ইসলাম

যেমন হবে কবরের জীবন

মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। মৃত্যু থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। ইসলামি বিধানমতে, মৃত ব্যক্তির দেহ দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়টুকু মানুষ কবরে অবস্থান করবে। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় এই সময়কালকে ‘আলমে বারজাখ’ বা অন্তর্বর্তীকালীন সময় বলা হয়। কবর জীবনের প্রথম ধাপ হলো ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখবিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা তার কাছে আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকির বলা হয়।’ (সুনানে তিরমিজি ১০৭১)

কবরে প্রত্যেক মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। তা হলো, ‘তোমার রব কে?’ ‘তোমার ধর্ম কী?’ ‘তোমার নবী কে?’ এসব প্রশ্নের উত্তরে মুমিন বান্দা বলবে, ‘আমার রব আল্লাহ।’ ‘আমার ধর্ম ইসলাম।’ ‘আমার নবী মুহাম্মদ (সা.)।’ অতঃপর মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তার জন্য কবর হতে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। ফলে তার দিকে জান্নাতের কোমল হাওয়া ও সুগন্ধি আসতে থাকে। আর যারা পাপী, গুনাহগার ও অবিশ্বাসী, তারা প্রশ্নের উত্তরে বলবে, ‘আমি কিছুই জানি না।’ তখন মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়। আর তার জন্য কবর হতে জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। তথন তার দিকে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ আসতে থাকে।

এ ছাড়া তার কবরকে এত সংকীর্ণ করে দেওয়া হয় যে, তার এক দিকের পাঁজরের হাড় অপর দিকের পাঁজরের হাড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। অতঃপর তার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়, যার হাতে একটি লোহার হাতুড়ি থাকে। যদি এই হাতুড়ি দ্বারা কোনো পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড়ও ধুলোয় পরিণত হয়ে যাবে। আর সেই ফেরেশতা এই হাতুড়ি দিয়ে তাকে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করতে থাকে। আর সে আঘাতের চোটে এত বিকট শব্দে চিৎকার করে, যা মানুষ ও জিন ব্যতীত পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব সৃষ্টিজীবই শুনতে পায়।

আঘাতের ফলে সে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তারপর আবার তার দেহে আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকে। মূলত পাপী ব্যক্তি কবরেই জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কবর হলো জান্নাতের বাগানসমূহ থেকে একটি বাগান কিংবা জাহান্নামের গর্তসমূহ থেকে একটি গর্ত। (সুনানে তিরমিজি ২৪৬০)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কবর হচ্ছে আখেরাতের সর্বপ্রথম মঞ্জিল। যদি কেউ এ মঞ্জিল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে তার পরবর্তী মঞ্জিলসমূহ অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে যাবে। আর যদি কবরে মুক্তি লাভ করতে না পারে, তাহলে পরবর্তী মঞ্জিলগুলো আরও কঠিন ও জটিল হয়ে যাবে।’ হজরত রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি এমন কোনো ভয়াবহ স্থান দেখিনি, যা কবরের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।’(সুনানে তিরমিজি ২৩০৮)

কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে যথাযথভাবে মহান আল্লাহর ইবাদত করা, কবরের ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা এবং কবরের শাস্তি হতে তার কাছে পরিত্রাণ চাওয়া আমাদের জন্য খুবই জরুরি। দান-সদকা মানুষের উত্তম বিনিয়োগ। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সাদকা দানকারীকে কবরের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে। আর মুমিন ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে আল্লাহর আরশের ছায়ায় অবস্থান করবে।’ (তাবারানি ৭৮৮)

বিভিন্ন দোয়ার মাধ্যমেও জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। হজরত রাসুল (সা.) তার উম্মতদের জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। যা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন কেউ নামাজে তাশাহুদ পড়ো তখন চারটি জিনিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দোয়া পাঠ করবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন আজাবিল কবরি, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আজাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর পরের ফেতনা থেকে এবং দাজ্জালের ফেতনার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’(সহিহ মুসলিম ১২১১)

মহান আল্লাহ সব মুসলিম নারী-পুরুষকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

তথ্যসূত্র: যেমন হবে কবরের জীবন

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *