ইবাদত

ঘুমানোর ও ঘুম থেকে উঠার সুন্নাতসমূহ

ঘুমানোর সুন্নাতসমূহ

১. ইশার নামাযের পর বিলম্ব না করে কোনোরূপ দুনিয়াবী কথাবার্তা বা দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত না হয়ে যথাসম্ভব শীঘ্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়া।

২. উযূ অবস্থায় ঘুমানো। -বুখারী, হাদীস নং- ৬৩১১ -বুখারী, হাদীস নং- ৫৪৭

৩. শোয়ার পূর্বে ভালোভাবে বিছানা ঝেড়ে নেয়া।-বুখারী, হাদীস নং- ৬৩২০

৪. শোয়ার পূর্বে উভয় চোখে তিনবার সুরমা লাগানো। -মুস্তাদরাক, হাদীস নং- ৮২৪৯

৫. কালেমায়ে তাইয়্যিবাহ পড়ে ঘুমানো।

৬. তাসবীহে ফাতেমী (সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৪ বার) পড়ে ঘুমানো। -বুখারী, হাদীস নং- ৩১১৩

৭. শোয়ার আগে তিন কুল (সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস) তিন তিনবার পড়ে উভয় হাতে দম করে সমস্ত শরীরে তিনবার হাত বুলানো। -বুখারী, হাদীস নং- ৫০১৭

৮. সূরা তাবারাকাল্লাযী ও সূরা আলিফ লাম মীম সিজদা তিলাওয়াত করে শোয়া। -তাবরানী কাবীর, হাদীস নং- ২১৯৫

৯. ডান হাত গালের নিচে রেখে ডান কাতে শোয়া। -বুখারী, হাদীস নং- ৬৩১৪

১০. ঘুমের আগে এই দু’আ পড়া : بسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنبِى وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَاغْفِرْ لَهَا وَإِنْ أَرْ سَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ

অর্থ : “হে আমার প্রতিপালক! তোমার নামেই আমার পার্শ্ব রেখেছি, তোমার নামেই তা উঠাবো। তুমি যদি আমার জানকে আটকে রাখো (অর্থাৎ, আমাকে মৃত্যু দাও) তাহলে তাকে ক্ষমা কর। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও (মৃত্যু না দাও) তাহলে তোমার নেক বান্দাদের যেভাবে রক্ষা কর সেভাবে তাকে রক্ষা কর।” -সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৩২০

অথবা اللهم باسمك اموت واحيا অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে ঘুমাই এবং জাগ্রত হই।”-সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৬৩১৪

১১. শোয়ার পর ঘুম না এলে এই দু’আ পড়া-اعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُون

অর্থ : “আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমার মাধ্যমে তাঁর ক্রোধ, শাস্তি, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট, শয়তানের কু-মন্ত্রনা এবং সেগুলোর (শয়তান) উপস্থিতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” -জামে তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৫২৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ৬৬৯৬

১২. কোনোরূপ দুঃস্বপ্ন দেখলে বাম দিকে থু-থু নিক্ষেপ করা এবং নিম্নের দু’আ তিনবার পড়া : اعوذ بالله من الشيطان وشر هذه الرؤيا

অর্থ : “শয়তান ও এই স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করছি।” -সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৭০০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২২৬২

ঘুমানোর আরো কিছু সুন্নাত

ঘুমানোর সময় আগুন খোলা অবস্থায় জ্বালিয়ে রাখবে না, হয় নিভিয়ে রাখবে, না হয় ঢেকে রাখবে। -সহীহ বুখারী

পায়ের উপর পা দিয়ে এমনভাবে শোয়া নিষেধ যাতে সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সতর না খুললে ক্ষতি নেই।

এমন ছাদের উপর শুবে না যার কিনারা বন্ধ নয়। কেননা গড়িয়ে পড়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

উপুড় হয়ে শোয়া মাকরূহ। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- إِنَّمَا هُذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ অর্থ : “উপুড় হয়ে শোয়া তো জাহান্নামীদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।” -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৩৭২৪

ঘুম থেকে উঠার সুন্নাতসমূহ

১. ঘুম থেকে উঠে তিনবার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলে উভয় হাতের তালু দ্বারা চোখ ডলা।

২. ঘুম থেকে উঠে কালেমায়ে তাইয়্যিবা পড়া।

৩. অতঃপর এই দু’আ পড়া- الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي رَدَّ عَلَى رُوحِي وَلَمْ يُمْسِكُهَا فِي مَنَامِي الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

অর্থ : “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার রূহকে ঘুমের মধ্যে আটকে না রেখে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত করেছেন, তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন স্থল।”

৩. ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা। -বুখারী, হাদীস নং- ৬৩২৪

তথ্যসূত্রঃ

কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *