ঈসালে সওয়াবের প্রচলিত কিছু মনগড়া পদ্ধতি:

ঈসালে সওয়াব অর্থ হলো মৃত ব্যক্তির জন্য কোনো নেক আমল করে তার সওয়াব পৌঁছানো। শরিয়তে কিছু আমলের অনুমোদন রয়েছে, তবে সমাজে অনেক বিদআতি ও মনগড়া পদ্ধতি চালু হয়েছে, যেগুলোর কোনো শরয়ি ভিত্তি নেই। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


১. চেহলাম (চল্লিশা) পালন

অনেক সমাজে প্রচলিত আছে যে, মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর ৪০ দিন পর এক বিশেষ অনুষ্ঠান করা হয়, যেখানে দোয়া, খতমে কুরআন ও মেজবানের আয়োজন করা হয়। এটি মূলত হিন্দু ও পারসি সংস্কৃতি থেকে এসেছে।


২. চারদিন, পনেরদিন, কুলখানি ও বার্ষিক মিলাদ মাহফিল

অনেক সমাজে কেউ মারা গেলে চারদিন, পনেরদিন, ও চল্লিশ দিন পর বিশেষ দোয়া মাহফিল ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়। আবার কেউ কেউ প্রতি বছর মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে। অথচ সাহাবায়ে কিরামের যুগে এমন কোনো নিয়ম ছিল না।

হাদিসে এসেছে, জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন: “আমরা (সাহাবিগণ) মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করা ও কোনো স্থানে একত্রিত হওয়া এবং তাদের জন্য খাবারের আয়োজনকে বিদআত গণ্য করতাম।”(মুসনাদ আহমদ, ২/২০৪, ইবন মাজাহ: ১৬১২)


৩. মাটি খননকারীদের (মাটিয়ালদের) জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা

কেউ মারা গেলে যারা কবরে মাটি খনন করে, তাদের জন্য বিশেষভাবে বিরিয়ানি, গরুর মাংস বা ভালো খাবার পরিবেশন করা হয় এবং এটাকে বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। অথচ এটি কুসংস্কার ও বিদআত।


৪. খতমে কুরআন ও মেজবানির শর্ত আরোপ

অনেক সমাজে মনে করা হয়, যদি ৩০ পারা কুরআন খতম না করা হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তি মুক্তি পাবে না। এজন্য লোক ভাড়া করে কুরআন পড়ানো হয় এবং পরে বিশেষ খাবার বিতরণ করা হয়। অথচ এটি ইসলামসম্মত নয়।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কোনো কাজ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সেই কর্মকে নিরর্থক করে দেবেন।” (বুখারি: ৬৪৯৯, মুসলিম: ২৯৮৬)


৫. মাইকে কুরআন তেলাওয়াত ও বিশেষ দোয়া

কেউ মারা গেলে মসজিদ বা বাড়ি থেকে মাইকে কুরআন তেলাওয়াত প্রচার করা হয় এবং ঘোষণা দিয়ে লোকজন ডাকা হয়। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অন্যদের জন্য কষ্টদায়ক।


৬. টাকা বা খাবার দিয়ে ঈসালে সওয়াব নিশ্চিত করা

অনেকে মনে করেন, ঈসালে সওয়াব তখনই হবে যখন গরু জবাই করে বা মেজবানির মাধ্যমে লোক খাওয়ানো হবে। অথচ দান-সদকা করা ভালো, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি সদকা করে, তবে এটি মৃতের জন্য উপকার বয়ে আনবে।”

(সহিহ মুসলিম: ১৬৩০)


সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *