ইবাদত

উমরা: রিজিক বৃদ্ধির এক অন্যতম মাধ্যম

ইসলামে উমরার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি এমন একটি ইবাদত, যা আত্মার পরিশুদ্ধির পাশাপাশি দুনিয়াবি কল্যাণও বয়ে আনে। অনেকেই উমরাকে কেবল পাপ মোচনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে এবং এটি রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কুরআন ও হাদিসের আলোকে দেখা যায়, যারা আল্লাহর জন্য উমরা করে, আল্লাহ তাদের জীবনে বরকত দান করেন এবং তাদের রিজিক বৃদ্ধি করেন।

কুরআনের আলোকে উমরা ও রিজিক বৃদ্ধি

১. আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করলে রিজিক বৃদ্ধি হয়

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَا أَنفَقْتُم مِّن شَىْءٍۢ فَهُوَ يُخْلِفُهُۥ ۖ وَهُوَ خَيْرُ ٱلرَّٰزِقِينَ

“তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, তিনি (আল্লাহ) তার প্রতিস্থাপন করবেন এবং তিনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা।” (সূরা সাবা: ৩৯)

➡ উমরার জন্য অর্থ ব্যয় করা আসলে আল্লাহর পথে ব্যয় করা, আর আল্লাহ নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি এর প্রতিদান দেবেন এবং রিজিকের দরজা খুলে দেবেন।

২. উমরা করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়

আল্লাহ বলেন:

وَأَذِّن فِى ٱلنَّاسِ بِٱلْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًۭا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٍۢ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍۢ ۝ لِّيَشْهَدُوا۟ مَنَـٰفِعَ لَهُمْ

“আর মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটের পিঠে চড়ে দূরদূরান্ত থেকে। যাতে তারা তাদের জন্য নির্ধারিত উপকার লাভ করতে পারে।”(সূরা আল-হজ: ২৭-২৮)

➡ যদিও এই আয়াত হজের প্রসঙ্গে এসেছে, কিন্তু হজ ও উমরার মূল উদ্দেশ্য এক—আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহ বলেছেন, এসব ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ উপকার লাভ করবে, যা দুনিয়াতেও বরকতের কারণ হতে পারে।

হাদিসের আলোকে উমরা ও রিজিক বৃদ্ধি

১. উমরা দারিদ্র্য দূর করে এবং রিজিক বৃদ্ধি করে

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:“উমরা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে, যেমনভাবে কামারের হাওয়া (ভাটা) লোহার ময়লা দূর করে।” (সুনান আন-নাসাই: ২৬৩১, সুনান ইবনে মাজাহ: ২৮৮৮, সহিহ)

➡ এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট করেছেন যে, উমরা করার মাধ্যমে শুধু গুনাহই মাফ হয় না, বরং দারিদ্র্যও দূর হয়। অর্থাৎ, যারা উমরা করে, তাদের জীবনে রিজিকের বরকত আসে।

২. বারবার উমরা করা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম উপায়

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “হজ ও উমরা একের পর এক করো, কেননা তা দারিদ্র্য ও গুনাহকে এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে কামারের ভাটা লোহার ময়লা দূর করে।”(সুনান তিরমিজি: ৮১০, সুনান আন-নাসাই: ২৬৩১, সহিহ)

➡ এই হাদিসে বারবার উমরা করার ফজিলতের কথা বলা হয়েছে। যারা বেশি বেশি উমরা করে, তাদের রিজিক বৃদ্ধি পায় এবং তারা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পায়।

৩. আল্লাহর জন্য সফর করলে তিনি রিজিকের ব্যবস্থা করেন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে সফর করে, আল্লাহ তার রিজিকের ব্যবস্থা করেন।”(মুসনাদ আহমদ: ২৩৪৬৫, সহিহ)

➡ উমরা একটি ইবাদতের সফর, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়। তাই যারা উমরার নিয়তে সফর করে, আল্লাহ তাদের জন্য রিজিকের নতুন দরজা খুলে দেন।

উমরা করার ফলে রিজিক বৃদ্ধির কিছু বাস্তব উপায়

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ: উমরা করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর আল্লাহ যাকে সন্তুষ্ট হন, তার জীবনে বরকত দেন।

দোয়া কবুল হয়: উমরার সময় মক্কা ও মদিনায় দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে, যা রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম হতে পারে।

গুনাহ মাফ হয়ে নতুন বরকত আসে: গুনাহ রিজিক সংকুচিত করে, আর উমরা গুনাহ মোচন করে, ফলে রিজিকে বরকত আসে।

আল্লাহর পথে খরচ করা রিজিক বাড়ায়: উমরার জন্য ব্যয় করলে আল্লাহ আরও বেশি দেন।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *