ইসলাম

কিয়ামত দিবসে আকাশ, চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির অবস্থা:

কিয়ামত দিবস আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রকাশের দিন। সেদিন আকাশ, চন্দ্র, সূর্য এবং তারকারাজি—যেগুলো সৃষ্টিজগতের স্থিতিশীল উপাদান হিসেবে গণ্য হয়—ভয়াবহ পরিবর্তনের শিকার হবে। কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।


কিয়ামত দিবসে আকাশের অবস্থা

১. আকাশ ফেটে যাবে

আল্লাহ বলেন: “যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে।” (সূরা আল-ইনফিতার: ১) ➡️ কিয়ামতের দিন আকাশ ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।

২. আকাশ রক্তবর্ণ হবে

আল্লাহ বলেন: “তখন আকাশ হবে গলিত তামার মতো।” (সূরা আল-মা’আরিজ: ৮) ➡️ আকাশের রঙ ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

৩. আকাশ গুটিয়ে ফেলা হবে

আল্লাহ বলেন: “সেদিন আকাশকে আমি গ্রন্থের মতো গুটিয়ে ফেলবো।”(সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৪) ➡️ আকাশের সমাপ্তি ঘটবে, এটি আর স্থায়ী থাকবে না।

৪. আকাশের ফাটল এবং ভয়াবহ শব্দ

হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “কিয়ামতের দিন আকাশ ফেটে যাবে এবং এক ভয়াবহ শব্দ শোনা যাবে।” (মুসলিম: ২৯৫০)


কিয়ামত দিবসে চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির অবস্থা

১. চন্দ্র-সূর্যের একত্রিত হওয়া

আল্লাহ বলেন: “যখন সূর্যকে গুটিয়ে ফেলা হবে এবং চন্দ্র-সূর্যকে একত্রিত করা হবে।” (সূরা আল-কিয়ামাহ: ৯) ➡️ চন্দ্র ও সূর্যের আলোকিত অবস্থা বিলুপ্ত হবে, আর তারা একত্রিত হয়ে যাবে।

২. তারকারাজি ঝরে পড়বে

আল্লাহ বলেন: “যখন তারাগুলো খসে পড়বে।” (সূরা আল-ইনফিতার: ২) ➡️ আকাশের তারকারাজি, যা মানুষের কাছে সৌন্দর্যের প্রতীক, তা সেদিন ঝরে পড়ে যাবে।

৩. সূর্যের আলো নিভে যাবে

আল্লাহ বলেন: “যখন সূর্যকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করা হবে।”(সূরা আত-তাকবীর: ১) ➡️ সূর্যের আলোকিত অবস্থা চিরতরে নিভে যাবে।

৪. সূর্যের নিকটবর্তী হওয়া

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “সূর্য এত নিকটে আসবে যে, মানুষের ঘাম তাদের শরীরের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।” (সহীহ বুখারি: ৬৫৪৮)

৫. চাঁদের আলো নিভে যাবে

আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন: “চাঁদ, সূর্য ও তারকারাজি—এ সবই আল্লাহর নির্দেশে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে।” (তিরমিজি: ২৪৪১)

৬. তারকারাজির খসে পড়া

রাসূলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন: “কিয়ামতের দিন তারকারাজি তাদের কক্ষপথ ত্যাগ করে খসে পড়বে এবং পৃথিবীর ওপর আঘাত হানবে।” (সহীহ মুসলিম: ২২৮৩)

উপসংহার

কিয়ামতের দিন আকাশ, চন্দ্র, সূর্য এবং তারকারাজির স্থিতিশীল অবস্থার ভয়াবহ পরিবর্তন হবে। আকাশ ফেটে যাবে, সূর্যের আলো নিভে যাবে, চাঁদ তার অবস্থান হারাবে এবং তারকারাজি ঝরে পড়বে। এসব ঘটনা আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রকাশ এবং মানুষের কাছে আখিরাতের প্রস্তুতির একটি গুরুতর বার্তা। আমরা আল্লাহর নিকট সেই দিনের ভয়াবহতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমিন।

তথ্যসূত্র :

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা : জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *