ঐ সকল লোক যাদেরকে জাহান্নামের ভয় হাসতে দেয় নি
হযরত সায়ীদ ইবনে জুবায়ের (রহঃ)
হাজ্জাজ হযরত সায়ীদ ইবনে জুবায়ের (রহঃ)-কে বলল, আমি শুনতে পেয়েছি যে, আপনি কখনো হাসেন না? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হাসব কিভাবে? জাহান্নাম প্রজ্বলিত হয়ে আছে। শৃংখল প্রস্তুত রয়েছে। জাহান্নামের যাবানিয়া ফেরেশতা প্রস্তুত দাড়িয়ে আছে।
হযরত গযওয়ান (রহঃ)
হযরত গযওয়ান (রহঃ)-এর প্রতিবেশির ঘরে আগুন লেগে গেল । তিনি তা নিভাতে গেলেন। তখন একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তার আঙ্গুলে লেগে গেল । তিনি তা সহ্য করতে পারলেন না। অতঃপর তিনি বললেন, দুনিয়ার আগুন আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। আল্লাহ্র কসম! আল্লাহ্ তা’আলা আজ থেকে আমাকে আর কখনো হাসতে দেখবে না। যতদিন পর্যন্ত আমার একথা না জানা হবে যে, তিনি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন কি না ?
বুযুর্গদের একটি জামাত
বুযুর্গদের এক জামাত আল্লাহ্ তা’আলার সাথে এ অঙ্গীকার করে রেখেছিলেন যে, তারা কখনো হাসবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জান্নাত বা জাহান্নামে আপন ঠিকানা না দেখতে পান। তাদের মধ্যে হামামা দূসী, রবী ইবনে খারাশ, তার ভাই রিবয়ী ইবনে খারাশ, আসলাম আজালী এবং ওহাইব ইবনে ওয়ারদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ফিরিস্তিভুক্ত ছিলেন ।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন, যখন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মেরাজ করানো হল, তখন তাঁর সাথে হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-ও সঙ্গী হিসাবে ছিলেন। হঠাৎ করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেলেন । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন—
يَا جِبْرِيلُ مَا هُذِهِ الْهَدَةُ ؟ قَالَ حَجَرُ اَرْسَلَهُ اللهُ مِنْ شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَهُوَ يَهْوِى مُنْذُ سَبْعِينَ عَامًا فَبَلَغَ قَعْرَهَا الْأَنَ –
হে জিব্রাঈল! এ শব্দ কিসের? হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, এটা হল একটি পাথর, যা আল্লাহ্ তা’আলা জাহান্নামের কিনারা থেকে নিক্ষেপ করেছেন । আজ সত্তুর বছর যাবৎ তা নিচের দিকে পড়ছিল । অদ্য তা জাহান্নামের তলদেশে পতিত হল।
হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন, এরপর থেকে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো জোরে হাসেননি, শুধু মুচকি হাসি দিতেন । —ইবনে আবিদ্দুনয়া
হযরত আবু যর (রাযিঃ) কর্তৃক বর্ণিত, এক দীর্ঘ হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে যে, আমি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করলাম, মূসা (আঃ)-এর সহীফাগুলোতে কী ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, সবগুলোই ছিল উপদেশ। যেমন, আমার অবাক লাগে ঐ ব্যক্তির উপর, যে মউতকে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও খুশি থাকে। আমার অবাক লাগে ঐ ব্যক্তির উপর, যে জাহান্নামকে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও হাসতে থাকে । —সহীহ ইবনে হিব্বান
ঐ সকল লোক যারা জাহান্নামের ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন
অনেক বুযুর্গানে-দ্বীন এমন রয়েছেন, যারা জাহান্নামের ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ এ ভয়ে জীবনও দিয়ে দিয়েছেন । যেমন— হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)
একদা হযরত উমর (রাযিঃ) জনৈক লোককে তাহাজ্জুদে সূরা তূর পড়তে শুনতে পেলেন । লোকটি যখন এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলেন— إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعُ مَا لَهُ مِنْ دَافِعِ
আপনার পালনকর্তার শাস্তি অবশ্যম্ভাবী। তার কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না । –সূরা তূর ঃ ৭-৮
তখন হযরত উমর (রাযিঃ) কা’বার রবের কসম খেয়ে বললেন, আল্লাহ তা’আলা সত্যই বলেছেন। এরপর তিনি ঘরে ফিরে আসলেন । এক মাস পর্যন্ত অসুস্থ থাকলেন । লোকেরা তাঁর শুশ্রুষায় আসতে থাকল। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর কেউ তাঁর রোগ নির্ণয় করতে পারল না।
বসরার আবেদগণ
বসরার আবেদগণের বিশাল এক জামাত এমন ছিলেন, যারা জাহান্নামের ভয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং এ থেকেই তারা শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আলা ইবনে যিয়াদ এবং আতা সুলামী (রহঃ)ও ছিলেন। হযরত আতা সুলামী (রহঃ) তো এক নাগাড়ে কয়েক বছর যাবৎ শয্যাশায়ী ছিলেন। তার ধারণা ছিল, যেই ব্যাধিতে হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয (রহঃ) এর ইন্তেকাল হয়েছে, সেটা তাকেও স্পর্শ করেছে। আর এ কারণেই তার ভয় আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল ।
জনৈক আনসারী সাহাবী
জনৈক আনসারী যুবকের অন্তরে জাহান্নামের ভয় প্রবেশ করল, ফলে সে ঘরেই বসে গেল। একদা নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট গমন করলেন । তখন সে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়িয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকড়ে ধরে এক চিৎকার মারল এবং তার প্রাণ বায়ু উড়ে গেল। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এ সাথীর জন্য কাফন-দাফনের সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করো।জাহান্নামের ভয় তার কলিজাকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে।—মুসনাদে আহমদ
উক্ত ঘটনাটিকে আল্লামা ইবনে আবীদ্দুনয়া (রহঃ) আরও দীর্ঘ করে উল্লেখ করেছেন। তাতে এটাও রয়েছে যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান, কসম ঐ জাতের যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছেন।
ইমাম দাউদ তায়ী
ইমাম দাউদ তায়ী (রহঃ) ছিলেন সূফী সাধকগণের দৃষ্টিতে উঁচু তবকার একজন । তিনি বহু বছর যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। যার মূল কারণ ছিল এমন একটি আয়াতের বারংবার পুনরাবৃত্তি করা, যার মধ্যে জাহান্নামের আলোচনা উল্লিখিত ছিল। একদা সকালে লোকেরা তাকে মৃত দেখতে পেল। তখন তার মাথার নীচে একটি ইট রাখা ছিল।
মানসূর ইবনে আম্মারের কেচ্ছা
মানসূর ইবনে আম্মার (রহঃ) এমন এক লোকের সাথে কুফায় গেলেন, যে রাতভর আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে মুনাজাতে লিপ্ত থাকে।
দুই অচেনা লোকের অবস্থা
আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) বলেন, একদা আমি বল্খ শহরে কামারদের পাশে বসা ছিলাম। হঠাৎ, একজন লোক তাদের হাপরের পাশে এসে আগুন দেখল। আগুন দেখেই সে পড়ে গেল। আমরা তাকে ভাল করে দেখতে দেখতেই তার মউত হয়ে গিয়েছিল। —ইবনে আবিদ্দুয়া
অন্য এক লোকের ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, সে কামারের হাপরের নিকট গেল । তথাকার আগুন দেখে সে কাঁদতে লাগল । এক পর্যায়ে সে চিৎকার করে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল । —ইবনে আবিদ্দুয়া
হযরত মানসূর ইবনে মু’তামির
হযরত মানসূর ইবনে মু’তামিরের যখন ইনতেকাল হল, তখন তার মা চিৎকার করে বলতে লাগল— وا قَتِيْلَ جَهَنَّمَاهُ হে জাহান্নাম কর্তৃক বধিত। বা জাহান্নামের হাতে নিহত। আমার পুত্রকে একমাত্র জাহান্নামের ভয় ছাড়া অন্য কিছু হত্যা করেনি। —ইবনে আবিদ্দুয়া
হযরত আলী ইবনে ফুযায়েল ইবনে আয়ায
হযরত আলী ইবনে ফুযায়েল ইবনে আয়ায (রহঃ)-এর ইন্তেকাল হয় নিম্নোক্ত আয়াত শুনার দরুন— وَ لَوْ تَرى إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوْا يُلَيْتَنَا نُرَدُّ وَ لَا نُكَذِّبَ بِأَيْتِ رَبِّنَا وَ نَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওহাব (রহঃ) কিতাবুল আহওয়াল নামক গ্রন্থ অধ্যয়ন করছিলেন। যখন তিনি জাহান্নামের বিবরণসমূহ অধ্যয়ন করলেন, তখন এক চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে গেলেন। তাকে লোকেরা ধরাধরি করে বাড়ীতে পৌছিয়ে দিল। এরপর কিছুদিন জীবিত থেকে তিনি আল্লাহ্ তা’আলার প্রিয় হয়ে গেলেন।
তথ্যসূত্র:
বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী