মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিতে তাকওয়া ও মুত্তাকী
১. আলী ইবনে আবূ তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে পাপ কাজে জড়িয়ে থাকাকে ছেড়ে দেয়া এবং সৎকাজে প্রতারিত হওয়াকে ছেড়ে দেয়া।”
কুরআনের বাণী – يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” আল-বাকারাহ, ২/২১
২. ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একবার উবাই ইব্নু কা‘ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন, “আপনি তাকওয়া সম্পর্কে আমাকে বলুন। জবাবে তিনি বললেন, ‘আপনি কি কখনও কন্টকাকীর্ণ পথ দিয়ে চলেছেন? ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, কাপড় চোপড় গুটিয়ে অত্যন্ত সাবধানে চলেছি। কা‘ব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ওটাই তো তাকওয়া।”
৩. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুত্তাকীদের পরিচয় দিয়ে বলেন, “যারা মহান আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে এমন সব কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে, যেগুলোর হারাম হওয়া সম্পর্কিত বিধান আল্লাহর দেয়া হেদায়াত তথা কুরআন ও হাদীস থেকে তারা জানে এবং অনুসরণের জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে আল্লাহর রহমত কামনা করে।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি নিজেকে শির্ক, কবীরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে, তাকে মুত্তাকী বলা হয়।”
৪. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে নিজেকে অন্য যে কারোর তুলনায় উত্তম মনে না করা।” এ কথার অর্থ এ নয় যে, একজন মানুষ নিজেকে হীন, তুচ্ছ, নিকৃষ্ট ও অবহেলিত মনে করবে; বরং এ কথার প্রকৃত মর্ম হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশ পালন তথা ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের যে বিধি-নিষেধ রয়েছে তা মানার ক্ষেত্রে সে ইবলিসের মত এ কথা বলবে না যে, “আমি তার [আদম আলাইহিস্ সালাম] চেয়ে উত্তম-শ্রেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন,(আল-আ‘রাফ, ৭:১২)” অর্থাৎ সে অহংকারী হবে না।
৫. আবূ দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সম্পূর্ণ তাকওয়া হল বান্দা আল্লাহকে ভয় করবে (করণীয় বিষয়) ত্যাগ করতে গিয়ে কিছু হালালও বর্জন করবে এই ভয়ে যেন তাকে হারামে পড়তে না হয়; আর যেন সামান্য হালাল বর্জন যেন হারাম এবং হালালের মাঝখানে পর্দা-দেয়াল হয়ে যায়।”
৬. হাসান বসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আল্লাহ ব্যতীত কাউকে গ্রহণ না করা এবং সবকিছু তাঁর হাতে ন্যস্ত বলে জানা, এটিই হচ্ছে তাকওয়া। তিনি আরও বলেন, “হারামের ভয়ে বহু হালালও যতক্ষণ মুত্তাকীগণ বর্জন করে চলেন ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের মাঝে তাকওয়া বিদ্যমান থাকে।” আল্লাহর বাণী لِلْمُتَّقِينَ (লিলমুত্তাকীন, আল-বাকারাহ, ২:২) এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “মুত্তাকী হচ্ছে তারা, যারা তাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে তা থেকে দূরে থাকে এবং তাদের ওপর যা ফরয করা হয়েছে তা পালন করে।”
৭. উমর ইব্নু আবদুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা ছেড়ে দেয়া এবং তিনি যা ফরয করেছেন তা আদায় করার নাম হচ্ছে তাকওয়া”।
৮. সুফইয়ান সাওরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “যে বিষয়ে তোমার মনে সন্দেহ হয় তা পরিত্যাগ করার চেয়ে তাকওয়ার সহজ পথ আমার জানা নেই।” সুতরাং সন্দেহপূর্ণ যে কোন কাজ থেকে বিরত থাকা এবং সবসময় নিজের নফসের হিসাব গ্রহণ করা হল তাকওয়া।
৯. আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি পরিহারযোগ্য একটি বিষয়ও করে তাহলে সে ব্যক্তি মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।”
১০. তালক ইবনে হাবীব বলেছেন- “তাকওয়ার অর্থ: আল্লাহর নির্দেশমতো তুমি তাঁর আনুগত্য কর ও তাঁর সাওয়াবের আশা রাখ এবং তাঁর নির্দেশমত তাঁর নাফরমানী ত্যাগ কর ও তাঁর শাস্তিকে ভয় কর।”
১১. কোন কোন মুফাসসির বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করা। কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর বাণী ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদল ও ইহসান…. এর নির্দেশ দিয়েছেন’ এ বাণীতে তাকওয়ার সমাবেশ রয়েছে।”
তথ্যসূত্র :
বই: ওয়াহীর জ্ঞান।
সংকলন: মোহাম্মদ সাইদুর রহমান;
সম্পাদনা: অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক;