ইসলাম

কবরের আজাবের ধরন

কবরের আজাব ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর পর মানুষের কর্মের উপর নির্ভর করে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের শুরু। পাপীদের জন্য এটি কঠিন শাস্তি, আর সৎকর্মীদের জন্য শান্তির স্থান। এখানে কবরের আজাবের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বর্ণনার ভিত্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কুরআনের আলোকে কবরের আজাব :

কুরআনে সরাসরি কবরের আজাবের কয়েকটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, বিশেষত পাপী ও অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে।

ফিরআউনের অনুসারীদের শাস্তি :

আল্লাহ বলেন, “তাদের (ফিরআউনের পরিবার) সামনে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় আগুন পেশ করা হয়, আর কিয়ামতের দিন বলা হবে, ‘তোমরা তাদের জাহান্নামের সবচেয়ে কঠিন শাস্তিতে প্রবেশ করাও।’” (সূরা গাফির : ৪৬) ব্যাখ্যা অনুসারে, এটি কবরের অবস্থার উল্লেখ, যেখানে অবিশ্বাসীরা আগুনের শাস্তি ভোগ করতে থাকে।

হাদিসের আলোকে কবরের আজাব :

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের আজাব সম্পর্কে অনেক হাদিসে বিশদভাবে বলেছেন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো :

১. কবরের প্রশ্ন ও ব্যর্থতা :

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হলে তার কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেন : তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? এবং তোমার নবী কে? ঈমানদার সহজেই উত্তর দিতে পারবে। তবে কাফের ও মুনাফিক বলবে, ‘আমি জানি না।’ তখন তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ১৩৭৪, সহিহ মুসলিম: ২৮৭০)

২. কবরের সংকোচন :

হাদিসে এসেছে, কবর পাপী ব্যক্তির জন্য এমনভাবে সংকুচিত হবে যে তার পাঁজরের হাড় একে অপরের সঙ্গে মিশে যাবে। (তিরমিজি: ২৪৬০, মুসনাদে আহমদ : ৬৫৯৭)

৩. আগুন ও বিষাক্ত সাপের আক্রমণ :

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পাপী ব্যক্তির কবরকে জাহান্নামের একটি দরজা বানানো হয়। সেখানে আগুনের শিখা তাকে পোড়াতে থাকে। কবরে বিষাক্ত সাপ ও প্রাণী তাকে কামড়াবে, যারা তার পাপের প্রতিটি ফোঁড়ার জন্য দায়ী। (তিরমিজি: ২৪৬০)

৪. দুর্গন্ধযুক্ত আত্মার শাস্তি :

হাদিসে বলা হয়েছে, কাফেরদের আত্মা কবরে এমনভাবে তিরস্কৃত হয় যে তা পচা মৃতদেহের মতো দুর্গন্ধযুক্ত হয়। ফেরেশতারা সেই আত্মাকে অবমাননা করে বলে,“তোমার জন্য শাস্তি নির্ধারিত।” (সহিহ মুসলিম: ২৮৭১)

কবরের আজাবের বিভিন্ন ধরন :

আগুনের শাস্তি : কবরকে জাহান্নামের দরজা বানানো হয়, যেখানে আগুনের শিখা পাপীদের পোড়াতে থাকে।

অন্ধকার ও ভয় : কবরের গভীর অন্ধকার কাফেরদের জন্য ভীতিকর হয়ে ওঠে।

সংকোচন : মাটির চাপ এমনভাবে পড়ে যে দেহের হাড় ভেঙে চূর্ণ হয়।

ফেরেশতাদের আঘাত : পাপী ব্যক্তিকে লোহা বা আগুনের হাতিয়ার দিয়ে আঘাত করা হয়।

দুর্গন্ধ ও ভয়ংকর দৃশ্য : কবর থেকে আসা দুর্গন্ধ আত্মাকে ভীতিকর অবস্থায় রাখে।

উপসংহার :

কবরের আজাব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, যা মানুষকে সতর্ক করে দেয় যে তাদের দুনিয়ার কাজের ফল মৃত্যুর পরই শুরু হয়। আল্লাহর প্রতি ইমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পাপীদের জন্য এটি একটি ভয়ংকর স্থান, যা পরকালের শাস্তির আগাম সূচনা। এ থেকে বাঁচার জন্য ইসলামের বিধান মেনে চলা ও তওবা করা অপরিহার্য।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *