ইবাদত

তাকওয়ার বাস্তব চিত্র ও কিছু উদাহরণ

তাকওয়া শুধু একটি তাত্ত্বিক ধারণা নয়; এটি ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়। একজন মুত্তাকি ব্যক্তি আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টির ভিত্তিতে তার সকল কাজ পরিচালিত করেন। নিচে কুরআন, হাদিস এবং সালাফদের (প্রথম যুগের নেককার ব্যক্তিদের) জীবন থেকে কিছু বাস্তব চিত্র ও উদাহরণ তুলে ধরা হলো—


১. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা – হযরত ইউসুফ (আ.) এর তাকওয়া

হযরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন তাকওয়ার এক অনন্য উদাহরণ। যখন মিসরের শাসকের স্ত্রী তাকে কুকর্মে আহ্বান করল, তখন তিনি আল্লাহর ভয়ে তা প্রত্যাখ্যান করলেন।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ

“তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি! তিনি আমার প্রতিপালক; তিনি আমাকে উত্তমভাবে লালন-পালন করেছেন। নিশ্চয়ই জালিমরা সফল হয় না।’”(সূরা ইউসুফ: ২৩)

বাস্তব শিক্ষা:

যদি কোনো ব্যক্তি হারাম ও ফিতনার সম্মুখীন হয়, তবে তাকওয়ার কারণে সে নিজেকে রক্ষা করবে, যেমন ইউসুফ (আ.) করেছিলেন।


২. ব্যবসায় তাকওয়া – হযরত আবু বকর (রা.) এর সতর্কতা

একবার হযরত আবু বকর (রা.) তার দাসের আনা খাবার খেয়ে ফেললেন। পরে জানতে পারলেন যে, খাবারের অর্থ হারাম উপায়ে উপার্জিত ছিল। তখন তিনি নিজের পেট থেকে সেই খাবার বের করার জন্য বমি করার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেছিলেন, “আমি এমন খাবার কিভাবে সহ্য করবো, যা হারাম থেকে এসেছে?”

বাস্তব শিক্ষা:

একজন মুত্তাকি ব্যক্তি সর্বদা হালাল রিজিক অনুসন্ধান করেন এবং হারাম থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।


৩. ন্যায়পরায়ণ শাসক – হযরত উমর (রা.) এর তাকওয়া

হযরত উমর (রা.) ছিলেন এক ন্যায়পরায়ণ শাসক। একবার তার স্ত্রী সরকারি সম্পদ থেকে সামান্য সুগন্ধি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি যখন তা জানতে পারলেন, তখন তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং বললেন, “এটা আমার জন্য বৈধ নয়, কারণ এটি জনগণের সম্পদ!”

বাস্তব শিক্ষা:

তাকওয়া কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি প্রশাসন ও ন্যায়বিচারেও প্রকাশ পায়।


৪. গোপনে সদকা করা – সালাফদের তাকওয়া

একজন মুত্তাকি ব্যক্তি নিজের সৎকর্মকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, যাতে তা রিয়া (লোক দেখানো) না হয়ে যায়।

উদাহরণ:

হযরত আলী (রা.) রাতে গোপনে এতিমদের ঘরে খাবার রেখে আসতেন, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ

“তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তবে তা উত্তম; আর যদি গোপনে করো এবং গরিবদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম।” (সূরা আল-বাকারা: ২৭১)

বাস্তব শিক্ষা:

সদকা ও ভালো কাজের ক্ষেত্রে লোক দেখানো থেকে বাঁচা উচিত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গোপনে দান করা উচিত।


৫. জিহ্বার সংযম – হযরত উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)

উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) একবার বলেছিলেন:

“তুমি যদি সত্য কথা বলো, তবে তা ন্যায় হওয়া উচিত। যদি মিথ্যা বলো, তবে তা গুনাহ। যদি চুপ থাকো, তবে তা নিরাপত্তা।”

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ

“মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন পাহারাদার উপস্থিত থাকে।” (সূরা কাফ: ১৮)

বাস্তব শিক্ষা:

তাকওয়া অর্জনের জন্য জিহ্বার সংযম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


৬. বিপদের সময় তাকওয়া – হযরত বিলাল (রা.) এর ধৈর্য

বিলাল (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর কাফেরদের দ্বারা কঠিন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাকে মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর ওপর শুইয়ে তার বুকের ওপর ভারী পাথর রাখা হতো। তবুও তিনি ধৈর্য ধরে বলতেন: “আহাদ! আহাদ!” (অর্থাৎ, আল্লাহ এক, আল্লাহ এক)।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ

“ধৈর্যশীলদের জন্য সীমাহীন প্রতিদান রয়েছে।” (সূরা আজ-জুমার: ১০)

বাস্তব শিক্ষা:

একজন মুত্তাকি ব্যক্তি ইসলাম ও ঈমানের জন্য সব ধরনের কষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *