লেবাসের সুন্নাত ও আদব

পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কিত সুন্নাতসমূহ

১. প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদা কাপড় বেশি পছন্দ করতেন। -সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং-৫৩২৩

২. জামা-পায়জামাসহ সকল প্রকার পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। -আবু দাউদ

৩. পুরুষদের জন্য পায়জামা, লুঙ্গি, প্যান্ট এবং জামা, জুব্বা ও আবা পায়ের টাখনুর ওপরে রাখা। টাখনুর নিচে নামিয়ে পোশাক পরিধান করা হারাম। -বুখারী, হাদীস নং- ৫৭৮৭

টাখনুর নীচে পোশাক পরিধানের ক্ষতি

ক. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অহংকার করে, টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। -বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৭৮৮

খ. হাদীস শরীফে এসেছে, তিন ধরনের লোকের সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না। তাদের গুনাহ মাফ করবেন না। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

তারা হলো- ১. যারা টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখে ২. যারা উপকার করে খোটা দেয় ৩. এমন ব্যবসায়ী মিথ্যা শপথ করে পন্য বিক্রি করে। -আবূ দাউদ, হাদীস নং- ৪০৮৭

গ. টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখলে সে ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে। -শুআবুল ঈমান, হা: নং- ৫৭২০

ঘ. টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখলে ঐ ব্যক্তির নামায আল্লাহ তা’আলা কবুল করবেন না। -আবূ দাউদ, হাদীস নং- ৪০৮৬

ঙ. টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখলে ফযীলতের মহান রাত্রি শবে বরাতেও তার দু’আ কবুল করা হবে না। -শু’আবুল ঈমান, ৩৬২/৫

৪. সাধারণভাবে কাপড় পরিধান করার সময় এই দু’আ পড়া-কবুল الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِي وَلَا قُوَّةٍ অর্থ : “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ পোশাক পরিয়েছেন এবং আমার শক্তি-সামর্থ্য ছাড়াই এটা আমাকে দিয়েছেন।” -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪০২৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং- ৭৪০৯

এবং নতুন কাপড় পরিধান করে এই দু’আ পড়া- الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِى بِهِ عَوْرَتِي وَاتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِ অর্থ : “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এমন পোষাক দান করেছেন যার মাধ্যমে আমি সতর ঢাকতে পারি এবং শোভা গ্রহণ করতে পারি।” -জামে তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৫৬০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৫৫৭

৫. জামা পায়জামা নিসফে সাক অর্থাৎ পায়ের নলার অর্ধেক পর্যন্ত হওয়া ভালো। টাখনু গিরার উপর পর্যন্ত জায়েয।

৬. গোল জামা সতর ঢাকায় অধিক সহায়ক বিধায় তা উত্তম ।

৭. মহিলাদের জন্য শাড়ি পরিধান করা জায়েয। তবে সেলোয়ার, কামিজ ও উড়না পর্দা রক্ষায় অধিক সহায়ক, বিধায় তাই উত্তম ।

৮. প্রাণির ছবিযুক্ত কাপড় ব্যবহার করা নাজায়েয।

৯. এতো টাইট-ফিট পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ, যাতে শরীরের অঙ্গ ফুটে উঠে। তেমনিভাবে বেশি পাতলা কাপড় পরাও নিষেধ যার দ্বারা সতর রক্ষা হয় না ৷

১০. বিজাতীয় লেবাস-পোশাক পরিধান করা নিষেধ।

১১. হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো এবং সবুজ রঙের কাপড়ও ব্যবহার করেছেন। তাই এসব রঙের কাপড়ও মাঝে মধ্যে ব্যবহার করা মুস্তাহাব।

১২. পুরুষের জন্য কুসুম-লাল, হলুদ, জাফরান এবং গোলাপি রঙ নিষিদ্ধ, আর নিরেট লাল অনুত্তম। মহিলাদের জন্য সব রঙ-এর পোশাক জায়েয। —ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/১২৫, শামী ৯/৫১৫\

১৩. বিসমিল্লাহ বলে কাপড় খুলতে শুরু করা এবং খোলার সময় বাম হাত ও বাম পা আগে বের করা সুন্নাত।

১৪. কাপড় পরে আল্লাহ তা’আলার শোকরিয়া আদায় করলে অনেক গুনাহ মাফ হয়। -আবু দাউদ

১৫. পোশাক-পরিচ্ছদ এতো ভালোও চাই না যে, লোকে বলে অমুকের জামাটা বড় দামী, অমুকের পায়জামাটা কী সুন্দর! ইত্যাদি। কারণ এতে অহঙ্কার ও ঔদ্ধত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আবার একেবারে হীন, ময়লা ও নোংরাও না হওয়া উচিত। কারণ এতে অকৃতজ্ঞতা হয়। ফলকথা, নিজের অবস্থা অনুসারে সাদাসিধে ও মধ্যম ধরনের লেবাস-পোশাক পরবে।

১৬. রেশমের কাপড় পরা পুরুষের জন্য হারাম। -আবু দাউদ

১৭. পুরুষের জন্য যে কোনো ধরনের অলঙ্কার পরা হারাম। অবশ্য এক সিকি ওযনের রূপার আংটি জায়েয আছে। -জামে তিরমিযী

১৮. যে অলঙ্কারে বাজনা সৃষ্টি হয় তা মহিলাদের জন্যও পরা নিষেধ । -আবু দাউদ

তথ্যসূত্রঃ

কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *