ইসলাম

হাদীসের ব্যাখ্যাকারগণের মাযহাব

১. সহীহ বুখারী শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল কারী প্রণেতা ইমাম বদরুদ্দীন আবূ মুহাম্মাদ মাহমূদ ইবনে আহমাদ ইবনে মূসা ইবনে আহমাদ ইবনুল হাসান আল হালাবী আল আইনী। তিনি হানাফী মাযহাব অবলম্বী। তাঁর রচিত অনেকগুলো কিতাব রয়েছে। তন্মধ্যে উমদাতুল কারী শরহে বুখারী সুপ্রসিদ্ধ। এ ব্যাখ্যাগ্রন্থটি তার তারতীব অনুযায়ী ২১ খন্ডে বিভক্ত । তিনি ৮৫৫ হিজরীতে ইনতিকাল করেন।

২. ফাতহুল বারী প্রণেতা ইমাম আহমাদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে আহমাদ ওরফে ইবনে হাজার আল আস্কালানী আল কেনানী। তিনি শাফেঈ মাযহাব অনুসারী। একিতাবটি বর্তমানে ১৪খন্ডে পাওয়া যায়। এ ব্যাখা গ্রন্থের উপর তার রচিত একটি মুকাদ্দামা রয়েছে । তিনি ৮৫২ হিজতে ইনতিকাল করেন ।

৩. ইরশাদুস সারী প্রণেতা ইমাম শিহাব উদ্দীন আহম্দ ইবনে মুহাম্মাদ কাস্তালানী। তার এ কিতাবটি মূলত ফাতহুল বারী ও উমদাতুল কারীর সার সংক্ষেপ । তিনি ৯৩৩ হিজরীতে ইনতিকাল করেন ।

৪. ফায়যুল বারী প্রণেতা আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহ.) মৃত ১৩৫২ হিজরী। তিনিও হানাফী। একিতাবটি মূলত তার দরসী তাকরীর। তার বিশিষ্ট শাগরিদ আল্লামা বদরে আলম মিরাঠী মৃত ১৩৮৫ হিজরী এটাকে তারতীব দিয়েছেন। চার খন্ডে এ কিতাবটি সমাপ্ত হয়েছে।

৫.লামিউদ দারারী প্রণেতা হযরত ইমামে রাব্বানী আল্লামা মাওলানা ব্রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.)। তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। ১৩৪ ১৩২৩ হিজরী সনে তার ইনতিকাল হয়।

অনুরূপভাবে মুসলিম শরীফের বিশেষ বিশেষ ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণেতা যেমন,

৬. আল মিনহাজ ফী শরহে সহীহে মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ প্রণেতা ইমাম আবূ যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শরফ আন নববী। তিনি ৬৭৬ হিজরী সনে ইনতিকাল করেন । তিনি শাফেঈ মাযহাবের লোক ।

৭. আল মুফহিম প্রণেতা আব্দুল গাফির ফারিসী

৮. আল মু’লিম বি ফাওয়ায়িদে কিতাবে মুসলিম প্রণেতা আবূ আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল মাথুরী, মৃত ৫৩৬ হিজরী।

৯. ইক্‌মালুল মু’লিম প্রণেতা কাযী ‘আয়ায মালিকী, মৃত ৫৪৪ হিজরী।

১০. ফাতহুল মুলহিম প্রণেতা শাইখুল ইসলাম আল্লামা শিব্বীর আহমাদ উসমানী প্রমুখ এবং নাসাঈ, আবূ দাউদ, তাহাবী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থের প্রবীণ ব্যাখ্যাকারগণ সবাই কোন না কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন।

এছাড়া হাদীস বর্ণনাকারীদের জীবনী সম্বলিত বিশেষ গ্রন্থ প্রণেতা যেমন,

১. আল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল প্রণেতা হাফিয আব্দুল গণী ইবনে ইসমাঈল ইবনে আবদুল গণী আল মাকদাসী মৃত ১১৪৩ হিজরী।

২. বার ভলিয়মের মুদ্রিত ইকমালু তাহযীবিল কামাল প্রণেতা হাফিয আলাউদ্দীন মুগলতাঈ ইবনে কুলাউজ আল-হানাফী মৃত ৭৬২ হিজরী ।

৩. পঁচিশ ভলিয়মে মুদ্রিত সিয়ারু আ’লামিন নুবালা প্রণেতা হাফিয শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আয যাহাবী মৃত ৭৪৮ হিজরী।

৪. তাহযীবুত তাহযীব প্রণেতা হাফিয শিহাবুদ্দীন আহমাদ ইবনে আলী ইবনে হাজার আল আসকালানী মৃত ৮৫২ হিজরী ।

৫. সত্তর ভলিয়মে মুদ্রিত তারিখে দামেশক প্রণেতা হাফিয ইবনে আসাকিরসহ তারাজিমের প্রায় পাঁচশরও অধিক সকল কিতাবেরই সংকলকগণ কোন না কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। এভাবে হাদীসের শব্দকোষ এবং হাদীস যাচাই বাছাইয়ের মূলনীতি সম্পর্কিত কিতাবসমূহের প্রণেতাগণও কোন না কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ।

এখন প্রশ্ন হল, যারা নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে দাবী করেন এবং যে দলের নির্ধারিত ফরম পূরণ করলেই আহলে হাদীস নামের সার্টিফিকেট (!) লাভ করা যায়, হাদীস ও ইলমে হাদীসের জগতে তাদের কোন অবস্থান নেই কেন? তারা মাযহাব অবলম্বীদেরকে মুশরিক কাফির ইত্যাদি অপবাদে আখ্যায়িত করে থাকেন সুতরাং তাদের ভাষ্য মতে মুশরিক কাফিরদের সংকলিত হাদীস ও ইলমে হাদীসের কিতাবসমূহের উপর তাদের আস্থা ও নির্ভরতা হয় কোন হাদীসের ভিত্তিতে?

ইবনে মাঈন (রহ.)-এর মাযহাব

ইমাম বুখারী (রহ.) ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ হাদীস জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজন স্বীকৃত ইমাম বিশেষত: হাদীস যাচাই বাছাই বা ইলমুল জারহি ওয়াত তা’দীলের অতুলনীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাহরুল উলূম বা বিদ্যাসাগর ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.)। অসীম জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বলগাহীন পথ পরিহার করে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর তাকলীদ করে চলতেন।

তিনি বলেন, الْقِرَاءَةُ عِنْدِى قِرَاءَةُ حَمْزَةَ وَالْفِقْهُ فِقْهُ أَبِي حَنِيْفَةَ عَلَى هَذَا أدْرَكْتُ النَّاسَ. “আমার নিকট গ্রহণযোগ্য কিরা’আত হামযার কিরা’আত এবং গ্রহণযোগ্য ফিক্হ ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)-এর ফিক্হ। সকল মানুষকেও আমি এর উপর ঐক্যবদ্ধ পেয়েছি ।তারীখে বাগদাদ ১২/৩৪৭, ফায়ফুল বারী ১/১৬৯, মুকাদ্দামায়ে নাসবুর রায়াহ ৪২।

ইমাম যাহাবী (রহ.) বর্ণনা করেন, وَكَانَ يَحْيَ بْنُ مَعِيْنِ إِمَامَ الْحَرْحِ وَالتَّعْدِيلِ مِنْ غُلَاةِ الْحَنَفِيَّةِ “ইয়ইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) জারহ ওয়াত তাদীলের ইমাম এবং শীর্ষস্থানীয় হানাফীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।আর রুয়াতুস সিকাত ৭, মুদ্রণ: মিশর, ১৩২৪ সাল।

ইবনে মাঈনের প্রশংসা করতে গিয়ে ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, كُلٌّ حَدِيثٍ لَا يَعْرِفُهُ ابْنُ مَعِينٍ فَلَيْسَ هُوَ بِحَدِيْثٍ. “ইমাম ইবনে মাঈন (রহ.) যে হাদীস সম্পর্কে জানেন না সেটি হাদীস নয় ।”সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১১/৮০, মুদ্রণ মুয়াস্সাসাতুর রিসালা, বৈরূত, লেবানন ।

বস্তুত: ইমাম ইবনে মাঈন হাদীসের বর্ণনাকারীর সত্যায়ন ও হাদীসের যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সত্যিই অতুলনীয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, অবশ্যই যাচাই বাছাই করতঃ হাদীসের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ও বিশুদ্ধ মাযহাব হিসেবে তিনি হানাফী মাযহাবকে মনোনীত করেছেন। অতএব যারা বলে হানাফী মাযহাব বিশুদ্ধ হাদীস পরিপন্থী, তাদেরকে ন্যায় পরায়ণতা ও আল্লাহর ভয় নিয়ে পুর্ণবিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।

মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নজদী (রহ.)-এর মাযহাব লা-মাযহাবীরা দাবী করে থাকে যে, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব নজদীও লা-মাযহাবী ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজেই স্বীয় মাযহাব সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন, وَأَمَّا مَذْهَبُنَا فَمَذْهَبُ الْإِمَامِ أَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ إِمَامٍ أَهْلِ السُّنَّةِ فِي الْفُرُوعِ وَلَا نَدْعِى الْاجْتِهَادَ وَإِذَا بَانَتْ لَنَا سُنَّةٌ صَحِيحَةً عَنْ رَسُولِ اللَّهِ عَمِلْنَا بِهَا وَلَا نُقَدِّمُ قَوْلَ اَحَدٍ كَائِنَا مَا كَانَ. “শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে আমাদের মাযহাব আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ইমাম ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মাযহাব। আমরা গবেষণার দাবীদার নই। তবে কোন বিষয়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশুদ্ধ হাদীস সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলে এর উপর আমল করি এবং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট হাদীসের উপরে কারও কথাকে প্রাধান্য দেই না।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত। তবে মাযহাব চতুষ্টয়ের কোন একটির তাকলীদ যারা করে তাদেরকে নিষেধ করি না। কিন্তু চার মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন মাযহাব যেমন রাফিযী, যয়েদিয়্যাহ ও ইমামিয়্যাহ ইত্যাদি সংরক্ষিত না থাকায় এগুলোর অনুসরণ থেকে নিষেধ করি। আমরা তাদেরকে তাদের ভ্রান্ত মাযহাবের উপর অবিচল রাখব না বরং তাদেরকে বাধ্য করব ইমাম চতুষ্টয়ের যে কোন একজনের তাকলীদ করতে। আমরা ইজতেহাদী মর্যাদার উপযুক্ত নই এবং তার দাবীও করি না। হ্যাঁ কিছু কিছু মাসআলা, যার উপর কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের সুস্পষ্ট দলীল নেই। যা মানসূখও নয় এবং তার বিপরীতে কোন দলীলও নেই ঐ মাসআলায় ইমাম চতুষ্টয়ের কোন একজনের মাযহাব অনুসরণ করি। আশ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল ওয়াহ্হাব ওয়া আকীদাতুহুস সালাফিয়্যাহ ৫৬।

ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর মাযহাব

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) একজন যুগশ্রেষ্ট মুজাদ্দিদ, আল্লামা ও বিখ্যাত কলম সৈনিক ছিলেন। অসংখ্য রচনাবলী, ফতওয়া ও সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাব তার মহাজ্ঞানের উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। আরব বিশ্বে তিনি আজও শাইখুল ইসলাম হিসেবে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন। তার গুণগ্রাহী ভক্তবৃন্দদেরকে প্রতারণার মানসে তথাকথিত আহলে হাদীস বা গাইরে মুকাল্লিদ ও লা-মাযহাবীরা দাবী করে থাকে যে, ইবনে তাইমিয়্যা গাইরে মুকাল্লিদ ও লা-মাযহাবী ছিলেন। আর সকল গাইরে মুকাল্লিদরা ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর তাকলীদ করে এবং তারই মাযহাব অনুসরণ করে থাকে।

তাদের এ দাবী যদি মানা হয় তাহলে প্রমাণিত হয় যে, লা-মাযহাবীরা মাযহাব মানে না বা তাকলীদ করে না বলে জনসাধারণকে কেবল ধোঁকাই দিয়ে যাচ্ছে। অথবা তারা নিজেরাই ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর তাকলীদ করে এবং তারই মাযহাব অনুসরণ করে চলছে। অতএব লা-মাযহাবী এবং মাযহাব অবলম্বীদের মধ্যে মাযহাব মানা না মানার ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য ‘থাকে না। হ্যাঁ, পার্থক্য হল যে, মাযহাব অবলম্বীরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষায় খাইরুল কুরূনের অন্তর্ভুক্ত ২য় ও ৩য় শতাব্দীর ইমামদের মাযহাব মানে, আর লা-মাযহাবীরা বহু পরবর্তী যুগ তথা ৮ম শতাব্দীর ইমামের মাযহাব মানে। এ বিষয়টি স্বীকার করতে লজ্জা করে বিধায় তারা এর নাম রেখেছে লা-মাযহাবী ও গাইরে মুকাল্লিদ। অথচ তারাও মাযহাব মানে ও তাকলীদ করে। বরং তারা আরও পাকা মুকাল্লিদ যা ইতিপূর্বেও আলোচিত হয়েছে।

আসল কথা হল যে, তারা ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এরও পরিপূর্ণ অনুসরণ করে না। তারা কেবল ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর ভক্তবৃন্দকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এ ভ্রান্ত দাবী করে আসছে। ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) গাইরে মুকাল্লিদ বা লা-মাযহাবী ছিলেন এ মর্মে কেউ কোন তথ্য আদৌ পেশ করতে পারেনি। বরং এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) ও তার একান্ত শিষ্য ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) উভয়ই হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তার রচিত ৩৭ খণ্ডে সমাপ্ত মাজমূ’আতুল ফয়া নামক গ্রন্থটি এরই সাক্ষ্য বহন করে। লা-মাযহাবীদের অন্যতম পুরোধা নবাব সিদ্দীক হাসান খানও ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) কে হাম্বলী মাযহাবের বলেই উল্লেখ করেছেন। আল আ’লাম লিয যিরাকলী ১/১৪৪, মুদ্রণ: দারুল ইলম লিল মালাঈন, বাইরূত, লেবানন ।

তিনি তার ফতওয়া চার ইমাম বিশেষ করে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর নীতিমালার উপর ভিত্তি করে রচনা করেছেন। অসংখ্য মতামত তার রয়েছে যা গাইরে মুকাল্লিদদের আমল ও মতামতের সম্পূর্ণ বিপরীত। এ বিষয়ে উদাহরণস্বরূপ শুধুমাত্র ৫টি মাসআলা এ অধ্যায়েও উল্লেখ করা হবে। তবে তারও আগে এখানে দু’টি বিষয় ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।

১. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) তারাবীহর নামায বিশ রাকা’আত সুন্নাত বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি মাজমূ’আয়ে ফাতাওয়ায় লিখেন- تَنَازَعَ الْعُلَمَاءُ فَى مِقْدَارِ الْقِيَامِ فِي رَمَضَانَ فَإِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنَّ أَبَيَّ بْنَ كَعْب كَانَ يَقُوْمُ بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ وَيُوْتِرُ بِثَلَاثٍ. فَرَأَى كَثِيرٌ مِنَ الْعُلَمَاءِ أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ لِأَنَّهُ أَقَامَه بَيْنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْأَنْصَارِ وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ.

“তারাবীহর নামাযের রাক’আতের সংখ্যা নিয়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে উবাই ইবনে কা’ব (রাযি.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি সকল মুসল্লীদেরকে নিয়ে রমযানে বিশ রাক’আত তারাবীহ আদায় করতেন। অতঃপর তিন রাক’আত বিতর পড়তেন। তাই অসংখ্য উলামায়ে কিরাম বিশ রাক’আত তারাবীহ পড়াকেই সুন্নাত বলেন। কেননা, তিনি সকল মুহাজির ও আনসার সাহাবাকে নিয়ে বিশ রাক’আত তারাবীহ কায়িম করেছিলেন। কিন্তু কেউই এতে কোন আপত্তি করেননি।মাজমূ’আ ফাতাওয়া ২৩/১১২।

এতে প্রমাণ হয় যে, সকল সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.)-এর ইজমা ও ঐক্যমতে তারাবীহর নামায বিশ রাক’আত পড়াই সুন্নাত।

তাই ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) পরের পৃষ্ঠায় আরো লিখেন- لِمَا ثَبَتَ مِنْ سُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَمِلَ الْمُسْلِمِينَ. খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত ও সব মুসলমানদের ধারাবাহিক আমলে তারাবিহর নামায বিশ রাক’আত প্রমাণিত। মাজমূ’আ ফাতাওয়া ২৩/১১৩।

হযরত উমর (রাযি.)-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি পবিত্র হারামাইন শরীফাইনে তথা মক্কা ও মদীনা সহ প্রায় গোটা বিশ্বের মুসলমানগণ রমযানে তারাবীহর নামায বিশ রাক’আত আদায় করে আসছে। পক্ষান্তরে লা-মাযহাবী বা আহলে হাদীস নামধারী নতুন ফেরকাটি সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে আট রাক’আত তারাবীহর নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠার অপপ্রায়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

২. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জুম’আর দিনে সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.) ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই মসজিদে সমবেত হতে থাকতেন। তাই কেবল খুৎবার পূর্বে একবার আযানের রেওয়াজ ছিল। পরবর্তীতে মুসল্লীদের অলসতা ও গাফলতী লক্ষ্য করে তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান (রাযি.) অন্যান্য নামাযের ন্যায় মুসল্লীদের অবগতির জন্য জুম’আর ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে আরেকবার আযানের নির্দেশ জারি করেন। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল যেভাবে আমাদের জন্য শরীয়ত, তেমনি সাহাবীর বিশেষ করে খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলও আমাদের শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত।

এ মর্মে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ـتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا به عَلَيْكُمْ وَعَضُوْا عَلَيْنَهَا بِالنَّوَاحِدٍ. “আমার তরীকা এবং আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের তরীকা অবলম্বন করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য।

অপর হাদীসে মুক্তি প্রাপ্ত দলের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি ইরশাদ করেন, كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّةَ وَاحِدَةً قَالُوا مَا هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي “সবাই জাহান্নামে যাবে একটি মাত্র দল ছাড়া। সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কারা? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আমি ও আমার সাহাবাগণের পথের পথিকরাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল।

হযরত উসমান (রাযি.) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অত্যন্ত প্রিয় সাহাবী। তার নিকট রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরপর স্বীয় দুই কন্যাকে বিয়ে দিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় কন্যার ইস্তিকালের পরে বলেছিলেন যে, আমার আরো কন্যা থাকলে তার কাছেই বিবাহ দিতাম। কাফিরদের হাতে তার শাহাদতের সংবাদ শুনেই সকল সাহাবা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে হাত রেখে বাই’আত গ্রহণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। হযরত উসমান (রাযি.) জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ জন বিশিষ্ট সাহাবীর অন্যতম। তিনি ইসলামের তৃতীয় খলীফা এবং যিন্নুরাইন তথা দুই নূরের অধিকারী। তার প্রবর্তিত জুম’আর প্রথম আযান নির্দ্বিধায় আমাদের শরীয়ত ও অপরিহার্য অনুসরণীয় বিষয়। তাই সেকাল হতে অদ্যাবধি পবিত্র মক্কা মদীনাসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে জুম’আর প্রথম আযান চালু আছে। এমনকি শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) ও তা অস্বীকার করতে পারেননি;

বরং তিনি শীয়াদের সব অভিযোগ খণ্ডন করে লিখেন- مِنْ أَيْنَ لَكُمْ أَنَّ عُثْمَانَ فَعَلَ هَذَا بِغَيْرَ دَلِيْلٍ. “হে শীয়া সম্প্রদায়! তোমরা কিসের ভিত্তিতে বল যে, হযরত উসমান (রাযি.) জুম’আর প্রথম আযান শরীয়তের দলীল ব্যতীত প্রবর্তন করেছেন।” মিনহাজুস সুন্নাহ ৩/২০৪, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ।

তিনি আরো লিখেন, وَمَا فَعَلَهُ عُثْمَانُ مِنَ النَّدَاءِ الْأَوَّلِ اتَّفَقَ عَلَيْهِ النَّاسُ بَعْدَهِ أهلُ المَذَاهِبِ الْأَرْبَعَةِ وَغَيْرُهُمْ كَمَا اتَّفَقُوا أَيْضاً عَلَى عُمَرَ مِنْ جَمِيعِ النَّاسِ فِي رَمَضَانَ عَلَى إِمَامٍ وَاحِدٍ. “হযরত উসমান (রাযি.) কর্তৃক প্রবর্তিত জুম’আর প্রথম আযান সম্পর্কে তার পরবর্তী চার মাযহাবের সকল অনুসারীগণ ও অন্যান্যরাও ঐক্যমত পোষণ করেন। যেমনিভাবে ঐক্যমত পোষণ করেছিলেন রমযানে এক ইমামের অনুসরণে (বিশ রাক’আত তারাবীহ আদায়ের ক্ষেত্রে) হযরত উমর (রাযি.)-এর মাধ্যমে সমবেত হওয়ার বিষয়ে।মিনহাজুস সুন্নাহ ৩/২০৪, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ।

তিনি আরও লিখেন, إِنَّ عَلِيّاً كَانَ مِمَّنْ يُوَافِقُ عَلَى ذَلِكَ فِي حَيَاةِ عُثْمَانَ وَبَعْدَ مَقْتَلِهِ وَلِهَذَا لَمَّا صَارَ خَلِيفَةً لَمْ يَأْمُرْ بِإِزَالَةٍ هَذَا الْآذَانِ. “যারা এ আযান সমর্থন করেছেন তাদের অন্যতম হলেন মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাযি.)। তিনি হযরত উসমান (রাযি.)-এর জীবদ্দশায় এবং তার শাহাদাতের পরেও তা সমর্থন করেছেন। তাই তিনি খলীফা হওয়ার পরেও এ আযান বন্ধের কোন নির্দেশ দেননি।”মিনহাজুস সুন্নাহ ৩/২০৪, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ।

ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) শীয়াদের প্রতি আশ্চর্যবোধ করে লিখেন, مِنَ الْعَجَبَ أَنَّ الرَّافِضَةَ تُنكِرُ شَيْئًا فَعَلَهُ عُثْمَانُ بِمَشْهَدٍ مِنَ الْأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرِينَ وَلَمْ يُنْكِرُوهُ عَلَيْهِ وَتَبِعَهُ الْمُسْلِمُونَ كُلُّهُمْ عَلَيْهِ فِي أَذَانَ الجمعة. “অবাক হওয়ার বিষয় যে, শীয়ারা হযরত উসমান (রাযি.) কর্তৃক প্রবর্তিত জুম’আর প্রথম আযান অস্বীকার করছে; যা তিনি অসংখ্য আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ে কিরামের উপস্থিতিতে চালু করেছিলেন। তাদের কেউই এতে কোন প্রতিবাদ করেন নি; বরং সকল মুসলমান জুম’আর . আযানে তা অনুসরণ করে আসছেন।মিনহাজুস সুন্নাহ ৩/২০৫, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ।

মোটকথা, বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ইমাম তাইমিয়্যা (রহ.) প্রমাণ করেছেন যে, জুম’আর প্রথম আযান শরীয়ত সম্মত এবং সুন্নাতে সাহাবার অন্তর্ভুক্ত। যারা তা অমান্য করছে তারা সুন্নাতে সাহাবা ও সাহাবীগণের অবমাননাকারী হিসেবে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে গাইরে মুকাল্লিদ বা আহলে হাদীস নামধারী নতুন মতবাদটি পথভ্রষ্ট শীয়াদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জুম’আর প্রথম আযান বিদ’আত ও শরীয়ত সম্মত নয় ইত্যাদি বাজে প্রলাপ করে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রায়াসে লিপ্ত রয়েছে।

৩. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর মতে খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল সুন্নাত ও শরঈ দলীল হিসেবে পরিগণিত।

এ মর্মে তিনি লিখেন, فَسُنَّةٌ خُلَفَاتِهِ الرَّاشِدِيْنَ هِيَ مِمَّا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ وَرَسُولُهُ وَعَلَيْهِ أَدِلَّهُ شَرْعِيةٌ مُفَصَّلَةٌ. “খুলাফায়ে রাশেদীনের অনুসৃত আমল ও আদর্শ আল্লাহ ও রাসূল প্রদত্ত নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। এ মর্মে শরীয়তের অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে।”মাজমূ’আ ফাতাওয়া ৪/১০৮।

পক্ষান্তরে আহলে হাদীস নামধারী সাহাবা বিদ্বেষীরা খুলাফায়ে রাশেদীনের মতামতের মোকাবিলায় তাদের মনগড়া মতবাদকে প্রাধান্য দেয়। এর প্রমাণ স্বরূপ হযরত উসমান (রাযি.) কর্তৃক উপরোল্লিখিত বিষয়টি এবং হযরত উমর (রাযি)-এর যুগে তারাবীহর নামায বিশ রাক’আত হিসেবে সাহাবা কিরাম (রাযি)-এর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তসহ আরো অনেক বিষয় উপেক্ষা করে লা-মাযহাবীদের মনগড়া মতবাদকে প্রধান্য দেয়, সাহাবীদের প্রতি তাদের বৈরী মনোভাবের জ্বলন্ত সাক্ষ্য বহন করে।

৪. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর মতে মুক্তাদীগণের (জাহরী নামাযে) সূরায়ে ফাতিহা না পড়ে চুপ থাকা কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। পক্ষান্তরে গাইরে মুকাল্লিদদের মাযহাবে জাহরী নামাযেও মুক্তাদীগণের উপর সূরায়ে ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।

৫. ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর মতে ইমামতের জন্য অগ্রাধিকারী হলেন আলিম। পক্ষান্তরে লা-মাযহাবীরা কারী সাহেবকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

৬. ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর মতে বিবাহোত্তর স্বামী-স্ত্রীর কেবল শরীয়ত ভিত্তিক নির্জনতার দ্বারাই স্ত্রী পূর্ণ মহরের অধিকারীনী হবে। পক্ষান্তরে গাইরে মুকাল্লিদদের মাযহাবে এ অবস্থাতে তার ভাগ্যে কিছুই জুটবে না।

৭. ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর মতে কেবল ঐ ব্যক্তির গায়েবী জানাযা পড়া যাবে, যাকে জানাযার নামায ব্যতীত দাফন করা হয়েছে। পক্ষান্তরে গাইরে মুকাল্লিদদের মাযহাব অনুযায়ী অবাধে সবারই গায়েবী জানাযা পড়া যাবে।

৮. গাইরে মুকাল্লিদদের মাযহাবে কেবল ইমাম ও একজন মুক্তাদির সমন্বয়ে জুম’আ আদায় হবে। পক্ষান্তরে ইবনে তাইমিয়্যার মতামত এর বিপরীত।

৯. গাইরে মুকাল্লিদদের অন্যতম পুরোধা নবাব সিদ্দীক হাসান খান (রহ.) তার স্বরচিত গ্রন্থে লিখেছেন, মদ সিরকায় পরিণত হয়ে গেলে তা পান করা বৈধ। পক্ষান্তরে ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) তা অবৈধ বলে উল্লেখ করেছেন।

১০. গাইরে মুকাল্লিদরা কোন ইমামের তাকলীদ করাকে সর্বাবস্থায় হারাম ও শিরক বলে দাবী করে। সুবিধা ও স্বার্থের অনুকুলে যখন যে মাযহাব পছন্দ হয় তাই গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করে থাকে। পক্ষান্তরে ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) মুজতাহিদের জন্য ইজতিহাদ করা ও সর্বসাধারণ বা ইজতিহাদ গবেষণায় অক্ষম এমন সকলের জন্য তাকলীদ করা জরুরী মনে করেন। সাথে সাথে তিনি স্বার্থের অনুকুল প্রতিকুল ও মনের প্রবৃত্তির চাহিদা মত বিভিন্ন মাযহাবের অনুসরণকে বলে উল্লেখ করেছেন। ইতিপূর্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে তবুও একটি সংক্ষিপ্ত উক্তি নিম্নে পেশ করছি।

فِي وَقْتٍ يُقَلِّدُونَ مَنْ يُفْسِدُهُ وَفِي وَقْتٍ يُقَلِّدُونَ مَنْ يُصَحْحُهُ بِحَسْبِ الْعَرْضِ وَالْهَوَى، وَمِثْلُ هَذَا لَا يَجُوْزُ بِاتِّفَاقِ الأمة. “যারা স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুগত হয়ে কখনো এমন কোন ইমামের তাকলীদ করে যিনি তার চাহিদা মত (বিয়ে অশুদ্ধ হয়েছে বলে) ফতওয়া দেন। আবার এ ফতওয়ার বিপরীতে তার স্বার্থ অনুযায়ী এমন ইমামের তাকলীদ করে, যিনি বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার ফতওয়া দেন। (অর্থাৎ, সুবিধামত যখন যার ইচ্ছা তাকলীদ বা অনুসরণ করা) মনগড়া বা কুপ্রবৃত্তির অনুকরণেরই নামান্তর। (তাই সুনির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরণ না করে) স্বার্থ ও সুবিধামত যখন যার ইচ্ছা তাকলীদ বা অনুসরণ করা সমগ্র উম্মতের ঐক্যমতে না জায়িয।”ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২/২৪১

মোটকথা, সংক্ষিপ্ত এ আলোচনা পর্যালোচনায় একথা প্রতীয়মান হয়েছে যে, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) লা-মাযহাবী বা গাইরে মুকাল্লিদ ছিলেন না; আর তাদের মতবাদেও বিশ্বাসী ছিলেন না। গাইরে মুকাল্লিদরা বাহ্যত এ দাবী করে, অথচ অসংখ্য বিষয়ে তারাই ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)-এর পরিপন্থী মতবাদ রচনা করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় গাইরে মুকাল্লিদদের এহেন দাবী করা, ইবনে তাইমিয়্যার প্রতি অপবাদ আরোপ ও নিজেদের ঘোর অজ্ঞতা ও মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।

তথসূত্র:

তাকলীদ ও মাযহাব প্রসঙ্গ

মুফতি হিফজুর রহমান

প্রধান মুফতি,জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাতমসজিদ,মুহাম্মদপুর,ঢাকা।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *