ইবাদত

মুলাকাত বা সাক্ষাতের সুন্নাত

১. কারও নিকট সাক্ষাতের জন্য এমন সময় যাবে না, যখন গেলে তার ঘুম, ওযীফা কিংবা বিশেষ কোনো কাজ বা আমলের ব্যাঘাত ঘটবে।

২. কারও কাছে পূর্বে অবগত করা ব্যতীত নাশতা বা খাওয়ার সময়ে যাবে না। গেলেও নিজ যিম্মায় খেয়ে যাবে।

৩. প্রথমে অনুমতি চাইবে, অনুমতি হলে সাক্ষাৎ করবে। অন্যথায় ফিরে আসবে।

৪. প্রথম সাক্ষাতে সালাম দিবে। আর মুসাফাহা-মু’আনাকার জন্য অগ্রসর হওয়া অপর পক্ষের কাজ। সে স্বেচ্ছায় অগ্রসর না হলে বা কোনো বিশেষ কাজে লিপ্ত থাকলে মুসাফাহা-মু’আনাকা করতে গিয়ে তাকে বিব্রত করবে না বা তার কাজের ব্যাঘাত ঘটাবে না ।

৫. দীর্ঘ কথা বলতে হলে তার কথা শোনার সময় হবে কি না তা জেনে নিবে এবং তার অনুমতি নিবে।

৬. মুরুব্বী ও গুরুজনদের নিকট সাক্ষাতের জন্য যেতে হলে তাদের সাক্ষাতের জন্যে নির্ধারিত সময়ে যাবে।

মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ফযীলত

হযরত মুআবিয়া রাযি. থেকে বর্ণিত— নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমার মুহাব্বত ওয়াজিব তাদের জন্য যারা আমার জন্য পরস্পর সাক্ষাৎ ও দর্শন করে। -কানযুল উম্মাল ৯/৮

হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, তোমাকে জান্নাতীদের ব্যাপারেঅবগত করাব কি? আমি বললাম, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নবীগণ জান্নাতী, সিদ্দীকগণ জান্নাতী, এবং ঐ লোক জান্নাতী যে শহরের প্রান্তে বসবাসকারী নিজ মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে এবং নিছক আল্লাহর ওয়াস্তে মিলিত হয়। -মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/১৭৪

সাক্ষাতের সময় প্রচলিত কিছু ভুলের সংশোধন

পরস্পর সাক্ষাতের সময় সালাম-মুসাফাহার পর একে অপরের অবস্থা জিজ্ঞাসা করে থাকি। শরঈ বিধান না জানার কারণে এমন কিছু কথা বলা হয়ে থাকে যা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মারাত্মক ক্ষতিকারক। যেমন—

১. অনেকেই জিজ্ঞাসা করে আপনি কেমন আছেন? উত্তরে বলে থাকি, আমি ভালো নাই অথবা মোটামুটি ভালো বা আমার অবস্থা খারাপ ইত্যাদি। এ উত্তরটি আল্লাহ তা’আলার প্রদত্ত ফায়সালার প্রতি অসন্তুষ্টি একাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ তা’আলার ফায়সালার প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ কোনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো, সর্বাবস্থায় সে বলবে, আলহামদুলিল্লাহ! আমি ভালো আছি ।

২. ইদানিং অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে কেমন রাখছেন? এ প্রশ্নটি মারাত্মক ভুল। কেননা এ ক্ষেত্রে যদি অসতর্কভাবে বলে ফেলে আমি ভালো নাই অথবা কষ্টে আছি, তাহলে তো কুফুরী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রশ্ন থেকে বিরত থাকা সকলের জন্য জরুরী।

৩. সাক্ষাৎ বা মুলাকাতে সর্বপ্রথম কথা বলার আগে সালাম বলা সুন্নাত। অতঃপর হালপুরছি করা, অর্থাৎ তবিয়ত কেমন বা কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করা। কেননা হাদীসে বর্ণিত আছে, প্রথমে সালাম তারপর কালাম (কথা বলা)। আমাদের অধিকাংশের বেলায় দেখা যায়, সাক্ষাতের সময় একে অপরকে প্রথমে সালাম না দিয়েই হাল-হাকীকত জিজ্ঞাসা করে থাকি । এমনটি ঠিক নয়।

তথ্যসূত্রঃ

কিতাবঃ তা’লীমুস সুন্নাহ ও আমালে প্রচলিত ভুল সংশোধন সংকলকঃ অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান চৌধুরী খলীফা – মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *