ইসলাম

জাহান্নামীদের বিভিন্ন অঙ্গে শাস্তি প্রদান

জাহান্নামীদের গাত্রচর্ম দগ্ধকরণ

আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামীদের তিন দিনের পথ সমপরিমাণ পোর বা মোটা চামড়াকে দুনিয়ার অগুনের চেয়ে উনসত্তর গুণ বেশী তাপ সম্পন্ন জাহান্নামের আগুন দ্বারা ভাজা-পোড়া করবেন। চামড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেলে পুনরায় নতুন চামড়া তৈরী করে পোড়াবেন। এইভাবে অনবরত পোড়াতে থাকবেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيْهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِحَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُوْدًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا –

যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে অগ্নিতে দগ্ধ করবই, যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা নিসা ৪/৫৬)।

মাথায় গরম পানি ঢেলে শাস্তি প্রদান

আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামীদের মাথার উপর এমন গরম পানি ঢেলে শাস্তি প্রদান করবেন যার পরে অধিক গরম করা সম্ভব নয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, فَالَّذِيْنَ كَفَرُوا قُطِعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ – يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ

‘যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোষাক, আর তাদের মাথার উপর ঢালা হবে ফুটন্ত পানি, যা দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে’ (সূরা হজ্জ ২২/১৯-২০)।

হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الحَمِيْمَ لَيُصَبُّ عَلَى فَيَنْفُذُ الحَمِيْمُ حَتَّى يَخْلُص إِلَى جَوْفِهِ فَيَسْلِتُ مَا فِي جَوْفِهِ، حَتَّى يَمْرُقَ مِنْ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصَّهْرُ ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَانَ –

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানি ঢালা হবে, এমনকি তা পেটের মধ্যে প্রবেশ করবে, ফলে পেটের ভিতরে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু বিগলিত হয়ে পায়ের দিক দিয়ে নির্গত হবে। (কুরআনে বর্ণিত) | দ্বারা ইহাই বুঝানো হয়েছে । পুনরায় তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে (পুনরায় উহা ঢালা হবে এমনিভাবে শাস্তির প্রক্রিয়া চলতে থাকবে)। তিরমিযী হা/২৫৮২, মিশকাত হা/৫৬৭৯, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (এমদাদিয়া) ১০/১৬৪ পৃঃ; আলবানী, সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহা হা/৩৪৭০।

মুখমণ্ডল দগ্ধকরণ

আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে মানুষকে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা মুখমণ্ডলকে দান করেছেন সর্বাপেক্ষা বেশী মর্যাদা। যার কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুখমণ্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু যারা আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করে তাঁর নাফরমানী করবে তাদের মুখমণ্ডলের মর্যাদাকে ধূলায় ধূসরিত করে সর্বপ্রথম মুখমণ্ডলকেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَمَن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَكُبَّتْ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنتُمْ تَعْمَلُوْنَ

‘যে কেহ অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে অধোমুখে নিক্ষেপ করা হবে অগ্নিতে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে’ (সূরা নামল ২৭/৯০)।

তিনি অন্যত্র বলেন, لَوْ يَعْلَمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا حِيْنَ لَا يَكْفُوْنَ عَنْ وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمْ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ –

‘হায়! যদি কাফিরেরা সেই সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না’ (সূরা আম্বিয়া ২১/৩৯)।

তিনি অন্যত্র বলেন, تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالحُوْنَ

‘অগ্নি তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তথায় থাকবে বীভৎস চেহারায়’ (সূরা মু’মিনুন ২৩/১০৪)।

তিনি অন্যত্র বলেন, سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوْهَهُمُ النَّارُ –

‘তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল’ (সূরা ইবরাহীম ১৪/৫০)।

তিনি অন্যত্র বলেন, أَفَمَنْ يَتَّقِي بِوَجْهِهِ سُوْء الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَقِيلَ لِلظَّالِمِيْنَ ذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ

‘যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল দ্বারা কঠিন শাস্তি ঠেকাতে চাইবে, সে কি তার মত যে নিরাপদ? সীমালংঘনকারীদেরকে বলা হবে, তোমরা যা অর্জন করতে তার শাস্তি আস্বাদন কর’ (সূরা যুমার ৩৯/২৪)।

তিনি অন্যত্র বলেন, يَوْمَ تُقَلبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولاً –

‘যেদিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট পালট করা হবে সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ্র আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম’! (সূরা আহযাব ৩৩/৬৬)।

তথ্যসূত্র:

জাহান্নামের ভয়াভহ আযাব

শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *