্ষণ না সে প্রকাশ্যে কুফরি করে।
সংকলক:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স
এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0