ইবাদত

তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর

তাকওয়া ইসলামের এক মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, যা মুমিনের জীবনকে আলোকিত করে এবং তাকওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রধান মাধ্যম। তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর হল এমন অবস্থা, যেখানে একজন মুমিন শুধুমাত্র হারাম কাজ থেকে দূরে থাকাই নয়, বরং সন্দেহযুক্ত ও অপছন্দনীয় বিষয় থেকেও বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। প্রকৃত মুমিন এমন ব্যক্তি, যে নিজের ঈমান ও আত্মার পবিত্রতা রক্ষার জন্য কিছু জায়েয কাজও ত্যাগ করে, যদি এতে গুনাহের সম্ভাবনা থেকে যায়।

সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে দূরে থাকা: প্রকৃত তাকওয়ার মানদণ্ড

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদিসে এসেছে,

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَ ذَلِكَ أُمُورٌ مُشْتَبِهَاتٌ، لاَ يَدْرِي كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ أَمِنَ الحَلاَلِ هِيَ أَمْ مِنَ الحَرَامِ، فَمَنْ تَرَكَهَا اسْتِبْرَاءً لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ فَقَدْ سَلِمَ، وَمَنْ وَاقَعَ شَيْئًا مِنْهَا، يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَ الحَرَامَ (ترمذى ١٢٠٥)

“হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট। আর এদুয়ের মাঝখানে রয়েছে কিছু সন্দেহজনক জিনিস। অধিকাংশ লোকেরা অবগত নয় যে এগুলো হালাল নাকি হারাম। কাজেই যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক জিনিস থেকে দূরে থাকল, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে হিফাযত করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে জড়িয়ে পড়ল, সে হারামের মধ্যে ফেঁসে গেল।’’ (তিরমিযী: ১২০৫)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, প্রকৃত তাকওয়ার পরীক্ষা সন্দেহযুক্ত বিষয়ে দেখা দেয়। যে ব্যক্তি নিজের দ্বীন রক্ষায় সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকেও বিরত থাকে, সে প্রকৃত নিরাপত্তার পথ অবলম্বন করে।

তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তরের বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. হারাম থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা: প্রকৃত মুত্তাকি ব্যক্তি কখনো হারামে লিপ্ত হয় না এবং সর্বদা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে।

২. সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার: যে বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবে হালাল বা হারাম নয়, বরং সন্দেহজনক, সে সবকিছু থেকেও দূরে থাকে।

৩. ন্যূনতম গুনাহ থেকেও বাঁচার প্রচেষ্টা: সামান্যতম গুনাহের সম্ভাবনা থাকলেও তা এড়িয়ে চলে। কারণ, সামান্য গুনাহ ধীরে ধীরে বড় গুনাহের দিকে ধাবিত করতে পারে।

৪. আল্লাহর ভয় হৃদয়ে ধারণ করা: সর্বদা এই চিন্তায় থাকে যে, যদি এই কাজ আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়, তাহলে তা থেকে বিরত থাকা উচিত।

৫. জীবনকে সুন্নাহ অনুযায়ী গঠন: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসরণ করার চেষ্টা করা, যেন সন্দেহজনক বিষয় থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর উপায়

১. নফল ইবাদতের অভ্যাস: শুধু ফরজ ইবাদত যথেষ্ট নয়, বরং নফল ইবাদতের মাধ্যমে আত্মাকে পবিত্র করা জরুরি। তাহাজ্জুদ, নফল রোযা, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি অভ্যাস করতে হবে।

২. সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা: বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার গুনাহ থেকে আত্মাকে দূরে রাখা।

৩. সতর্ক জীবনযাপন: যে বিষয় নিয়ে দ্বিধা থাকে, সে বিষয়ে আলেমদের পরামর্শ নেওয়া এবং নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলা।

৪. আল্লাহর ভয় বৃদ্ধি করা: আল্লাহর আয়াত ও রাসূলের হাদিসের উপর গভীর চিন্তাভাবনা করা, যাতে অন্তরে তাকওয়া দৃঢ় হয়।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *