রমজানে সেহরীর জন্য আজান দেয়া যাবে কী?
প্রশ্ন
প্রশ্নকর্তাঃ সামীউর রহমান শামীম
উপশহর, রাজশাহী।
আস সালামু আলাইকুম,
মুহতারম মুফতী সাহেব!
আমার প্রশ্নটি হলো, জনৈক এক কথিত আহলে হাদীস আমাকে বলেছেন- রমযান মাসে
সাহরীর জন্য সকলকে ডাকার উদ্দেশ্যে হাদীস শরীফে আযানের কথা বলা হয়েছে।
অথচ আমাদের সমাজে এটির প্রচলন নেই কেন?
আর ফিকহে হানাফী’র এ ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত।
দলীলসহ জানালে, খুবই উপকৃত হতাম।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হ্যাঁ, কথা ঠিক। সাহরীর জন্য ডাকার জন্য ডাকতে রাসূল সাঃ এর জমানায় সাহরীর আজান দেয়া হতো রমজান মাসে। কিন্তু এখন সেটি দেয়া হয় না। এর উপর সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর আমল জারী হয়নি। তা’ই এটির উপর এখন আমল করা হচ্ছে না।
যেমন রাসূল সাঃ জুতা পায়ে দিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে-
عَنْ يَعْلَى بْنِ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَالِفُوا الْيَهُودَ فَإِنَّهُمْ لَا يُصَلُّونَ فِي نِعَالِهِمْ، وَلَا خِفَافِهِمْ
ইয়ালা বিন শাদ্দাদ বিন আউস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তোমরা ইহুদীদের বিরোধীতা কর, কেননা, তারা জুতা এবং মোজা পরিধান করে নামায পড়ে না। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৬৫২]
আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। আরেকটি হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেনঃ
إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ: فَإِنْ رَأَى فِي نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ وَلْيُصَلِّ فِيهِمَا
যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আস, তখন জুতাদ্বয়ের দিকে লক্ষ্য কর, যদি তাতে অপবিত্র কিছু দেখ, তাহলে তা মুছে তাসহ নামায পড়। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৬৫০]
উপরোক্ত দু’টি হাদীসই সহীহ। যে হাদীসে রাসূল সাঃ জুতা পরিধান করে নামায পড়তে নির্দেশ দিচ্ছেন। মসজিদে আসার পর আগে জুতা চেক করতে বলা হয়েছে, ময়লা থাকলে, তা পরিস্কার করে, সেই জুতা পরিধান করেই নামায পড়তে বলা হয়েছে।
বর্তমানের আহলে হাদীস দাবিদার বন্ধুরা কি মসজিদে এসে রাসূল সাঃ এর নির্দেশ অনুপাতে মসজিদে এসে জুতা চেক করে তাতে ময়লা থাকলে তা পরিস্কার করে জুতাসহ নামায পড়েন?
নিশ্চয় করেন না। তাহলে কেন তারা রাসূল সাঃ এর উক্ত নির্দেশকে অমান্য করছেন?
এর কারণ কি?
কারণ, একটিই। তাহল, যদিও রাসূল সাঃ জুতা পরিস্কার করে তা পরিধান করে নামায পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা জরুরী বা সুন্নাহ হিসেবে বলেননি। বরং তৎকালিন সময়ের জরুরত হিসেবে বলেছেন। কারণ, তখন ইহুদীরাও নামায পড়তো, কিন্তু তারা জুতা পরিধান করে নামায পড়তো না, তা’ই তাদের বিরোধীতা হিসেবে জুতা পরিধান করে নামায পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু এখন ইহুদীরা নামায পড়ে না। তাই এ বিরোধীতার বিষয়টি এখন আর বিদ্যমান নেই।
তেমনি রাসূল সাঃ এর যুগে বর্তমান সময়ের মত ডিজিটাল ঘড়ি ছিল না। সেহরীর সময় নির্ধারণ করা অনেকের পক্ষে দূরহ বিষয় ছিল। তাই রোযাদারদের জাগানোর জন্য সুবহে সাদিকের সময় ফজরের নামাযের আজানও দেয়া হতো। আবার রমজান মাসে সেহরীর জন্য আলাদা আজান দেয়া হতো।
এর প্রয়োজন আর বর্তমানে বিদ্যমান নেই। তাই বর্তমানে সুবহে সাদিকের আগে আর সেহরীর আজান দেয়া হয় না।
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: شَيَّعْنَا عَلْقَمَةَ إِلَى مَكَّةَ , فَخَرَجَ بِلَيْلٍ فَسَمِعَ مُؤَذِّنًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ فَقَالَ: «أَمَّا هَذَا فَقَدْ خَالَفَ سُنَّةَ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَوْ كَانَ نَائِمًا كَانَ خَيْرًا لَهُ فَإِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ , أَذَّنَ» فَأَخْبَرَ عَلْقَمَةُ أَنَّ التَّأْذِينَ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ , خِلَافٌ لِسُنَّةِ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ইবরাহীম নাখয়ী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা [বিখ্যাত তাবেয়ী] আলকামা রহঃ এর সাথে মক্কায় গমনের উদ্দেশ্যে বের হলাম। তো একদা তিনি রাতের বেলা বের হলেন। বের হয়ে শুনলেন মুআজ্জিন রাতের বেলা আজান দিচ্ছে। তখন তিনি বললেন, এটা কি? নিশ্চয় সে রাসূল সাঃ এর সাহাবাগণের সুন্নতের বিপরীত কাজ করছে। যদি সে ঘুমিয়ে থাকতো, তাহলে ভাল হতো, যখন ফজরের সময় হয় তখন আজান দিবে। তখন আলকামা রহঃ জানালেন, ফজরের সময় হবার আগেই আজান দেয়া রাসূল সাঃ এর সাহাবীদের সুন্নাহের উল্টো আমল। [শরহু মাআনিয়াল আছার-১/৮৪, হাদীস নং-৮৭১]
যেহেতু ফজরের সময় হবার আগেই আজান দেয়ার আমল সাহাবায়ে কেরাম রাঃ সুন্নাহ হিসেবে আমল করেননি। তা’ই আমরাও তা ছেড়ে দিয়েছি। যেমন মসজিদে এসে জুতা চেক করে নাপাক বস্তু দূর করে তা পায়ে দিয়ে নামায পড়ার আমলটি আমরা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ তা সুন্নাহের অন্তর্ভূক্ত নয়। তেমনি সেহরীর আজান।
তো, যারা উক্ত সেহরীর আজানকে জরুরী মনে করেন, তাদের বলুন, প্রতিদিন মসজিদে এসে জুতা পরিস্কার করে নিয়মিত জুতা পায়ে দিয়ে নামায পড়তে।
আমল করলে সবই করা উচিত। আধা আমল করে, উম্মতের মাঝে ফিতনা সৃষ্টির মানে কি?
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-ইমাম আবূ হানীফা ইসলামী রিসার্চ সেন্টার পিরোজপুর।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com