কোরআন হাদীসের আলোকে যিনা বা ব্যভিচারের শাস্তি
পবিত্র কোরআনে ব্যভিচারের বিধান:
১,যিনার ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না:
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : ্ولَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا
আর যিনা-ব্যভিচারের কাছেও যেও না, তা হচ্ছে অশ্লীল কাজ আর অতি জঘন্য পথ। বনী ইসরাঈল (আয়াত : 32)
২,ব্যভিচারের শাস্তির নির্দেশ:
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :
وَٱلَّٰتِي يَأۡتِينَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مِن نِّسَآئِكُمۡ فَٱسۡتَشۡهِدُواْ عَلَيۡهِنَّ أَرۡبَعَةٗ مِّنكُمۡۖ فَإِن شَهِدُواْ فَأَمۡسِكُوهُنَّ فِي ٱلۡبُيُوتِ حَتَّىٰ يَتَوَفَّىٰهُنَّ ٱلۡمَوۡتُ أَوۡ يَجۡعَلَ ٱللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلٗا
তোমাদের নারীদের মধ্যে থেকে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী নিয়ে এসো৷ আর চার জন সাক্ষ্য দিয়ে যাবার পর তাদেরকে (নারীদের) গৃহে আবদ্ধ করে রাখো, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু এসে যায় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোন পথ বের করে দেন। আন নিসা (আয়াত : 15)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :
وَٱلَّذَانِ يَأۡتِيَٰنِهَا مِنكُمۡ فََٔاذُوهُمَاۖ فَإِن تَابَا وَأَصۡلَحَا فَأَعۡرِضُواْ عَنۡهُمَآۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ تَوَّابٗا رَّحِيمًا
আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা (দুজন) এতে লিপ্ত হবে তাদেরকে শাস্তি দাও৷ তারপর যদি তারা তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দাও৷ কেননা আল্লাহ বড়ই তাওবা কবুলকারী ও অনুগ্রশীল৷ আন নিসা (আয়াত : 16)
৩,ব্যভিচারের শাস্তির বিধান:
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :
ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي فَٱجۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ
ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী উভয়ের প্রত্যেককে এক শত বেত্রাঘাত করো৷ আর আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোন মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনো৷ আর তাদেরকে শাস্তি দেবার সময় মু’মিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে। আন-নূর (আয়াত : 2)
৪,ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিনীকে বিয়ের ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম:
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :
ٱلزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوۡ مُشۡرِكَةٗ وَٱلزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكٞۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ
ব্যভিচারী যেন ব্যভিচারিনী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে এবং ব্যভিচারিনীকে যেন ব্যভিচারী বা মুশরিক ছাড়া আর কেউ বিয়ে না করে ৷ আর এটা হারাম করে দেয়া হয়েছে মু’মিনদের জন্য। আন-নূর (আয়াত : 3)
৫,সতী-সাধ্বী নারীর বিরুদ্ধে অপবাদের শাস্তি:
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :
وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ ثُمَّ لَمۡ يَأۡتُواْ بِأَرۡبَعَةِ شُهَدَآءَ فَٱجۡلِدُوهُمۡ ثَمَٰنِينَ جَلۡدَةٗ وَلَا تَقۡبَلُواْ لَهُمۡ شَهَٰدَةً أَبَدٗاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ
আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না৷ তারা নিজেরাই ফাসেক৷ আন-নূর (আয়াত : 4)
৬,নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মীমাংসা:
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন :
وَٱلَّذِينَ يَرۡمُونَ أَزۡوَٰجَهُمۡ وَلَمۡ يَكُن لَّهُمۡ شُهَدَآءُ إِلَّآ أَنفُسُهُمۡ فَشَهَٰدَةُ أَحَدِهِمۡ أَرۡبَعُ شَهَٰدَٰتِۢ بِٱللَّهِ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلۡخَٰمِسَةُ أَنَّ لَعۡنَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ إِن كَانَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ وَيَدۡرَؤُاْ عَنۡهَا ٱلۡعَذَابَ أَن تَشۡهَدَ أَرۡبَعَ شَهَٰدَٰتِۢ بِٱللَّهِ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ وَٱلۡخَٰمِسَةَ أَنَّ غَضَبَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَآ إِن كَانَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ
আর যারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে অভিযোগ দেয় এবং তাদের কাছে তারা নিজেরা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন সাক্ষী থাকে না , তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির সাক্ষ হচ্ছে এই যে, সে চার বার আল্লাহর নামে কসম খেয়ে সাক্ষ দেবে যে, সে নিজের অভিযোগে সত্যবাদী। এবং পঞ্চম বার বলবে, তার প্রতি আল্লাহর লা’নত হোক যদি সে (নিজের অভিযোগে) মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। আর স্ত্রীর শাস্তি এভাবে রহিত হতে পারে যদি সে চার বার আল্লাহর নামে কসম খেয়ে সাক্ষ দেয় যে, এ ব্যক্তি(তার অভিযোগে) মিথ্যাবাদী। এবং পঞ্চমবার বলে, তার নিজের ওপর আল্লাহর গযব নেমে আসুক যদি এ ব্যক্তি (তার অভিযোগে) সত্যবাদী হয়। আন-নূর (আয়াত : 6) আন-নূর (আয়াত : 7) আন-নূর (আয়াত : 8) আন-নূর (আয়াত : 9)
পবিত্র হাদীসে ব্যভিচারের বিধান:
১,বিবাহিত যেনাকারীর শাস্তি রজম:
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ، أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ فَسَمِعَهُمْ وَهُمْ، يَذْكُرُونَ الْقَتْلَ فَقَالَ إِنَّهُمْ لَيَتَوَاعَدُونِي بِالْقَتْلِ فَلِمَ يَقْتُلُونِي وَقَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ لا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلاَّ فِي إِحْدَى ثَلاَثٍ رَجُلٌ زَنَى وَهُوَ مُحْصَنٌ فَرُجِمَ أَوْ رَجُلٌ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ رَجُلٌ ارْتَدَّ بَعْدَ إِسْلاَمِهِ ” . فَوَاللَّهِ مَا زَنَيْتُ فِي جَاهِلِيَّةٍ وَلاَ فِي إِسْلاَمٍ وَلاَ قَتَلْتُ نَفْسًا مُسْلِمَةً وَلاَ ارْتَدَدْتُ مُنْذُ أَسْلَمْتُ
আবূ উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত। উসমান ইবনে আফফান (রা.) (ছাদের) উপর থেকে বিদ্রোহীদের প্রতি তাকালেন। হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনে তিনি বললেন, তারা আমাকে হত্যার সংকল্প করছে। কেন তারা আমাকে হত্যা করবে? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনটি কারণের কোন একটি বিদ্যমান না থাকলে কোন মুসলিমকে হত্যা করা বৈধ নয়। বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করলে, তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা অথবা যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে অথবা যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর মুরতাদ হয়ে যায়। আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগেও কখনো যেনা করিনি এবং ইসলামী যুগেও না, আমি কোন মুসলিমকে হত্যা করিনি এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে মুরতাদ হইনি। (ইবনে মাজাহ ২৫৩৩)
২,বিবাহিত এবং অবিবাহিতদের ব্যভিচারের শাস্তির ভিন্নতা:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، وَزَيْدِ بْنِ خَالِدٍ، وَشِبْلٍ، قَالُوا كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ أَنْشُدُكَ اللَّهَ إِلاَّ قَضَيْتَ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللَّهِ . فَقَالَ خَصْمُهُ وَكَانَ أَفْقَهَ مِنْهُ اقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللَّهِ وَائْذَنْ لِي حَتَّى أَقُولَ . قَالَ ” قُلْ ” . قَالَ إِنَّ ابْنِي كَانَ عَسِيفًا عَلَى هَذَا وَإِنَّهُ زَنَى بِامْرَأَتِهِ فَافْتَدَيْتُ مِنْهُ بِمِائَةِ شَاةٍ وَخَادِمٍ فَسَأَلْتُ رَجُلاً مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فَأُخْبِرْتُ أَنَّ عَلَى ابْنِي جَلْدَ مِائَةٍ وَتَغْرِيبَ عَامٍ وَأَنَّ عَلَى امْرَأَةِ هَذَا الرَّجْمَ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لأَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللَّهِ الْمِائَةُ الشَّاةُ وَالْخَادِمُ رَدٌّ عَلَيْكَ وَعَلَى ابْنِكَ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيبُ عَامٍ وَاغْدُ يَا أُنَيْسُ عَلَى امْرَأَةِ هَذَا فَإِنِ اعْتَرَفَتْ فَارْجُمْهَا ” . قَالَ هِشَامٌ فَغَدَا عَلَيْهَا فَاعْتَرَفَتْ فَرَجَمَهَا
আবূ হুরায়রা, যায়েদ ইবনে খালিদ ও শিবল (রা.) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা করে দিন। তার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তার প্রতিপক্ষ বললো, হাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। তিনি বলেন. বলো। লোকটি বললো, আমার পুত্র এই ব্যক্তির শ্রমিক ছিল, সে তার স্ত্রীর সাথে যেনা করেছে। আমি তার পক্ষ থেকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয় যে, আমার পুত্রকে এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে, আর এই ব্যক্তির স্ত্রীকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু’জনের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তুমি তোমার এক শত বকরী ও গোলাম ফেরত লও এবং তোমার পুত্রকে এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করা হবে। আর হে উনাইস! তুমি আগামী কাল সকালে তার স্ত্রীর নিকট যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাকে রজম করবে। অধস্তন রাবী হিশাম বলেন, উনায়স (রা.) পরদিন সকালে তার নিকট গেলো এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম করেন। (বুখারী ২৩১৫, মুসলিম ১৬৭৯, ইবনে মাজাহ ২৫৪৯)
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ خُذُوا عَنِّي خُذُوا عَنِّي قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلاً الْبِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيبُ سَنَةٍ وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِائَةٍ وَالرَّجْمُ
উবাদা ইবনুস সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে (দীনের বিধান) শিখে নাও। আল্লাহ তাদের (মহিলিাদের জন্য একটি পথ করে দিয়েছেন। যদি অবিবাহিত পুরুষ অবিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের প্রত্যেককে এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে। আর যদি বিবাহিত পুরুষ বিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত এবং রজম করতে হবে। (ইবনে মাজাহ ২৫৫০)
৩,কেউ গোপনে ব্যভিচার করে তার স্বীকারোক্তি প্রদান করলে তার বিধান:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ أَتَى رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَنَادَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي زَنَيْتُ . فَأَعْرَضَ عَنْهُ فَتَنَحَّى تِلْقَاءَ وَجْهِهِ فَقَالَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي زَنَيْتُ . فَأَعْرَضَ عَنْهُ حَتَّى ثَنَى ذَلِكَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا شَهِدَ عَلَى نَفْسِهِ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ دَعَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” أَبِكَ جُنُونٌ ” . قَالَ لاَ . قَالَ ” فَهَلْ أَحْصَنْتَ ” . قَالَ نَعَمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” اذْهَبُوا بِهِ فَارْجُمُوهُ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) বরাতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলো। তখন তিনি মসজিদে বসে ছিলেন। সে তখন উচ্চস্বরে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ব্যভিচার করেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে লোকটি তার (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) চেহারার দিকে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ব্যভিচার করেছি। এবারও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করল। এরপর সে যখন চারবার নিজের উপর সাক্ষ্য দিল, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তোমার মধ্যে কি পাগলামী আছে? সে বলল, না। তুমি কি বিবাহিত? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা কর। (মুসলিম,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭৩)
৪,পাথর মেরে হত্যা করা প্রসঙ্গে:
قَالَ حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ نُعَيْمِ بْنِ هَزَّالٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ يَتِيمًا فِي حِجْرِ أَبِي . فَأَصَابَ جَارِيَةً مِنَ الْحَىِّ فَقَالَ لَهُ أَبِي ائْتِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبِرْهُ بِمَا صَنَعْتَ لَعَلَّهُ يَسْتَغْفِرُ لَكَ وَإِنَّمَا يُرِيدُ بِذَلِكَ رَجَاءَ أَنْ يَكُونَ لَهُ مَخْرَجًا فَأَتَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي زَنَيْتُ فَأَقِمْ عَلَىَّ كِتَابَ اللَّهِ . فَأَعْرَضَ عَنْهُ فَعَادَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي زَنَيْتُ فَأَقِمْ عَلَىَّ كِتَابَ اللَّهِ . حَتَّى قَالَهَا أَرْبَعَ مِرَارٍ . قَالَ صلى الله عليه وسلم ” إِنَّكَ قَدْ قُلْتَهَا أَرْبَعَ مَرَّاتٍ فَبِمَنْ ” . قَالَ بِفُلاَنَةَ . قَالَ ” هَلْ ضَاجَعْتَهَا ” . قَالَ نَعَمْ . قَالَ ” هَلْ بَاشَرْتَهَا ” . قَالَ نَعَمْ . قَالَ ” هَلْ جَامَعْتَهَا ” . قَالَ نَعَمْ . قَالَ فَأَمَرَ بِهِ أَنْ يُرْجَمَ فَأُخْرِجَ بِهِ إِلَى الْحَرَّةِ . فَلَمَّا رُجِمَ فَوَجَدَ مَسَّ الْحِجَارَةِ جَزِعَ فَخَرَجَ يَشْتَدُّ فَلَقِيَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُنَيْسٍ وَقَدْ عَجَزَ أَصْحَابُهُ فَنَزَعَ لَهُ بِوَظِيفِ بَعِيرٍ فَرَمَاهُ بِهِ فَقَتَلَهُ ثُمَّ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ ” هَلاَّ تَرَكْتُمُوهُ لَعَلَّهُ أَنْ يَتُوبَ فَيَتُوبَ اللَّهُ عَلَيْهِ
ইয়াযীদ ইবন নুআয়েম ইবন হুযাল (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মা’ইয ইবন মালিক ইয়াতীম ছিলেন এবং তিনি আমার পিতার নিকট লালিত-পালিত হন। একদা তিনি মহল্লার একটি মেয়ের সাথে ব্যভিচার করেন। তখন আমার পিতা তাকে বলেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাও এবং অবস্থা সম্পর্কে তাঁকে অবহিত কর। সম্ভবতঃ তিনি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন-তোমার অপকর্মের জন্য। আর তার এরূপ বলার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, যাতে মা’ইযের নাজাতের কোন ব্যবস্থা হয়ে যায়। এরপর মা’ইয (রাঃ) তাঁর নিকট যান এবং বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যিনা করেছি, আপনি আমার উপর আল্লাহ্র কিতাবের হুকুম কার্যকরী করুন। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তিনি দ্বিতীয়বার বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যিনা করেছি, আপনি আমার উপর আল্লাহ্র কিতাবের হুকুম কার্যকরী করুন। এ ভাবে তিনি চারবার তার ক্রটির কথা স্বীকার করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তো চারবার তোমার দোষের কথা স্বীকার করেছ। এখন বলঃ তুমি কার সাথে যিনা করেছ? তখন তিনি বলেনঃ অমুক মেয়ের সাথে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তার সাথে শয়ন করেছিলে? মা’ইয বলেনঃ হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি কি তার সাথে মিলিত হয়েছিলে? মা’ইয বলেনঃ হ্যাঁ। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি তার সাথে সংগম করেছিলে? মা’ইয বলেনঃ হ্যাঁ। এ সব শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রজম বা পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দেন। তাকে হাররা নামক স্থানে নেওয়া হয় এবং পাথর মারা শুরু হলে ভয়ে অস্থির হয়ে তিনি পালাতে থাকেন। এ সময় আবদুল্লাহ ইবন উনায়স তাকে কাবু করে ফেলেন। তাঁর সঙ্গী ক্লান্ত হয়ে পড়ায়, তিনি উটের খুর দিয়ে তাকে আঘাত করে হত্যা করেন। এরপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এ ঘটনা বর্ণনা করলে, তিনি বলেনঃ তোমরা তাকে কেন ছেড়ে দিলে না? সে হয়তো খালিস তাওবা করতো এবং আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দিত। (আবু দাউদ, ইসলামী ফাউন্ডেশন ৪৩৬৬)
৫,গর্ভবতী মহিলার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত ‘রাজম’ বিলম্ব করা:
وَعَنْ أبي نُجَيْد بِضَم النُّونِ وَفَتْح الْجيِمِ عِمْرانَ بْنِ الحُصيْنِ الخُزاعيِّ رَضِي اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ امْرأَةً مِنْجُهينةَ أَتَت رَسُولَ االله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَا ، فقَالَتْ : يَا رسول االله أَصَبْتُ حَدّاً فأَقِمْهُعَلَيَّ ، فَدَعَا نَبِيُّ االله صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم وَليَّهَا فَقَالَ : أَحْسِنْ إِليْهَا ، فَإِذَا وَضَعَتْ فَأْتِنِي فَفَعَلَ فَأَمَرَ بِهَا نَبِيُّاللَّهِ صَلّى االلهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، فَشُدَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُها ، ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فرُجِمتْ ، ثُمَّ صلَّى عَلَيْهَا . فَقَالَ لَهُ عُمَرُ :تُصَلِّي عَلَيْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَقَدْ زَنَتْ ، قَالَ : لَقَدْ تَابَتْ تَوْبةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْن سبْعِينَ مِنْ أَهْلِ المدِينَةِ لوسعتهُمْوَهَلْ وَجَدْتَ أَفْضَلَ مِنْ أَنْ جَادَتْ بِنفْسهَا للَّهِ عَزَّ وجَل
আবূ নুজাইদ ইমরান ইবনু হুসাইন খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, জুহাইনা গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হল। সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ সুতরাং আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ প্রসবের পর তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে এল)। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাপড় তার (শরীরের) উপর মজবুত করে বেঁধে দেওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এই মেয়ের জানাযার নামায পড়লেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘(উমার! তুমি জান না যে,) এই স্ত্রী লোকটি এমন বিশুদ্ধ তওবা করেছে, যদি তা মদ্বীনার ৭০টি লোকের মধ্যে বণ্টন করা হত তা তাদের জন্য যথেষ্ট হত। এর চেয়ে কি তুমি কোন উত্তম কাজ পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে কুরবান করে দিল?’ (রিয়াদুস সালেহীন: ২৩) (তিরমিযী, ইসলামি ফাউন্ডেশন ১৪৪১)
৬,ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা:
أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَهُوَ جَالِسٌ عَلَى مِنْبَرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم بِالْحَقِّ وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ الْكِتَابَ فَكَانَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آيَةُ الرَّجْمِ قَرَأْنَاهَا وَوَعَيْنَاهَا وَعَقَلْنَاهَا فَرَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ فَأَخْشَى إِنْ طَالَ بِالنَّاسِ زَمَانٌ أَنْ يَقُولَ قَائِلٌ مَا نَجِدُ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَيَضِلُّوا بِتَرْكِ فَرِيضَةٍ أَنْزَلَهَا اللَّهُ وَإِنَّ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللَّهِ حَقٌّ عَلَى مَنْ زَنَى إِذَا أَحْصَنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ إِذَا قَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ الْحَبَلُ أَوْ الاِعْتِرَافُ
‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “উমর ইবনু খাত্তাব (রাযি.) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে آيَةُ الرَّجْمِ (ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যভিচারের জন্য রজম করার হুকুম বাস্তবায়ন করেছেন। তার পরবর্তী সময়ে আমরাও (ব্যভিচারের জন্য) রজমের হুকুম বাস্তবায়িত করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ এ কথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাই না। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এ ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যভিচারের শাস্তি رجم (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা) এর হুকুম সাব্যস্ত। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভবতী হয়, অথবা সে নিজে স্বীকার করে। (মুসলিম,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭১)
৭,রজম করার বিধান:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ يَطُولَ، بِالنَّاسِ زَمَانٌ حَتَّى يَقُولَ قَائِلٌ مَا أَجِدُ الرَّجْمَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَيَضِلُّوا بِتَرْكِ فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ أَلاَ وَإِنَّ الرَّجْمَ حَقٌّ إِذَا أُحْصِنَ الرَّجُلُ وَقَامَتِ الْبَيِّنَةُ أَوْ كَانَ حَمْلٌ أَوِ اعْتِرَافٌ وَقَدْ قَرَأْتُهَا الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا فَارْجُمُوهُمَا الْبَتَّةَ . رَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَجَمْنَا بَعْدَهُ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বললেন, আমি আশঙ্কা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ বলে বসবে, আমি আল্লাহর কিতাবে রজমের কথা পাচ্ছি না। ফলে সে আল্লাহর ফয়যসমূহের মধ্যকার একটি ফরয ত্যাগ করার কারণে পথভ্রষ্ট হবে। সাবধান! রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা বাধ্যতামূলক- অপরাধী বিবাহিত হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা গর্ভসঞ্চার হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে। অতঃপর আমি রজমের এ আয়াত পাঠ করিঃ ‘‘বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা যেনায় লিপ্ত হলে তোমরা তাদের উভয়কে রজম করো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং তাঁর পরে আমরাও রজম করেছি। (বুখারী ৬৮২৯,মুসলিম ১৬৯১, তিরমিজি ১৪৩১, ইবনে মাজাহ ২৫৫৩)
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ الْحُصَيْنِ، أَنَّ امْرَأَةً، أَتَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَاعْتَرَفَتْ بِالزِّنَا فَأَمَرَ بِهَا فَشُكَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا ثُمَّ رَجَمَهَا ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا
ইমরান ইবনুল হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। এক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে যেনার স্বীকারেক্তি করলো। তিনি তার দেহে তার পরিধেয় বস্ত্র শক্ত করে পেঁচিয়ে তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন। (ইবনে মাজাহ ২৫৫৫)
عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ رَجُلاً، زَنَى بِامْرَأَةٍ فَأَمَرَ بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَجُلِدَ الْحَدَّ ثُمَّ أُخْبِرَ أَنَّهُ مُحْصَنٌ فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি একজন মহিলার সাথে যিনা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বেত্রাদণ্ড প্রদানের নির্দেশ দেন। এরপর যখন তিনি জানতে পারেন যে, লোকটি বিবাহিত, তখন তিনি তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দেন। (আবু দাউদ, ইসলামি ফাউন্ডেশন ৪৩৮৩)
৮,পুরুষ যিনার কথা স্বীকার করলে এবং স্ত্রীলোক তা অস্বীকার করলে- তার হুকুম?:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَجُلاً، مِنْ بَكْرِ بْنِ لَيْثٍ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَقَرَّ أَنَّهُ زَنَى بِامْرَأَةٍ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ فَجَلَدَهُ مِائَةً وَكَانَ بِكْرًا ثُمَّ سَأَلَهُ الْبَيِّنَةَ عَلَى الْمَرْأَةِ فَقَالَتْ كَذَبَ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَجَلَدَهُ حَدَّ الْفِرْيَةِ
ইবন আব্বাস (রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বকর ইবন লায়ছ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হয়ে চারবার স্বীকার করে যে, সে অমুক মহিলার সাথে যিনা করেছে। সে ব্যক্তি অবিবাহিত থাকার কারণে তাকে একশো বেত্রাদণ্ড প্রদান করা হয়। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহিলাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র শপথ, সে মিথ্যা বলেছে। তখন সে ব্যক্তিকে মিথ্যা তোহমত দেয়ার কারণে আশিটি দোররা মারা হয়। (আবু দাউদ,ইসলামি ফাউন্ডেশন ৪৪০৮)
৯,বেশভূষায় অশ্লীলতা প্রকাশ পাওয়া অপরাধ:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ لَوْ كُنْتُ رَاجِمًا أَحَدًا بِغَيْرِ بَيِّنَةٍ لَرَجَمْتُ فُلاَنَةَ فَقَدْ ظَهَرَ فِيهَا الرِّيبَةُ فِي مَنْطِقِهَا وَهَيْئَتِهَا وَمَنْ يَدْخُلُ عَلَيْهَا
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি কাউকে সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া রজম করতাম, তবে অবশ্যই অমুক নারীকে রজম করতাম। কেন তার কথাবার্তায় ও দৈহিক বেশভূষায় এবং যারা তার কাছে যাতায়াত করে তাদের থেকে অশ্লীলতা প্রকাশ পেয়েছে। (ইবনে মাজাহ ২৫৫৯)
১০,যে ব্যক্তি লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয় তার বিধান:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কাউকে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাকে এবং যার সাথে তা করা হয় তাকে হত্যা করো। (ইবনে মাজাহ ২৫৬১)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الَّذِي يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ قَالَ “ ارْجُمُوا الأَعْلَى وَالأَسْفَلَ ارْجُمُوهُمَا جَمِيعًا
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, তোমরা উপরের এবং নিচের ব্যক্তিকে অর্থাৎ উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করো। (ইবনে মাজাহ ২৫৬২)
১১,রাসূল স. এর উম্মতের ব্যাপারে সমকামীতায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা:
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي عَمَلُ قَوْمِ لُوطٍ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সর্বাধিক আশঙ্কা করি। (ইবনে মাজাহ ২৫৬৩)
১২,যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে যৌনাচার করে:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ وَقَعَ عَلَى ذَاتِ مَحْرَمٍ فَاقْتُلُوهُ وَمَنْ وَقَعَ عَلَى بَهِيمَةٍ فَاقْتُلُوهُ وَاقْتُلُوا الْبَهِيمَةَ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকে হত্যা করো এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকেও হত্যা করো এবং পশুটিও হত্যা করো। (ইবনে মাজাহ ২৫৬৪)
১৩,যদি কোন পুরুষ-মুহরিম নারীকে বিয়ে করে:
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ قُسَيْطٍ الرَّقِّيُّ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أُنَيْسَةَ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ الْبَرَاءِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ لَقِيتُ عَمِّي وَمَعَهُ رَايَةٌ فَقُلْتُ لَهُ أَيْنَ تُرِيدُ قَالَ بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى رَجُلٍ نَكَحَ امْرَأَةَ أَبِيهِ فَأَمَرَنِي أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ وَآخُذَ مَالَهُ
বারা ইবন আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সাথে সাক্ষাৎ করি, যার হাতে একটি পতাকা ছিল। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এমন এক ব্যক্তির কাছে পাঠাচ্ছেন, যে তার সৎ-মাকে বিয়ে করেছে। তিনি আমাকে তার শিরশ্ছেদ করতে এবং তার ধন-সম্পদ নিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনান আবু দাউদ; ইসলামি ফাউন্ডেশন ৪৩৯৮)
১৪,যেনার মিথ্যা অপবাদ (কায্ফ) আরোপের শাস্তি:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِلرَّجُلِ يَا مُخَنَّثُ فَاجْلِدُوهُ عِشْرِينَ وَإِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِلرَّجُلِ يَا لُوطِيُّ فَاجْلِدُوهُ عِشْرِينَ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ‘‘হে মুখান্নাস’’ (নপুংসক) বললে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো এবং কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ‘‘হে লূতী’’ (সমকামী) বললে তাকেও বিশটি বেত্রাঘাত করো। (ইবনে মাজাহ ২৫৬৮)
১৫কোন দাস-দাসী ব্যভিচার করলে এবং তা প্রকাশিত হলে:
وَحَدَّثَنِي عِيسَى بْنُ حَمَّادٍ الْمِصْرِيُّ، أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ إِذَا زَنَتْ أَمَةُ أَحَدِكُمْ فَتَبَيَّنَ زِنَاهَا فَلْيَجْلِدْهَا الْحَدَّ وَلاَ يُثَرِّبْ عَلَيْهَا ثُمَّ إِنْ زَنَتْ فَلْيَجْلِدْهَا الْحَدَّ وَلاَ يُثَرِّبْ عَلَيْهَا ثُمَّ إِنْ زَنَتِ الثَّالِثَةَ فَتَبَيَّنَ زِنَاهَا فَلْيَبِعْهَا وَلَوْ بِحَبْلٍ مِنْ شَعَرٍ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যদি তোমাদের কোন দাসী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার কার্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে তবে তাকে শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি حد অনুযায়ী বেত্ৰাঘাত করবে এবং তাকে কোন প্রকার তিরস্কার করবে না। এরপর যদি দ্বিতীয়বার সে ব্যভিচার করে, তবে তাকে শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি বেত্ৰাঘাত করবে এবং তাকে কোন প্রকার ধমকি দিবে না। এরপর যদি তৃতীয়বার ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার কার্য প্রকাশ পায় তবে তাকে বিক্রি করে দেবে, চুলের দড়ি পরিমাণ মূল্যে হলেও। (অর্থাৎ- অতি কম মূল্য হলেও) (মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৯৬)