ইবাদত

নামায না পড়ার পরিণাম

ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপরে প্রতিষ্ঠিত। ঈমান আনা, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমজানে রোজা পালন করা। নামাজ গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিত্তি। আল্লাহর ওপর ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম করণীয় আমল। এটি মুসলমান ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বাহ্যিক মাধ্যম। নামাজ পরিত্যাগকারী কাফেরের সমতুল্য।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নামাজ ত্যাগের মতো ভয়াবহ গুনাহে লিপ্ত বর্তমান সমাজের অসংখ্য মুসলমান। প্রতিনিয়ত নামাজ ত্যাগের গুনাহ করতে করতে এমন স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেন এখন আর এটাকে সেভাবে গুনাহের কাজ মনে করা হয় না। আল্লাহর রাসুলের সা. দৃষ্টিতে নামাজ ত্যাগকারী দুনিয়াতে অভিশপ্ত আর আখিরাতে কঠিন শাস্তির যোগ্য। হাশরের মাঠে কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে।

ঈমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম ইবাদত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। পবিত্র কোরআনে প্রায় শতবার সালাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৮৫ বার (ইসম) নাম বা বিশেষ্য হিসেবে এবং ১৫ বার (ফি’ল) ক্রিয়াপদ হিসেবে এই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। (ইসলাম ওয়েব, ‘লাফজুল সালাতি ফিল কোরআন’)সব মুসলিমের আবশ্যকীয় বিধান : মুসলমানমাত্রই নামাজ পড়তে হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ইশারায়—যে অবস্থায় সম্ভব নামাজ ছাড়া যাবে না। একজন মুমিন ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানেই অবস্থান করে, তাকে নামাজ পড়তেই হবে।

নামাজ না পড়া পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। ’ -সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৩

বেনামাজিকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে।

নূহ, ইবরাহিম ও ইসরাঈল আ.-এর ব্যাপারে বর্ণনা করার পর পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা সালাত নষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ‘গাইয়া’ প্রত্যক্ষ করবে। ’’ -সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৯

শুধু পরকালীন শাস্তি নয়, নামাজ না পড়লে ইহকালীন জীবনও বরকতশূন্য হয়ে যায়।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির আসরের সালাত কাজা হয় তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল। -মুসলিম, হাদিস : ১৩০৪

কিয়ামতের দিন লাঞ্চনাকর শাস্তি :

কিয়ামতের দিন বেনামাজি সর্বপ্রথম যে অপদস্থতা ও লাঞ্ছনার শিকার হবে, কোরআনের একটি আয়াতে তার বিবরণ এসেছে, যার মর্ম নিম্নরূপ :‘স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। সেদিন তাদের আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের আহ্বান করা হয়েছিল সিজদা করতে। ’ -সুরা : কালাম, আয়াত : ৪২-৪৩

নামাজ দ্বিনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান :

যে নামাজ পড়ে না তার ঈমান খুুবই দুর্বল। ইসলামে তার হিস্যা খুব সামান্যই। নামাজ না পড়াকে মহানবী (সা.) কুফরি কাজ ও কাফিরের স্বভাব বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, যার ভেতর নামাজ নেই, তার ভেতর দ্বিনের কোনো হিস্যা নেই। -মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৮৫৩৯

নামাজ মুমিন ও কাফিরের পার্থক্যকারী :

নামাজের মাধ্যমে ঈমান ও কুফরের পার্থক্য হয়। জাবির (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া। -মুসলিম, হাদিস : ১৪৮

নামাজ পরকালে মুক্তির অন্যতম উপায়।

বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হলো নামাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, সে কুফরি কাজ করে। -তিরমিজি, হাদিস : ২৬২১

এই হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। একটি ব্যাখ্যা হলো, যখন কেউ নামাজ ছেড়ে দেয়, তখন সে যেন কুফরের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়। তার নামাজ না পড়াটা কুফরি কাজের সমতুল্য। নামাজ না পড়া কুফরিসদৃশ কাজ। তবে ওই ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির বলা যাবে কি না, বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবি রাখে। পরকালে মুক্তির উপায় : নামাজ পড়া কত বড় সৌভাগ্যের বিষয়! আর নামাজ না পড়া কত বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়! হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যত্নের সঙ্গে আদায় করবে, কিয়ামতের দিন এ নামাজ তার জন্য আলো হবে। তার ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের অসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য আলো হবে না। দলিলও হবে না এবং সে আজাব থেকে রেহাইও পাবে না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৭৬

নামাজে অবহেলা করার সময় উল্লেখিত বাণীগুলো সামনে রাখলে নামাজ পড়া আমাদের জন্য সহজ হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *