অফিসে চাকরিতে ইসলামের বিধি বিধান
ইসলামে চাকরি বা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিধান রয়েছে, যা একজন মুসলিমের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয়। হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, নিচে অফিসে চাকরি করার প্রধান ইসলামিক বিধি-বিধান আলোচনা করা হলো:
১. চাকরিটি হালাল হতে হবে
আল কুরআন:
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ
“তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।” (সুরা আল-বাকারা: ১৮৮)
ব্যাখ্যা:
- চাকরিটি অবশ্যই বৈধ হতে হবে। হারাম ব্যবসা, সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, অসৎ উপায়ে সম্পদ অর্জন ইত্যাদি জড়িত থাকলে সেই চাকরি হারাম।
- এমন প্রতিষ্ঠান বা পদে কাজ করা যাবে না যেখানে ইসলামবিরোধী কাজ হয়, যেমন সুদের ব্যাংক, মদের কোম্পানি, ক্যাসিনো ইত্যাদি।
২. চাকরির চুক্তি (কন্ট্রাক্ট) স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত হতে হবে
আল কুরআন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা চুক্তি পূরণ করো।” (সুরা আল-মায়েদা: ১)
ব্যাখ্যা:
- চাকরিতে প্রবেশের সময় চুক্তির শর্তাবলী স্পষ্ট ও ন্যায্য হতে হবে।
- প্রতারণা বা অন্যায় কোনো শর্ত থাকা যাবে না।
৩. নির্দিষ্ট দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ করে, তখন সে তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে।”_ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮৯৪৮)
ব্যাখ্যা:
- অফিসের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা ফরয।
- অফিস সময়ের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে এবং দায়িত্বে ফাঁকি দেওয়া যাবে না।
৪. অফিসের সম্পদ বা সময়ের অপচয় করা যাবে না
আল কুরআন:
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন যে, তোমরা আমানত তার যোগ্য ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দাও।” (সুরা আন-নিসা: ৫৮)
ব্যাখ্যা:
- অফিসের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হারাম।
- অফিস সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত কাজ করা বা অলসতা করা গুনাহ।
৫. ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া হারাম
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“ঘুষদানকারী ও ঘুষগ্রহণকারী উভয়ই জাহান্নামি।”_ (তিরমিজি, হাদিস: ১৩৩৭)
ব্যাখ্যা:
- চাকরির ক্ষেত্রে ঘুষ বা দুর্নীতিতে জড়িত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
৬. নারীদের জন্য পর্দার বিধান মেনে চলা
আল কুরআন:
وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ
“তোমরা জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন কোরো না।” (সুরা আল-আহযাব: ৩৩)
ব্যাখ্যা:
- নারীদের অফিসে কাজ করতে হলে পর্দার বিধান মানতে হবে।
- পুরুষদের সাথে অহেতুক মেলামেশা বা নরমালভাবে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. নামাজ কায়েম করা
আল কুরআন:
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“নামাজ নির্ধারিত সময়ে মুসলমানদের ওপর ফরয করা হয়েছে।” (সুরা আন-নিসা: ১০৩)
ব্যাখ্যা:
- অফিসের কাজের ব্যস্ততার কারণে নামাজ কাজা করা যাবে না।
- অফিসের মধ্যে বা বাইরে নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়ার সুযোগ রাখতে হবে।
৮. সততা ও সত্যবাদিতা বজায় রাখা
আল কুরআন:
وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ
“মিথ্যা কথা বলা থেকে বেঁচে থাকো।” (সুরা হজ: ৩০)
ব্যাখ্যা:
- অফিসে কোনো মিথ্যা বলা বা প্রতারণা করা হারাম।
- কর্মক্ষেত্রে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
৯. সহকর্মীদের সাথে উত্তম আচরণ করা
হাদিস:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।”_ (বুখারি, হাদিস: ১০)
ব্যাখ্যা:
- অফিসের সহকর্মীদের প্রতি সদাচরণ করা ওয়াজিব।
- কোনো প্রকার হিংসা, গিবত বা দুর্ব্যবহার করা যাবে না।
১০. হারাম উপার্জন থেকে বাঁচা
আল কুরআন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সুদ খেও না।” (সুরা আলে ইমরান: ১৩০)
ব্যাখ্যা:
- চাকরি থেকে পাওয়া অর্থ যদি হারাম হয়, তাহলে তা খাওয়াও হারাম হবে।
- সুদের লেনদেন বা হারাম ব্যবসার সাথে যুক্ত হওয়া যাবে না।
উপসংহার
একজন মুসলিম যখন অফিসে চাকরি করে, তখন তাকে অবশ্যই ইসলামের এই বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। হালাল রিজিক উপার্জন করা, সততা বজায় রাখা, নামাজ কায়েম করা এবং দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা একজন মুসলিম চাকরিজীবীর জন্য ফরয।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালালভাবে উপার্জন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।