ইসলাম

পিতা-মাতার অবাধ্যতা করলে রিজিক সংকুচিত হয়ে যায়

রিজিক কেবল অর্থ, সম্পদ বা খাদ্যের পরিমাণ নয়, বরং এতে বরকত থাকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ অনেক সম্পদ অর্জন করলেও যদি তা দ্রুত শেষ হয়ে যায়, শান্তি না থাকে, কিংবা জীবনের বিভিন্ন বাধায় পড়তে হয়, তাহলে সেটি প্রকৃত রিজিক নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে, পিতা-মাতার সন্তুষ্টি রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম, আর তাদের অবাধ্যতা রিজিকে সংকুচিত করে। অনেক মানুষ কঠোর পরিশ্রম করেও আর্থিক উন্নতি করতে পারে না, কারণ তারা পিতা-মাতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, যারা পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, তারা দুনিয়াতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে রিজিক সংকট অন্যতম। বাস্তব জীবনেও আমরা এর বহু উদাহরণ দেখতে পাই।


পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও রিজিকের সরাসরি সম্পর্ক

ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম উপায় হলো পিতা-মাতার দোয়া ও তাদের প্রতি সদাচার।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন: وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

“এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।” (সূরা আল-ইসরা: ২৩)

যারা পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো আচরণ করে, আল্লাহ তাদের রিজিকে বরকত দেন।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:“যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার হায়াত দীর্ঘ হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।”(সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০৬৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৫৭)

পিতা-মাতা আত্মীয়তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা তাদের অবজ্ঞা করে, তাদের রিজিক সংকুচিত হতে বাধ্য।

একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেছেন: “দুই গুনাহ এমন, যার শাস্তি দুনিয়াতেই দ্রুত আসে—(১) জুলুম করা এবং (২) পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা।”(তিরমিজি, হাদিস: ২৫১১)

এর মানে হলো, যারা পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, তারা শুধু আখিরাতেই শাস্তি পাবে না, বরং দুনিয়াতেই তার প্রভাব পড়বে। তাদের রিজিকে বরকত থাকবে না, অর্থ হাতে এলেও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে, এবং তারা আর্থিক সংকটে ভুগবে।

বাস্তব উদাহরণ: পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও রিজিক সংকট

১. ধনী থেকে দরিদ্র হয়ে যাওয়ার কাহিনি

এক ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন, যার বিশাল সম্পদ ছিল। কিন্তু তিনি বৃদ্ধ বয়সে তার মায়ের প্রতি উদাসীন হয়ে যান, তার দেখাশোনা করতেন না। কষ্ট পেয়ে মা আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসায় ক্ষতি হতে শুরু করল, এবং অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি দেউলিয়া হয়ে পড়লেন। তার সম্পদ চলে গেল, কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন না যে, এটি পিতা-মাতার প্রতি অবজ্ঞার ফল।

২. চাকরি হারানোর ঘটনা

এক যুবক উচ্চশিক্ষিত ছিলেন, কিন্তু বারবার চাকরি হারাচ্ছিলেন। তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন, তবুও কোনো চাকরিতে বেশি দিন স্থায়ী হতে পারছিলেন না। পরে এক আলেম তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কি তোমার পিতা-মাতার প্রতি অন্যায় করেছ?” তখন তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি তার বাবার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতেন। পরে তিনি তার বাবার কাছে ক্ষমা চান, খেদমত করতে শুরু করেন, এবং কিছুদিন পরই একটি ভালো চাকরি পান, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন স্থায়ী হন।

৩. ব্যবসায় ব্যর্থতা

একজন তরুণ ব্যবসায়ী ছিলেন, যিনি প্রচুর বিনিয়োগ করেও সফলতা পাচ্ছিলেন না। তার ব্যবসায় বারবার ক্ষতি হচ্ছিল। পরামর্শের পর তিনি বুঝতে পারেন যে, তার মা তার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি মায়ের সন্তুষ্টির জন্য কাজ শুরু করেন, তার যত্ন নেন, এবং তার দোয়া নেন। এরপর তার ব্যবসায় অপ্রত্যাশিতভাবে উন্নতি হতে শুরু করে।


রিজিক সংকট থেকে বাঁচার উপায়

১. পিতা-মাতার খেদমত করা: তাদের সেবা করা, তাদের খুশি রাখা এবং তাদের দোয়া নেওয়া রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম।

২. তওবা করা: যদি আগে কোনো অবাধ্যতা করে থাকি, তবে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

৩. সদাচারী হওয়া: শুধু মৌখিকভাবে নয়, কাজের মাধ্যমেও তাদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে।

৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা: আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রিজিকে বরকত আনে।

৫. সদকা করা: গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করলে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেন।

৬. হালাল উপার্জনের প্রতি যত্নশীল হওয়া: যারা পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, তারা অনেক সময় হারাম পথে রিজিক কামাই করতে বাধ্য হয়, যা আরও বেশি সংকট সৃষ্টি করে।


সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *